Saturday, August 17, 2019

গুরত্বপূর্ণ 'গুরত্ব'

নিজের গত কয়েকদিনের আচরণ দেখে, আর বাচ্চাদের আচরণ অবলোকন করে খুব উপলদ্ধ হলো এই জিনিসটা যে , মানুষ গুরত্ব চায়। এটা খুব বাস্তব সত্য অলিখিত সত্য যে মানুষ গুরত্ব চায়। আর এই ব্যাপারটা কেন্দ্র করেই হয়তো কতো সমস্যার উদ্ভব হয়। মানুষ গুরত্ব চায় ;তাই মানুষের কাছে আশা করে , দাবি করে ; আর যখন পূরণ হয় না , তখনই বিষণ্ন হয়ে যায় , মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় , আরো কতো কী..

ছোট ফাতিমা , মাত্র তিনমাস ; কেউ কথা বললেই যখন মনে করে তার সাথে কথা বলছে , অসম্ভব খুশি হয় , নিজেও কতো কিছু বলার চেষ্টা করে; যতটুকু সম্ভব , ততটুকু মাড়ি বিকশিত করে হাসতে থাকে। আর যখন কেউ কথা বলে না , আস্তে আস্তে মলিন হতে থাকে , ছটফট করে , খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারে না । এ তো সবসময়ই হয়। কিন্তু যখন থেকে গুরত্বের কথা ভাবছি , মাথায় স্ট্রাইক করলো; দেখো , এর তো জটিলরকম চিন্তা-ভাবনাও শুরু হয়নি , এখনই স্বতস্ফূর্তভাবে কতোটা গুরত্ব চায়..তার মানে 'গুরত্ব চাওয়া' জিনিসটা মানুষের একদম প্রকৃতিগত ব্যাপার..তার মানে যদি কাউকে গুরত্ব দিই, তার কতোটা কাছে হয়ে যেতে পারি..

শুধু ছোট ফাতেমাই না ; তার বড় ভাইয়ারাও যদি একটু সমস্যা করতে থাকে, প্রথমে যে কথাটা চলে আসে , ওর দিকে একেবারে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না..বাচ্চাদের অনেক সমস্যার ক্ষেত্রেই সমাধানের জন্য যে পরামর্শটা শুনি, ওকে গুরত্ব দিন ,ওকে সময় দিন..কিছু কিছু মানুষ বাচ্চাদের একেবারে প্রিয় থাকে, এর কারণ তারা বাচ্চাদের সাথে অন্যরকম গুরত্ব দিয়ে কথা বলে (নবীজীও এমন ছিলেন, তাই না? একসময় আমার মনে হতো, নবীজী যদি থাকতেন ; কোন কষ্ট হতো না আমার)

হয়তো ভাবছেন , বাচ্চাদের গুরত্ব দেওয়া নিয়ে এতো কথা কেন। আসলে কী , যখন গুরত্ব দেওয়া নিয়ে ভাবা শুরু করলাম আর বাচ্চাদের দিকে ফোকাস গেলো , তখন মনে হলো তাদের যে আচরণ তা একেবারে অকৃত্রিম । বড় মানুষ কতোটা লুকিয়ে রাখতে পারে , বাচ্চারা তো যা করে তাই অকৃত্রিম, নির্ভেজাল - তাদের দেখে মানবসত্তার আসল রূপ হয়তো অনেকটা বুঝে ওঠা যায়।

একটা খুব গুরত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছিলাম , কারো থেকে কিছু আশা করো না। শিক্ষাটা কাজে লাগিয়ে অনেকদিন শান্তিতে ছিলাম। ধরেই নিতাম , কেউ আমাকে গুরত্ব দেবে না। ব্যস আশা করতাম না , আশাভঙ্গের ব্যাপারও ছিলো না। মনে কষ্টও ছিলো না , মনে হতো আমার থেকে সুখী নেই কেউ। গত কয়েকদিনে একটু চিন্তা করলাম , কাউকে এতো জ্বালাচ্ছি কেনো । তারপর মনে হলো , যখন মন নিউট্রাল করে বসে ছিলাম , সে মাত্রাতীত গুরত্ব প্রকাশ করে আমাকে তার অনেকটা মুখাপেক্ষী করে নিয়েছে ; সেজন্যই এতো সমস্যা..

তাহলে? যখন কেউ কাউকে গুরত্ব দেয় , সে আপন থেকে আপনতর হয়ে যায়। হুযুর (স) এভাবেই মানুষের মন জয় করে নিতেন । তিনি যখন কারো সাথে কথা বলতেন , তার মনে হতো তাকেই তিনি সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দিচ্ছেন। সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কারো কথা শুনতেন।

আল্লাহ ভালো জানেন , এ জন্যই হয়তো খুব দ্রুত আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া সম্ভব। আল্লাহ অসম্ভব ভালোবেসে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের পদে পদে নাফরমান হওয়া , হঠকারিতা করা ; আর তার অসীম নিআমতে ডুবিয়ে রাখা , হঠাৎ হঠাৎ একটু একটু কষ্ট দিয়ে কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করা - এটা তাঁর ভালোবাসা নয়তো কী?

একটা বয়ানে পড়েছিলাম , আল্লাহ বলেছেন - যদি আমার নাফরমান বান্দারা জানতো , আমি তাকে কতো ভালোবাসি তবে তাদের হাত পা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো। তাহলে?

এমন বর্ণনাও আছে , যখন কেউ নামাজে দাঁড়ায় আর অন্যদিকে মনোযোগ দিয়ে রাখে , আল্লাহ বারবার তাকে ডাকতে থাকেন যে  , হে আমার বান্দা ! আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় মনোযোগ দিয়ে রেখেছ?

আল্লাহ তা'আলার সার্বক্ষণিক মনোযোগ আমার দিকে। মনের নিভৃতে হঠাৎ ছোট্ট করে 'আল্লাহ' বলে ওঠাটাও তাঁর মনোযোগ এড়ায় না। আর আমার নিরাপত্তা আমার ভালো থাকার জন্য কী করে রেখেছেন , প্রতিমুহূর্তে আরো কী কী দিচ্ছেন ; তা শুধু ভাবতেই থাকা যায়। বিলীন হতে হলে , এমন সত্তার জন্যই বিলীন হওয়া দরকার। জীবন সাজাতে হলে , এমন সত্তার জন্যই সাজিয়ে নেওয়া দরকার..

আর একটু যদি ভাবি , সৃষ্টির দেওয়া গুরত্ব যদি আমাকে ভালো রাখে , যদি আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে - তবে স্রষ্টার গুরত্ব আমাকে কেন ভালো রাখবে না , কেন আমি আত্মবিশ্বাসী থাকবো না? তিনি তো আছেন , মিথ্যা নন..তার ভালোবাসাও মিথ্যা নয়..
আর একটা কথা, তিনি চান আমরা তাঁকে মনোযোগ দিই , তাঁর কথা ভাবি। তবে একটু চিন্তা করি , যদি কোন মাখলুককে সামান্য গুরত্ব দিয়ে আপন থেকে আপনতর করতে পারি ; তবে আমার খালিকের কথা একটু গুরত্ব দিয়ে যদি ভাবি , বিবেচনা করি..তাহলে..
শুধু দরকার একটু চিন্তা , একটু ফিকির..
আর পরিশেষে তো তিনিই..

Thursday, March 14, 2019

ক্বুরআনের সাথে

ক্বুরআন বৈয়াকরণের জন্য ব্যাকরণগ্রন্থ - সম্ভবত ক্বুরআনের কোন সংজ্ঞায় কথাটা পড়েছিলাম। কিন্তু তখন মানেটা তেমন করে বুঝে আসেনি। তারপর যখন আল্লাহ তৌফিক দিলেন আরবী শিখা শুরু করবার - মানেটা আস্তে আস্তে আশ্চর্যরকম বুঝে এল । 

ক্বুরআন আশ্চর্য এক তামরীন বা অনুশীলনগ্রন্থ। যে নিসাবই ব্যবহার করে পড়ো না কেন, যতটুকুই শিখো না কেন; যদি ক্বুরআন পাঠ চালু রাখো, যদি কিছুটা অনুশীলনের নিয়তে পড়ো - দেখবে ইনশাআল্লাহ ক্বুরআনই তোমাকে তা ভুলতে দেবে না। এমনকি, সাধারণভাবে শিখেও যেসব ভুল হওয়া সম্ভব - দেখা যাবে , ক্বুরআনই তোমাকে তা থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
ধরো, তুমি মাউসুফ সিফাত নতুন শিখলে। এখন তুমি ক্বুরআন পড়তে গিয়ে কতশত ব্যবহার যে তার দেখবে। একসময় তুমি এমন অভ্যস্ত হবে যে, দেখবে মাউসুফ সিফাতে ভুল করা সম্ভবই হচ্ছে না।
শুধু তাই নয়, হয়তো নতুন নতুন ব্যবহারও শিখবে। 

এভাবে নতুন নতুন বাব শিখো, ইন শিখো, ইন্না শিখো , লাম , লান সবকিছুরই ব্যবহার শিখো। দেখবে, তুমি হয়তো একক্ষেত্রে একরকম ব্যবহার শিখলে; তারপর ক্বুরআন নিয়ে বসো, আরো কত ক্ষেত্রে তার নিয়ম দেখবে। শিখার আগেই তোমার সেই নিয়মগুলোতে অভ্যস্ততা চলে আসবে। প্রায় একবছর হয়ে গেলো আমার 'এসো আরবি শিখি' পড়েছি; তারপর অনুশীলন বিশেষত শেষের পাঠগুলোর তেমন রিভাইসই হয়নি; অথচ এখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি, আমার বিশ্বাস, শুধুমাত্র ক্বুরআনের উসিলায়।
ক্বুরআন পড়ো, পড়তে থাকো, নিয়মিত পড়ো; শিখার নিয়তে পড়ো, অনুসন্ধিৎসু চোখে পড়ো। তুমি হয়তো সংজ্ঞা জানবে না, অর্থ জানবে না, তারকীব জানবে না; কিন্তু ব্যবহার শিখবে, নতুন নতুন শব্দ জানবে(অর্থ নাই জানলে), নতুন নতুন নিয়ম জেনে যাবে নিজের অজান্তেই। তারপর যখন তোমার বইয়ের পাতায় সংজ্ঞাগুলো দেখবে, দেখো কতটা সহজ, আপন আর পরিচিত লাগে!
শিক্ষার সফরে যদি ক্বুরআন হয় তামরীনরূপী সঙ্গী, আল্লাহ জানেন কতটা বরকতময় হবে সেই সফর। 

আর ক্বুরআনই যদি তোমার সফরের গন্তব্য হয়, তবে এখন থেকেই সঙ্গে থাকুক, সঙ্গী থাকুক...

শোন আল্লাহর কথা

আমাদের যত মেধা, যোগ্যতা, প্র্তিভা এর জন্য আমরা কেন প্রশংসিত হই? কেন মানুষ মানুষের প্রশংসা করে বলে, মাশাআল্লাহ আপনার অনেক মেধা। মাশাআল্লাহ বলুক যাই বলুক, এতে বেশিরভাগ সেই মানুষটারই প্রশংসা ফুটে ওঠে। আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর নিয়ামতের কথা কতটুকু ফুটে উঠে?

আমাদের যে মেধা আল্লাহ ছাড়া কে দিয়েছেন? মেধা বা যোগ্যতার কতটুকু অংশে আমাদের নিজেদের হাত আছে? যদি দশমিকের পর অসীমসংখ্যক শূণ্য বসিয়ে তারপর একটা এক বসাই, এতটুকু ভগ্নাংশের যোগ্যতাও আমাদের নেই। সমস্ত প্রতিভার সেন্ট পার্সেন্ট প্রশংসা শুধু আল্লাহর, শুধুমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। এতে কোন মানুষের কোন সৃষ্টির বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব নেই। তবে কেন আমরা মানুষের অতিরিক্ত প্রশংসা করি? প্রশংসা যদি করতেই হয়, তবে তার পরিশ্রম বা চেষ্টা-মেহনতের প্রশংসা করয়া যেতে পারে(যদিও এটারও পুরো কৃতিত্ব শুধু আল্লাহরই ; তবে খানিকটা), যেহেতু চেষ্টা-মেহনতের ভার মানুষের উপর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেখানে শুধু আল্লাহর, শুধুই আল্লাহর কৃতিত্ব; যেখানে শত চেষ্টা করলেও কোনভাবেই মানুষকে অল্প করে হলেও কৃতিত্ব দেওয়া অসম্ভব_ সেই মেধা,যোগ্যতা বা প্রতিভার প্রশংসা কী করে আমরা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে দিতে পারি? বড়জোর হয়তো এতখানি যে, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ কতটা মেধা দিয়েছেন তাকে; আর আমাদের তৌফিক দিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হবার; আর আল্লাহর কুদরত, কাউকে একটুখানি মেধা দেন অথচ কাউকে অবাক করার মত মেধা দেন; আল্লাহ কতটা বড়, কতটা শক্তিশালী; আমার মেধার নিয়ন্ত্রণ তো তাঁরই হাতে। তবে কেন আমি তাঁর সামনে অবনত হই না? কেন তার প্রদত্ত নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশ দেখে তাঁর প্রতি মাথা নত করি না? যা দিয়েছেন তাঁর শুকরিয়া করে, কেন তাঁর কাছে আরো চেয়ে নিই না? আর কেন অন্তর থেকে তাঁর গুণপনা না করে, তাঁর সৃষ্টির গুন গাই? কেন আমি এমন? কেন? আর যা দিয়েছেন, শুকরিয়া হিসেবে তা কাজে লাগাই না? এতো এমনকি আমার চেয়ে পাওয়া নিয়ামত নয়, বরং সম্পূর্ণ দান, সম্পূর্ণটাই অনুগ্রহ। অন্তর কতটা মরে গেলে কেউ পারে, আসল সত্তাকে ভালোবাসা অর্পণ না করে তাঁর সৃষ্টিকে তাঁরই প্রদত্ত নিয়ামতের জন্য তাঁকেই ভুলে গিয়ে, ভালোবাসা প্রশংসায় নিমগ্ন হয়ে যেতে?