Thursday, March 14, 2019

ক্বুরআনের সাথে

ক্বুরআন বৈয়াকরণের জন্য ব্যাকরণগ্রন্থ - সম্ভবত ক্বুরআনের কোন সংজ্ঞায় কথাটা পড়েছিলাম। কিন্তু তখন মানেটা তেমন করে বুঝে আসেনি। তারপর যখন আল্লাহ তৌফিক দিলেন আরবী শিখা শুরু করবার - মানেটা আস্তে আস্তে আশ্চর্যরকম বুঝে এল । 

ক্বুরআন আশ্চর্য এক তামরীন বা অনুশীলনগ্রন্থ। যে নিসাবই ব্যবহার করে পড়ো না কেন, যতটুকুই শিখো না কেন; যদি ক্বুরআন পাঠ চালু রাখো, যদি কিছুটা অনুশীলনের নিয়তে পড়ো - দেখবে ইনশাআল্লাহ ক্বুরআনই তোমাকে তা ভুলতে দেবে না। এমনকি, সাধারণভাবে শিখেও যেসব ভুল হওয়া সম্ভব - দেখা যাবে , ক্বুরআনই তোমাকে তা থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
ধরো, তুমি মাউসুফ সিফাত নতুন শিখলে। এখন তুমি ক্বুরআন পড়তে গিয়ে কতশত ব্যবহার যে তার দেখবে। একসময় তুমি এমন অভ্যস্ত হবে যে, দেখবে মাউসুফ সিফাতে ভুল করা সম্ভবই হচ্ছে না।
শুধু তাই নয়, হয়তো নতুন নতুন ব্যবহারও শিখবে। 

এভাবে নতুন নতুন বাব শিখো, ইন শিখো, ইন্না শিখো , লাম , লান সবকিছুরই ব্যবহার শিখো। দেখবে, তুমি হয়তো একক্ষেত্রে একরকম ব্যবহার শিখলে; তারপর ক্বুরআন নিয়ে বসো, আরো কত ক্ষেত্রে তার নিয়ম দেখবে। শিখার আগেই তোমার সেই নিয়মগুলোতে অভ্যস্ততা চলে আসবে। প্রায় একবছর হয়ে গেলো আমার 'এসো আরবি শিখি' পড়েছি; তারপর অনুশীলন বিশেষত শেষের পাঠগুলোর তেমন রিভাইসই হয়নি; অথচ এখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি, আমার বিশ্বাস, শুধুমাত্র ক্বুরআনের উসিলায়।
ক্বুরআন পড়ো, পড়তে থাকো, নিয়মিত পড়ো; শিখার নিয়তে পড়ো, অনুসন্ধিৎসু চোখে পড়ো। তুমি হয়তো সংজ্ঞা জানবে না, অর্থ জানবে না, তারকীব জানবে না; কিন্তু ব্যবহার শিখবে, নতুন নতুন শব্দ জানবে(অর্থ নাই জানলে), নতুন নতুন নিয়ম জেনে যাবে নিজের অজান্তেই। তারপর যখন তোমার বইয়ের পাতায় সংজ্ঞাগুলো দেখবে, দেখো কতটা সহজ, আপন আর পরিচিত লাগে!
শিক্ষার সফরে যদি ক্বুরআন হয় তামরীনরূপী সঙ্গী, আল্লাহ জানেন কতটা বরকতময় হবে সেই সফর। 

আর ক্বুরআনই যদি তোমার সফরের গন্তব্য হয়, তবে এখন থেকেই সঙ্গে থাকুক, সঙ্গী থাকুক...

শোন আল্লাহর কথা

আমাদের যত মেধা, যোগ্যতা, প্র্তিভা এর জন্য আমরা কেন প্রশংসিত হই? কেন মানুষ মানুষের প্রশংসা করে বলে, মাশাআল্লাহ আপনার অনেক মেধা। মাশাআল্লাহ বলুক যাই বলুক, এতে বেশিরভাগ সেই মানুষটারই প্রশংসা ফুটে ওঠে। আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর নিয়ামতের কথা কতটুকু ফুটে উঠে?

আমাদের যে মেধা আল্লাহ ছাড়া কে দিয়েছেন? মেধা বা যোগ্যতার কতটুকু অংশে আমাদের নিজেদের হাত আছে? যদি দশমিকের পর অসীমসংখ্যক শূণ্য বসিয়ে তারপর একটা এক বসাই, এতটুকু ভগ্নাংশের যোগ্যতাও আমাদের নেই। সমস্ত প্রতিভার সেন্ট পার্সেন্ট প্রশংসা শুধু আল্লাহর, শুধুমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। এতে কোন মানুষের কোন সৃষ্টির বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব নেই। তবে কেন আমরা মানুষের অতিরিক্ত প্রশংসা করি? প্রশংসা যদি করতেই হয়, তবে তার পরিশ্রম বা চেষ্টা-মেহনতের প্রশংসা করয়া যেতে পারে(যদিও এটারও পুরো কৃতিত্ব শুধু আল্লাহরই ; তবে খানিকটা), যেহেতু চেষ্টা-মেহনতের ভার মানুষের উপর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেখানে শুধু আল্লাহর, শুধুই আল্লাহর কৃতিত্ব; যেখানে শত চেষ্টা করলেও কোনভাবেই মানুষকে অল্প করে হলেও কৃতিত্ব দেওয়া অসম্ভব_ সেই মেধা,যোগ্যতা বা প্রতিভার প্রশংসা কী করে আমরা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে দিতে পারি? বড়জোর হয়তো এতখানি যে, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ কতটা মেধা দিয়েছেন তাকে; আর আমাদের তৌফিক দিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হবার; আর আল্লাহর কুদরত, কাউকে একটুখানি মেধা দেন অথচ কাউকে অবাক করার মত মেধা দেন; আল্লাহ কতটা বড়, কতটা শক্তিশালী; আমার মেধার নিয়ন্ত্রণ তো তাঁরই হাতে। তবে কেন আমি তাঁর সামনে অবনত হই না? কেন তার প্রদত্ত নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশ দেখে তাঁর প্রতি মাথা নত করি না? যা দিয়েছেন তাঁর শুকরিয়া করে, কেন তাঁর কাছে আরো চেয়ে নিই না? আর কেন অন্তর থেকে তাঁর গুণপনা না করে, তাঁর সৃষ্টির গুন গাই? কেন আমি এমন? কেন? আর যা দিয়েছেন, শুকরিয়া হিসেবে তা কাজে লাগাই না? এতো এমনকি আমার চেয়ে পাওয়া নিয়ামত নয়, বরং সম্পূর্ণ দান, সম্পূর্ণটাই অনুগ্রহ। অন্তর কতটা মরে গেলে কেউ পারে, আসল সত্তাকে ভালোবাসা অর্পণ না করে তাঁর সৃষ্টিকে তাঁরই প্রদত্ত নিয়ামতের জন্য তাঁকেই ভুলে গিয়ে, ভালোবাসা প্রশংসায় নিমগ্ন হয়ে যেতে?