Friday, October 20, 2023

ফিরদাউসী প্রতীক্ষার বীজ - শুধু এতটুকুর জন্যেই

গত হবে হয়তোবা, তাদাব্বুরে ভেজা এক বিকেল;
কোন একদিন...
কিছুটা স্বপ্নের মতো, কিছু শংকায়...

কোন এক শুক্র-সন্ধায় হয়তো দেখা হবে, 
এক চোখ তৃপ্তির জন্য,
শুধু এতটুকুর জন্যই। 

শুধু এতটুকুর জন্যেই হয়তোবা ভাসবে
কালো প্রদীপ্ত শোক, অথবা 
গাঢ় সবুজের সাফল্যে আচ্ছাদিত
তোমার অবয়ব। 

পিছনে ফিরদাউসের বাগানের আহবান রেখে,
এক শুক্র-দুপুরের অমিয় তেজে
ক্লান্ত, তবু সজীব ছাপে
বুনে দিতে এক চিরায়ত প্রতীক্ষা
শুধু একটি হৃদয়ের সুরক্ষায়। 
শুধু এতটুকুর জন্যই...

সে শুক্র-বিকেলেই হয়তোবা হবে 
গল্পের আপাত শেষটা
স্নিগ্ধ বুলেটের সুনিপুণ ছেদে,
সুগন্ধে রঞ্জিত ভূমিতে...

যখন আড়াল হয়ে যাবে রক্তিম সূর্য,
আরো একটি গল্পের সাক্ষী হয়ে; 
দোয়া কবুলের মুহুর্তটিতে
ফিরদাউস-চত্বর আবারো হয়তো প্রফুল্ল হয়ে উঠবে_
নতুন অভ্যর্থনায়...
সালাম! 
সালাম! ক্বাওলাম মির রব্বির রহিম! 

নতুন পাখিটি
তখন অমিত অপেক্ষায়, 
আরেকটি সুপ্রতীক্ষিত অভ্যর্থনার! 


Friday, June 30, 2023

আমার কবি বা লেখিকা কোনটাই না হয়ে উঠবার গল্প

 অনেকদিন ধরেই কিছু লেখা হচ্ছে না। এই টপিকটা দেখেই হঠাৎ মনে হলো, লিখি একটুখানি এটা নিয়েই। হয়তো 'লেখা' হবে না, হোক যা কিছু একটা। 'লেখালেখির হাতেখড়ি' মানেই স্মৃতি, আর স্মৃতিই তো লেখার বড় একটা উপাদান।  স্মৃতিরোমন্থন আমার ভীষণ প্রিয়, যদিও স্মৃতি মানেই ভীষণ বিষণ্নতাও বটে! 

আমার লেখালেখির হাতেখড়ি মানে সেই পুরনো যুগে ফিরে যাওয়া, যখনকার স্মৃতি আসলে ঝাপসা হয়ে গেছে এখনই। আমার লিখতে খুব ভালো লাগতো, অর্থাৎ কলম বা পেনসিল দিয়ে খাতায় অক্ষর সাজিয়ে শব্দের বুনন। পড়তে যতো না ভালো লাগতো, লিখতে তার থেকে বেশিই ভালো লাগতো। সেটা একাডেমিক হোক, আর এমনি শব্দ-গাঁথুনি। 

লেখালেখি অর্থাৎ মস্তিষ্ক থেকে সৃজনশীল কিছু উৎপাদন, সেটা প্রথম হয় সম্ভবত ৫-৬ বছরে। শুরুটা ছিলো ছন্দ দিয়ে (যদিও আমরা বলতাম কবিতা)। একটা চার লাইনের কবিতা ছিল সেটা, যতদূর মনে পড়ে। সেই শুরু। নানা টুকটাক কবিতা লিখতেন, মায়েরও অভ্যাস ছিল। হয়তো সে সূত্রে জিনগত প্রভাব থেকেই কাব্যরচনার সূত্রপাত। তবে তখন যেসব উৎপাদিত হতো সেগুলো কবিতা বললে, কবিতার অপমান হবে; কিন্তু তখন ছন্দে মেলানো ছন্দগুলোই ছিল আমার কবিতা। প্রায়ই ছোট ছোট কবিতা লিখতাম। সবাই উৎসাহ দিতো। আব্বা হাসতেন, কী যেন বলতেন - এতো ছোট মানুষ, আবার কবিতা লিখে! 

কবিতার প্রতি আমার অনেক টান ছিল, এমন নয়। তবে আমি কবিতা লিখতে ভালোবাসতাম। তখন বেশিরভাগ কবিতাতেই ছাপ ছিল আমার বিশ্বাসের, কবিতাগুলো খুলে বসলে দেখা যায় - অনেকগুলোতেই হয়তো বেশিরভাগেরই মূল ধারায় চলে আসতো জান্নাত-জাহান্নাম, বেহেশত-দোযখের গল্প। কবিতা বলতে অন্ত্যমিল, লাইনের শেষ অক্ষরে মিল হতে হবে; এতটুকুই টার্গেট ছিলো। কোন কোনটার অর্থ হয়তো একটু হাস্যকর হয়ে হাসির খোরাক হিসেবে মুখে মুখে ফিরতো, তাতে কী! কবিতা তো! ছোট ছোট চার লাইনের কবিতা ছিল অনেক, অনেকগুলোই ছিল বিশেষ বিশেষ মানুষদের ঘিরে। ক্লাস ফোরে এক ঝাঁক বন্ধু-বান্ধব পেয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য, যাদের সাথে মেলামেশা ছিলো বেশি, তাদের প্রায় প্রত্যেককে নিয়েই টুকটাক কবিতা হতো, বড়-ছোট। 

কবিতা লেখার এই যাত্রায় একটা উৎসাহ হিসেবে পেয়েছিলাম 'মুসলিম ডাইজেস্ট', আমার বড়আব্বার পাবলিশ করা ছোট একটা ম্যাগাজিন। মাঝেমধ্যেই সেখানে কবিতা পাঠাতাম, ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখতে তো বেশ ভালোই লাগতো! সম্ভবত আমার ১০-১২ বছর পর্যন্ত সেখানে লেখা পাঠানো হতো। বড়আব্বা মারা গেছেন অনেক আগেই, তার আগেই বন্ধ হয়ে যায় এই ডাইজেস্ট। এছাড়া পত্র-পত্রিকায় খুব মাঝে মাঝে হঠাৎ এক দুটো পাঠাতাম, হয়তো ছাপা হতো বা হতো না। 

আরেক উৎসাহ ছিলেন, আমার সেজমামা। প্রায়ই কবিতার বই ছাপাবার কথা বলতেন।  আমার কবিতার সংকলনের খাতা তাঁর অফিসে জমা হয়ে ছিল; তবে ঐ খাতা থেকে কবিতা টুকে নিয়ে সত্যি সত্যি একদিন বই ছাপিয়ে বসলেন। পরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল, খাতাটা পেলাম না আর। ঐ খাতার বাইরের কিছু কবিতাও অবশ্য আমি নিজ হাতে টাইপ করে পাঠিয়েছিলাম। সেটা ছিল আমার জীবনের দ্বাদশ বছর। 

তারপর এই কবিতার গল্পটা আরো লম্বা হতে পারতো, কিন্তু হলো না। কবিতার বইটা খুললে ভীষণ লজ্জা হতো (এখনো হয়)। বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক ছিল, সেগুলো আম্মুকে দিয়ে হাতে এডিট করিয়ে আব্বুই বিভিন্ন মানুষকে হাদিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার নিজের মধ্যে কোন উৎসাহ কাজ করতো না, কাউকে দিতে ইচ্ছেও করতো না। একদিন বড়ুমামার বাসায় গিয়ে দেখলাম, আমার বইয়ের অনেকগুলো কপি একেবারে সামনে সাজানো। এতো লজ্জা হলো, মামীকে গিয়ে অনুরোধ করলাম ওখান থেকে সরিয়ে ফেলতে। একদিন মনে হলো, কবিরা বোকা হয়; ব্যস, ছেড়ে দিলাম কবিতা লেখা। 

এভাবে কি ছাড়া সম্ভব? সম্ভব হয়েছিল আমার জন্য। কারণ ঐ যে, কবিতার প্রতি আমার তেমন কেন টান ছিল না। কিন্তু কবিতা আসতো, তাই লেখা হতো। এতটুকুই ছিল।

যেদিন আবদুল্লাহ মাহমুদ নাজীব সম্পর্কে প্রথম জানলাম, সেদিন অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে বসেছিলাম। বয়স কাছাকাছি, জীবনের শুরুভাগে কবিতা তো আমারও হাতে এসেছিল; তাহলে কবিতা নিয়ে এতোটা বড় হলাম না কেন? কারণ ছিলাম নিজেই। তখনো কেউ আমার ভাবনার বুকে চাবুক মেরে বলতে পারেনি যে, 'আরে কবিতা ছেড়ে দিলে কি তুমি বড় বুদ্ধিমতী হয়ে যাবে?'। আর টান, টানটাই ছিলো না যে! কবিতা লিখতাম, কিন্তু কবিতা-চর্চা ছিল না কখনোই। কবিতা লিখতাম, কিন্তু পড়ার কোন ইচ্ছেই জাগতো না। পুরনো কবিতা ঘষে-মেজে সুন্দর করা, নতুন নতুন শব্দ বের করে সাজাবার ইচ্ছা, ধৈর্য, চেষ্টা কোনটাই আমার মাঝে ছিলো না। 

তবে কবিতা সত্তায় তো আছে! ছেড়ে দিলাম কিন্তু একেবারেই কি? হঠাৎ হঠাৎ আসতো কবিতা, বছরে এক দু'বার অথবা দু বছরে এক বার এক দুটো লেখা হতো। তেমন আসে না বলে কষ্টও হতো না। কৈশোরে আস্তে আস্তে গদ্যের একটা ধাঁচ আসে কবিতায়। কিশোরীর অশ্রু নিয়ে কিছুটা গদ্য-ধাঁচের একটা কবিতা লিখি, যেটা এখনো আমার প্রিয়। পনের বছরে প্রথম (এবং সম্ভবত শেষ) ইংরেজি কবিতা লিখি। বিষয়বস্তু ছিল, 'আমার প্রচন্ড ইচ্ছে করছে পাগল হয়ে যেতে, কিন্তু পারছি না'। লিখে ডেইলিস্টারে পাঠাই কাউকে না জানিয়েই, অতটুকুই; ছাপা হবার মুখ সেটা দেখেনি। তারপর তারুণ্য পেরিয়ে কিছু রোমান্টিক কবিতা, বিশেষ কারো জন্যে জমা। ব্যস, সব পর্বেই জাস্ট 'হাতে-খড়ি'র পরই ছুটি। 'কবি' হিসেবে সেই ছোটবেলার পর আর নামকরণের সুযোগই নেইনি। শেষ কবিতা লিখেছি বোধহয় হয়েছে, দু'বছর। 


শুধু কবিতা না, গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ সবকিছুতেই হাতেখড়ি পড়ার পরই ছুটি নিয়েছি একরকম। এখানে হাতে-খড়ির শুরু অবশ্যই ডায়েরী। কবিতা থাকুক বা না থাকুক, কবিসত্তা তো আছে, কবিসত্তার নিরেট যে ভাব-জগত তাও তো যথারীতি বিদ্যমান। আজ এটা করেছি, ওটা করেছি - এতটুকুতে আমার ডায়েরী লেখা সীমাবদ্ধ থাকতো না; মনের সব ভাবনা বিস্তারিত লিখে বসতাম। ডায়েরী ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। এমন কি মনে হতো ডায়েরী শুধু কাগজ-সংকলন না, বরং সত্যি প্রাণ আছে। ডায়েরীকে সম্বোধন করেও লেখা হতো - 'ডায়েরী, তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয়...' ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যিই ডায়েরীকে যা বলা যায়, পৃথিবীর কাউকেই হয়তো বলা যায় না। যেভাবে ইচ্ছে যখন ইচ্ছে বলা যায়, যত বিশদভাবে ইচ্ছে বলা যায়- থামিয়ে দিয়ে খোঁটা দেয় না, অবজ্ঞা-অবহেলা করে না। 

লিখেছি টানা কয়েক বছর, তারপর আবার কয়েক বছরের বিরতি। এটা ইচ্ছেকৃত ছিল না, অনেকটা জীবনের ব্যস্ততার চাপে, জীবনবোধের বাস্তবতার অতি-অনুভূতিতে হারিয়ে ফেলার মতো। তবে এখানে বাধ সাধার মত কেউ ছিল। একদিন প্রিয় উস্তাদ আবু তাহের মিসবাহ হাফিযাহুল্লাহ এর তাকিদে ভুল শুধরে এলো, কতবার কতভাবে যে তিনি ছাত্রদের, পুষ্পকলিদের রোযনামচা অর্থাৎ ডায়েরী লিখতে বলেছেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছেন - 

'...এজন্যই তোমাদের এত করে বলি, রোযনামচা লেখো। রোযনামচা হচ্ছে তোমার লেখকসত্তাকে জাগ্রত করার, সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট করার প্রথম উপাদান...' 

লেখনীর সফলতার জন্য যে উপায়গুলো লিখেছেন, তার প্রথমটাই হচ্ছে রোযনামচা লেখা অর্থাৎ ডায়েরী লেখা। 

শুধু লেখনী না, রোযনামচা অর্থাৎ ডায়েরী লেখার অভ্যাস জীবনের অন্যান্য অনেক দিকের জন্যই উপকারী। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের চিহ্ন।

লেখনীর যাত্রায় আরেকটা জিনিস ছিল - চিঠি। যখন ডায়েরী লিখতাম, তখন এই চিঠিও লেখা হতো। বান্ধবীকে মোবাইলের যুগেও চিঠি লিখে পাঠাতাম, সেও পাঠাতো। মজার ব্যাপার ছিলো, আমাদের বাবা-মায়েরা এসব ছেলেমানুষী প্রশ্রয়ও দিতেন। এই ধারা অবশ্য বেশিদিন চলেনি। তবে আমার ভাবুক মন চিঠি লেখার মতো এক 'অজানা' কে তৈরি করে নিয়েছিল। সেই অজানাকে লক্ষ্য করে কতো কতো চিঠি যে লেখা হতো। নিরেট ডায়েরী লিখতে হয়তো ভালো লাগতো না, তাই এই চিঠিরূপ। সত্যি কোন মানুষকে চিঠি লিখে সব জানাবার মজাই যে আলাদা! 

ডায়েরী লেখা পর্বে ভাটা পড়বার সময় এই ধারাতেও ভাটা পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পরেও মাঝেমধ্যে অস্তিত্বশীল (existing) মানুষকেও কখনো-না-পাঠানো চিঠি লেখা হতো। কারণ, ওটাই। চিঠি লিখবার মধ্যেও আলাদা প্রশান্তি আছে। কোন কথা আলাদাভাবে বলা সম্ভব, যেটা হয়তো সাধারণ ডায়েরীতে সম্ভব না। 

৪ 

লেখনীর এই ধারায়, ডায়েরীর পরবর্তী ধাপ ছিল ব্লগ। তখনের কথা মনে করলে কিছুটা হাসি আসে, আর ভাবি - হ্যাঁ, এমনই তো হয়। মডেমের যুগ। মাসে ১ জিবি করে কেনা হতো। সেই ১ জিবি শেষ হয়ে গেলে একটু কষ্টেই কাটতো। আর স্পিডের কথা তো বলাই বাহুল্য! আপু খুব ব্লগ পড়তো। ব্লগের এক একটা পেইজ লোড হতে মাঝেমধ্যে ৭-৮ মিনিটও লাগতো বোধহয়। তো যাই হোক, আপু তো পড়তো। আমিও টুকটাক পড়তাম, তবে আমার লেখার দিকে মনোযোগ ছিল বেশি। ১৩-১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি ব্লগ লিখেছি। ব্লগ মানে ডায়েরীই, কাগজের পাতার বদলে ব্লগের বুকে; এই আরকি। পার্সোনাল ব্লগ, কোথাও পাবলিশড ছিল না; পাবলিশ করবোই বা কোথায়! প্রতিদিন যা যা ঘটতো, বিশাল ফিরিস্তি লিখতাম। শেষদিকে অবশ্য কিছু চিন্তাশীল লেখাও লিখতাম। কিছু লেখা আবর্জনার মত লাগতো, কিন্তু লিখছি তো; এটাই হচ্ছে কথা। লিখতে ভালো লাগতো। লিখার মধ্যে অনন্য একটা স্বাদ আছে, যারা লেখেন তারাই জানেন। ব্লগ সাজিয়েছিলাম একটা কবিতা দিয়ে -

নীল কুয়াশায় দূর আকাশে ভাসতে আমি চাই

বাবার কাছে ভালো একটা ক্যামেরা পেতে চাই

নীল আকাশের রঙে ভেজা ডায়রি হাতে চাই

মনের মত অনেক বড় লাইব্রেরীটা নাই

মরূভূমির রৌদ্রতাপে জ্বলতে আমি চাই

নীল ছোঁয়া ওই পাহাড় চূড়ার নাগাল পেতে চাই

বন্ধুরা সব, তোদের যেন আবার খুঁজে পাই

সন্ধ্যাবেলায় চায়ের সাথে আড্ডা হবে,তাই।


পরে ব্লগ লেখাতেও কিছুটা ইস্তফা আসে। কারণ, ঐ তো অতিরিক্ত বাস্তবমুখিতা। ২-৩ বছর মোটামুটি এতে ভাটা পড়ার পর পুরনো হাবিজাবি ব্লগকে হাইড করে নতুন ব্লগ খুলি - নতুন লেখাগুলোর জায়গা দেবার জন্য। তারপর মাঝে মাঝে হঠাৎ চিন্তা, ইচ্ছে এবং সুযোগ একসাথে এলে একটা লেখা হয়ে ওঠে। 

একটা আলাদা ব্লগও খুলেছিলাম। ইংরেজি। 

অনার্সে বাধ্যতামূলকভাবেই ইংরেজি কবিতা পড়তে হতো। পড়তে কেমন লাগতো, সেই গল্প এক পাশে থাকুক। তবে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ধরা পড়তো আমার চোখে, জানি না সত্য না মিথ্যা। কবি সবাই ছিলেন অমুসলিম। আমার মনে হতো, তাদের কবিতার কোন না কোন অংশে হঠাৎ সত্যের একটা ছাপ পড়েছে। অনেককেই মনে হতো সত্যের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। বারংবার মনে হতো। এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে আমি বেশ কিছু ব্লগ লিখেছিলাম। আমার ইচ্ছে হতো, বিষয়গুলো কারো সাথে আলোচনা করে পাবলিশ করি। একক চিন্তায় তো ভুল হতেই পারে। তবে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, তেমন কারো সাক্ষাৎ আজ পর্যন্ত মেলেনি। এমনকি এ বিষয়টার কথা আমি ভুলেও গিয়েছিলাম। বহুদিন পর আজ মনে পড়লো।

কবিতা পড়তে ভালোবাসতাম না। কিন্তু গল্পের বই পড়তে খুব ভালো লাগতো। তবে আমি হয়তো জাত-পড়ুয়া ছিলাম না। অন্য অনেক বই-মাতালের চেয়ে কম হলেও, এককালে অনেকটা নেশার মতো ছিল এই গল্পের বই পড়া।  আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, সেই তুলনায় গল্প লেখা হয়েছে খুবই কম। উপন্যাসও ধরেছি এক দুইটা; তারপর আর লেখা হয়নি। 

---

তারপর...

তারপর আর কি! আপাত অসমাপ্তি সহকারে এই ছিলো আমার 'হাতেখড়ি'র যেমন-তেমন গল্প।  

শেষ করি প্রিয় একটি উক্তি দিয়ে - 

লেখার জগত সম্পূর্ণ আলাদা একটি জগত। আশ্চর্য কোমল এবং আশ্চর্য মধুর এক জগত। একজন লেখকের একটি বড় পরিচয়, তিনি একজন শিক্ষার্থী। সবার কাছ থেকে এবং সবকিছু থেকে তিনি শিখতে থাকেন, শিক্ষা অর্জন করতেই থাকেন। ...

                                                                             মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ হাফিযাহুল্লাহ 

#লেখালেখির_হাতেখড়ি