Thursday, September 30, 2021

নিখাদ বিয়েচিন্তা - ১

 মাঝে মাঝে কিছু বিয়ের সংবাদ আসে কানে; কোনটা কমবয়সীর, কোনটা ছাত্রের, কোনটা কম মোহরানার, কোনটা চিরচারিত বিয়েগুলোর মতোই সাধারণ মাপের একটা বিয়ে। অনেক সময় চিরচারিত নির্লিপ্ততাই কাজ করে। আবার কখনো অবাধ্য কিশোরীদের মত প্রশ্ন ধেয়ে আসে মনে - আমারটা হলো না কেন?

প্রশ্নটা অবশ্য নিজের কাছেই ব্যাকডেটেড লাগে। তারপরও কিছু কিছু উত্তর বের করি, নিজেকে স্বান্তনা দেওয়া কি? স্বান্তনা হলে হতেও পারে, কিন্তু আসল কথা হলো সবকিছুর পিছনেই একটা কারণ থাকে, কারণটা বের করলে সাথে সাথে অনেককিছু আপনাআপনি বের হয়ে আসে। সবই দরকার। 

উত্তর লিখতে গেলে অবশ্য মনে হয়, অনেকেই তো কত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলেছে; আমি আবার নতুন করে উত্তর লিখে কী হবে? বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ, বিয়াইত্তা-আবিয়াইত্তারা জটিল-সরলসোজা কতরকম অ্যানালাইসিস করে ফেলেছে, আমি আবার নতুন করে কি লিখবো? আসলে যদিও এই উত্থানটা আমার চাওয়ার পরই হয়েছে, সে হিসেবে অনেককিছুই আমিঘেঁষা করেই লেখা হয়েছ; তারপরও সবার জন্য সবটা হয়তো খাটে না। আর, একদিকে উত্থান তো হয়েছে; আরেকদিকে বড় একটা অংশই ব্যাকডেটেড রয়ে গেছে, অর্থাৎ - ২৪-২৫ বছর হবে, সক্ষমতা অর্জন নয়তো 'বড় হওয়া' হবে, তারপর বড়দের কাজ বিয়ে করার চিন্তা করা যাবে। তারপরও রেখে-ঢেকে চিন্তা করতে হবে, কারণ এটা বড়দের বিষয়। আর এটা কোন ছেলেখেলা না, অনেক দায়িত্বপূর্ণ কঠিইইইইন একটা বিষয়; কাজেই অভিজ্ঞদের উপর সব চিন্তার দায়িত্ব ন্যস্ত করা উচিত। 

অবশ্য, তুমি রোমান্টিক নাটক-সিনেমা দেখতে পারো, মাঝে সাঝে গান-টান শুনেও নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারো। আমরা দেখেও না দেখার ভান করবো, বা হালকা-পাতলা ধমক দিবো যেটা তোমার গায়ে অতটা লাগবে না। অথবা, এসব তো আসলে খারাপই না, এগুলো তো এ বয়সে করতেই পারো। হ্যাঁ, তোমার বয়ফ্রেন্ড থাকতে পারে, ক্রাশ খাবার গল্পতেও মেতে ওঠতে পারো; যদি আমাদের আড়ালে থাকো।  তবে  মাঝে-সাঝে যদি কোন রিলেশনের খবর বের হয়ে যায়, অনেক চিন্তা করবো টেনশন করবো; কারণ তোমার তো সময় এখন পড়াশোনার, এসবের নয়...এমন চিন্তা করার মত বাবা-মায়ের আপাতত এখনও কম নয়।

গত চার বছর ধরেই মাঝে মাঝে কথাগুলো ঘুরেছে মনে, তবে সেগুলোকে আর শব্দরূপে বাইরে বের করে আনিনি। তার একটা বড় কারণ ছিল - কতটা সঠিক-বেঠিক চিন্তা করছি, তা তো আমি বুঝতে পারছি না। না বুঝে এমন কিছু প্রকাশ করতে চাই না, যা মানুষের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর। এবং আমার পাশে আমাকে বোঝাবার মত, আলোচনা করার মত একটা মানুষও ছিল না। 

তারপরও এখন (ডিজিটাল) কলম ধরার অর্থ - এক দুটো চিন্তার ফোঁটা যদি কোন অন্তরে ঢালতে পারি। হয়তো আমি পুরোপুরি সঠিক চিন্তা করতে সক্ষম নই, কিন্তু কিছু চিন্তা তো করেছি! আর কোন চিন্তা মূল্যহীন? হয়তো তা আমার মত কিছু (প্রাক্তন)কিশোরীর কাজে আসবে, হয়তো কিছু বাবা-মার চিন্তায় হালকা হলেও ঢেউয়ের ছাপ পড়বে। আমার জন্য তাও তো একেবারে মূল্যহীন নয়, ইনশাআল্লাহ। 

দ্বিতীয়ত, বিয়ের পর আরো ম্যাচিউরড হয়েই হয়তো কথাগুলো লিখতে পারতাম। কিন্তু তাতে খুব সম্ভবত আসল সমস্যাগুলো নিয়ে আসলরূপে লিখতে পারবো না; যে সমস্যাগুলোকে বিয়ের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে পেয়েছিলাম। তাতে লেখার ফায়দাও বেশি একটা পাবো না। 

যদি মারা যাই, একটু স্বান্তনা নিয়ে মরতে পারবো - আল্লাহ চিন্তারূপে যে নেয়ামত দিয়েছিলেন, সেটাকে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দেইনি অবহেলায়; কাগজের বুকেও কিছু আমানত রেখেছি। ইনশাআল্লাহ।

চিন্তাগুলো যে একেবারে চিন্তাহীনভাবে লিখে ফেলবো, এমনও নয় ইনশাআল্লাহ। চেষ্টা করব, যথাসম্ভব সিকিউরড করে লেখারা। আল্লাহ তাওফীক দেনেওয়ালা, আর আল্লাহই কবুল করনেওয়ালা। 

Thursday, May 20, 2021

তার ছোট পৃথিবী পাক না খুঁজে আকাশের বিশালতা!

একজন আমাকে কথাপ্রসঙ্গে এরকম কিছু বলেছিলেন  যে, তিনি তাঁর মেয়েকে ইংরেজি খুব ভালোভাবে শিখাতে চান, যেন সে পিছিয়ে না পড়ে। যদি প্রতিবেশী মেয়ে এসে খুব দক্ষভাবে ইংরেজি বলে, অর্থাৎ কথ্য ভাষায় 'ফটরফটর' করে ইংরেজি বলে তাহলে যেন তাঁর মেয়েও দক্ষভাবে জবাব দিতে পারে; যেন সে ইংরেজি না পারার কারণে হীনমন্যতা বোধ না করে, অথবা যেন তাকে ফটাফট ইংরেজি বলে ছোট করা না হয়। 

তাঁর কথা থেকে যা বুঝেছিলাম, মোটামুটি এই। আমার বোঝার কিছু ভুল থাকতে পারে; তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচুর এবং প্রচুর পরিমাণেই এমন বাবা-মা থাকেন, যারা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখেন এবং সন্তান তাতে দশ-পনেরো বছরেই মাস্টার্স করেছে বলে গর্ববোধ করেন। এমনকি সম্ভবত এমনও থাকবেন, যারা তাঁদের সন্তান বাং/\লা পারে না বলে গর্ববোধ করেন।

তবে দুঃখের ব্যাপার হলো, অনেক দ্বীন সম্পর্কে বুঝদার মানুষও এ ধরনের চিন্তা সযত্নে লালন করেন।

সেদিন বলতে চেয়েছিলাম, তবে বলতে পারিনি; তবে মাঝে মাঝেই কথাটা মনে হয়। একটা প্রশ্নও মনে জাগে - কেন, এ ই__ং/\রে।জি এর দক্ষতা কেন একটি শিশুসন্তানের গর্বের বিষয় হবে? এটা কীভাবে আমাদের সন্তানদের গর্বের অথবা আভিজাত্যের মাপকাঠি হবে এ ভাষা?  কী কারণে তার চিন্তাকে বিস্তৃত করে দেবো না, কেন তাকে চিন্তার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত রাখবো না? 

আপনার শিশু, তার মনন যখন আপনার হাতে গড়ে উঠছে, তাকে আপনি যা বলবেন যা বোঝাবেন তাই বিশ্বাস করবে। যথেষ্ট বড় হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো যে, তিন গোয়েন্দা বলতে কোন টিম নেই। আপনার শিশুকে যখন ভূতের গল্প শোনান, সে তাই বিশ্বাস করবে। যদি শোনান সত্য গল্প, সে তাই বিশ্বাস করবে। কেন আপনি তার মনের সতেজ মাটিতে আকাশের বিস্তৃতি গেঁথে দেবেন না? 

'ইং--{/রেজি পারা' শিশুকে যদি আপনার শিশু জিজ্ঞাসা করে - তুমি কি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লহ' মানে কি জানো? আমি কিন্তু জানি। সম্ভবত  ঐ শিশু 'জাস্ট ইগনোর' করবে, অথবা 'না' উত্তরের বেশি আগ্রহ দেখানোর প্রয়োজন বোধ করবে না।
আপনার শিশুও কনফিডেন্ট হোক! সে যদি আপনার শিশুর সাথে অন্য ভা-ষা-য় কথা বলে - আপনার শিশু বি/\রক্ত হয়ে বলুক, 'তুমি কি বাংলা পারো না?' 

অন্য একটি ভাষাকে ভালো করে জানার জন্য মাতৃভাষাকে আজনবী বানিয়ে তাকে ঐ ভাষার ক-থ্য রূপে অভ্যস্ত করতে হবে, এটা কেমন সঠিক? কেউ যখন সৌদি,জাপান,চীন,মালয়েশিয়া যায়; সে ছোট থেকে এসব ভাষায় অভ্যস্ত ছিল না বলে কি তার উন্নতি থেমে যায়, সে কি পিএচডিতে ফেইল করে, সে কি ফিরে আসে?
ঐ সম্পর্ক আমাদের শুধুমাত্র 'প্রয়োজন'। আর কিছু নয়, কিছুতেই নয়। 

আপনার সন্তান তার প্রতিবেশি বন্ধুর হাত ধরে বিস্তৃত আকাশের নিচে নিয়ে যাক, তাকে সবুজ ভূমিতে নিয়ে যাক; তাকে জিজ্ঞাসা করুক - ঐ আকাশ কে বানিয়েছে তুমি জানো? এই যে তোমাকে কে বানিয়েছে জানো? 
তার বন্ধু যেমন জবাবই দিক, আপনার শিশু স্বপ্নীল চোখে বলুক - আমাদের বানিয়েছেন আল্লাহ! তুমি কি চেনো তাকে? জানো, আল্লাহ আমাদের কাছে চিঠি লিখেছেন, অনেক গল্প বলেছেন; আমি ঐ চিঠি পড়তে পারি, তুমি পারো না?
আপনার শিশুর চোখ থেকে ঝরে পড়ুক বিস্ময়। 

হ্যাঁ, আপনি আপনার শিশুর বুকে আরবীভাষার ভালোবাসা গেঁথে দিন। আপনার শিশু ডি --জ\নিল্যান্ড চেনার আগে জান্নাত চিনুক। মিথ্যার সাথে পরিচয় করার আগে তার নিষ্পাপ হৃদয়ে সত্যকে এঁকে দিন। তাঁর মননে গেঁথে দিন যে, একদিন ঐ সুবিশাল আকাশ থেকে কিছু ফেরেশতা আসবে পাখির মতো, এসে তাকে নিয়ে যাবে তার স্বপ্নের জান্নাতে। সে জান্নাতের ভাষা পারে বলে আপনার শিশু গর্ব করুক। বিজাতীয় ভাষা শিখবার আগে সে নিজের ভাষা, পিতৃভাষা শিখুক। 

Sunday, March 07, 2021

ছোট্ট একটি স্বপ্ন দেখি...

 একটি প্রশান্ত বিকেল। ছোট একটি ব্যালকনির একপাশে ছোট্ট সাজানো একটি বাগান। একপাশে একটি ছোট টেবিল। একটি চায়ের মগ। কিছু বই। হয়তো - একটি খোলা ল্যাপটপ। আর...স্বপ্নিল চোখে চায়ের মগে একটি প্রশান্ত চুমুক। একটা মুহুর্ত...

মানুষ কি এর থেকে বেশি স্বপ্ন দেখে? আমার কেন যেন মনে হয় মানুষের স্বপ্ন খুব বেশি আকাশচুম্বী নয়। আকাশচুম্বী দালান...আচ্ছা থাক, দশ-বারো তলা দালান, গ্যারেজে দুই-তিন ব্র্যান্ডের গাড়ি; এ সবের স্বপ্ন মানুষ হয়তো দেখে; কিন্তু সবই একটি 'প্রশান্ত' চুমুকের মুহুর্তটির জন্য। শুধু প্রশান্তির জন্য...গর্বের প্রশান্তি...মালিকানার প্রশান্তি...

ভাবছি...আলহামদুলিল্লাহ, এতো স্বপ্ন তো দেখা হয়নি; যে কোন কারণেই হোক। কোন স্বপ্নই হয়তো দেখিনি। তবু মানুষের চাওয়ার সাথে আমার পাওয়ার কীভাবে মিল হয়ে গেলো!...আলহামদুলিল্লাহ ফর এভরিথিং...

হতে পারে, সবই বিজ্ঞাপনের ছবির মতো খাপে খাপে মিলেনি; হতে পারে টেবিলটা আরএফএলের নয়, অথবা বাগানের সব গাছেই হয়তো ফুল নেই; অথবা পর্দাঘেরা ব্যালকনি হয়তো শহরের দালানের কঙ্কাল থেকে আমার চোখ হেফাযত করছে; কিন্তু চায়ের মগে 'প্রশান্তি'র চুমুক তো আছে! ঐ নীল আকাশের অসীম বিস্তৃতি তো আছে; স্বপ্নিল চোখে হারিয়ে যেতেও কি বাধা আছে? আলহামদুলিল্লাহ ফর এভিরিথিং...

যে একটা মুহুর্তের স্বপ্ন মানুষ দেখে, যেভাবেই হোক সেই একটা মুহুর্ত যদি পেয়ে যাই; আর কী লাগে?

নাহ, আমি এতোটা অল্পেতুষ্ট নই। শুধু ভাবছি, স্বপ্নকে বাস্তবমন্ডিত করার ক্ষমতা আমার না থাকতে পারে; শুধু এ কারণেই আমি স্বপ্ন না-ও দেখতে পারি; কিন্তু আমার আল্লাহর তো বাধা নেই - সব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার!

তবে একটা স্বপ্ন আমি দেখি - হ্যাঁ! সবুজের প্রান্তরে নীল আকাশে হারিয়ে যাবার; ঘুমিয়ে যাবার, যে ঘুম থেকে কোন ব্যস্ততা, কোন সময়ের তাড়া ডেকে তুলবে না...

আমার যোগ্যতা নেই, ক্ষমতা নেই স্বপ্নকে সত্য পাওয়ার...আমার রবের তো আছে!

আরেকটা স্বপ্ন দেখি...চুপিচুপি বলে যাই?

জানো, আমি স্বপ্ন দেখি আমি...চীনের অলিগলিতে, আকাশে-বাতাসে, ঘরে-ঘরে একদিন আজানের ধ্বনি বেজে উঠবে...

আমি জানি, আমার ক্ষমতা নেই; কিন্তু স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা আছে...

আর জানো, আমার আল্লাহর কিন্তু ক্ষমতা আছে...