ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনটা কেমন হতে পারে? জানিনা, তবে আজ আমার জন্য মোটামুটি গুরত্বপূর্ণ উপলদ্ধির দিবস।
কেন জানি না, আজকেই অনেকগুলো গুরত্বপূর্ণ বিষয় একসাথে চোখের সামনে চলে এলো। বেশ কিছু সুতো মিলে যেতে থাকলো। জানি না কেন। কয়েক সপ্তাহ ধরেই, গত শতাব্দীর ইতিহাস পড়া/বোঝাটা খুব বেশি গুরত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। যতো দিন যাচ্ছে, এই অনুভূতি আরো তীব্র হচ্ছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনী ধরনের একটা বই ধরেছিলাম পড়তে। অনুবাদ বলেই কি না, বেশি এগুতে পারিনি। আজ মাওলানা আতিক উল্লাহর দারস শুনতে শুনতে আবারো উজ্জীবিত হতে হলো। আজ অন্য বেশ কিছু কাজ লিস্টে ছিল, সব ফেলে মন দিয়ে কিছু নিউজ ফলোআপ করলাম। অন্যসময় অনুভব হয়, সময় বেশ কিছুটা নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু এখন জেনে-থাকাটা খুব, খুব বেশি গুরত্বপূর্ণ মনে হয়।
যাই হোক, মূল কথায় আসি।
১
আফ্রিকা, পীড়িত-নিপীড়িত আফ্রিকা ICJ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত এ ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলা সম্পর্কে যারা জানি, স্বভাবত নিরাশবোধ করতেই পারি। বিশেষত আন্তর্জাতিক আইন, মামলা ইত্যাদি কার অধীনে সবাই কম-বেশি জানি এবং এই মামলার শেষ পরিণতি কী হবে তাও জানা। এছাড়া যা বুঝলাম, এ ধরনের মামলা শেষ হতে হতে বছরও পেরিয়ে যায়; সুতরাং আফ্রিকা যে জন্য মামলা দায়ের করেছে সেটা কিছুটা অর্থহীন এ পৌঁছে যেতে পারে।
কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকা সব যুক্তিতর্ক ঠেলে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছে, ভালোভাবে মামলা তুলে ধরেছে। এটা অবশ্যই বর্তমান সময়ের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ এবং জাতিগত শক্তি ও সাহসের পরিচায়ক। ইসরাইল ও তার দোস্তদের অল্প পরিসরে হলেও জবাবদিহিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। অলরেডি শুনানি শুরু হয়েছে। যদিও কী বলবে মোটামুটি আন্দাজ করা যায়, তবু মোটামুটি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
আরো মজার বিষয় হচ্ছে, ইসরাইলী সৈন্যরা সব নীতি ভঙ্গ করে যা কিছু করেছে, সব কিছুর স্বহস্ত-প্রমাণ রেখে দিয়েছে। এতদিন তো সবই হেলায় করেছে, কিন্তু আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য এই প্রমাণগুলো্র খুব দরকার ছিলো।
আজকে উস্তাদ আতিকুল্লাহ আলোচনায় এটাও বললেন, কুরআনেই আছে, তারা খুব সহজে উস্কে উঠে। ওদের দিকে একটু হাত তোলা সহ্য করতে পারে না। গাজা-লেবানন-ইয়েমেন আরো সব বিষয়ে এই মামলা ওদের কী পরিমাণ জ্বলুনি তৈরি করেছে তার ইফেক্ট দেখতে সত্যিই অপেক্ষা করতে মন চাচ্ছে না।
২
(লেখায় গ্যাপ পড়ে যাওয়ায় তাল পাচ্ছি না)
দ্বিতীয় গুরত্বপূর্ণ খবরটা হলো, ইয়েমেন। এতদিন হুথিদের খবরগুলো টুকটাক পড়ছিলাম, অত মনোযোগ দিচ্ছিলাম না। শুধুমাত্র সমুদ্রপথ আটকে দিয়ে হুথিরা গাজার বড় সাহায্য করেছে।
কেমন সাহায্য করেছে, বা ইসরাইল সহ তার মিত্রদের কেমন ক্ষতি করেছে সেটা বোঝা যায় এই আক্রমণের বহর থেকেই। শুধুমাত্র ইসরাইল বা আমেরিকা না; লটবহর নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বাহরাইন - এতগুলো দেশের যৌথ আক্রমণ হয়েছে। এবং সেটা তারা তাদের অফিসিয়াল একাউন্টে পরিষ্কার টুইট করেছে। এটাও দাবি করেছে যে, কোন মানুষ মারা যায়নি।
কোন পর্যায়ে কোনঠাসা হলে একটা দেশের উপর এতগুলো দেশ ঝাঁপিয়ে পড়ে? তাদের দাবি অনুসারে যদি সত্যিই কোন মানুষ না মারা গিয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে খুব সতর্কতার সাথে আক্রমণ করেছে। এই সতর্কতার মানে কী? ইসরাইল আক্রমণে বিশ্ব-পরিস্থিতিই প্রকাশ করে তাদের সতর্কতার প্রয়োজন।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এটাকেও আত্মরক্ষামূলক আক্রমণ বলেছে। হাহা।
আর দু-একটা বিষয় নোট করার মত মনে হয়েছেঃ
১। ওমান। সে তার আকাশপথকে ইয়েমেনে আক্রমণের জন্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
২। সৌদি। সে যা করার কথা করেছে, আক্রমণকে সাপোর্ট করেছে এবং খুব সম্ভবত সরাসরি আক্রমণ না করলেও সাহায্য করেছে।
৩। বাহরাইন। গাদ্দারের লিস্টে চোখে পড়া নতুন নাম।
ইয়েমেন আক্রমণের সাথে সাথে সে দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলেছে, আমরা গাযানদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবো না। এবং বারংবার গাযার প্রসঙ্গ তুলে এনেছে। এখন ইয়েমেনি জনগণের মানসিকতা খুবই গুরত্বপূর্ণ। যদি তারাও এমন দৃঢ়তা প্রকাশ করতে পারে (অলরেডি একজনকে দেখলাম), তাহলে ইয়েমেন খুব গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ। [এখানে কূটনৈতিক টুকটাক কিছু ব্যাপার থাকতে পারে, কিন্তু এতগুলো আক্রমণ সয়ে কোন দেশ কীভাবে ভুয়া সহমর্মিতা দেখাতে পারে; এটা অসম্ভব ই মনে হচ্ছে। দেখা যাক সামনে।]
৩
উস্তাদ আতিকুল্লাহ আরেকটা গুরত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। কয়েকদিন আগে এক আলোচনায় আমি বলছিলাম, গাযার যেমন ইসরাইল আছে আমাদেরও কিছু একটা আছে। আজকে উস্তাদ বললেন, ইহুদিদের সবচেয়ে কাছাকাছি হলো মুশরিকরা। আর এখন এর প্রকাশ্য নিদর্শন ও কার্যক্রম দেখাও আমাদের বাকি নেই।
এখন আমাদের জন্য খুব জরুরী হলো, ইসরাইলী পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণ করা, বোঝা। এখানে পুরুষ-নারী ভেদ নেই। তারা পুরুষ-নারী ভেদ করে না। ফ্রন্ট চেনে না। নাগরিক চেনে না। ওদের কোন নীতি নেই। এখানে আমরা যত নিজেদের ভেদ করে নিজেদের অসচেতন করে রাখবো, তত নিজেদের এবং নিজেদের সন্তানদের ভোগান্তির জন্য তৈরি করে রাখবো।
৫
গত কয়েকদিনে হাতে আসা ১-২ টা বইয়ে গত শতাব্দীর দেশগুলোর যুদ্ধ-সংঘাতের যে চিত্র চোখে পড়েছে; তাতে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট মনে হয়েছে - প্রতিটি সংঘাতের সাথে ফিলিস্তিন কোন না কোনভাবে জড়িত। আমাদের বিজয়ে যারা অগ্রবর্তী ছিলেন, তারা অন্যান্য দেশে যদিও কাজ করেছেন, কিন্তু বারংবার ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ তাঁদের কথায় ছিলো, আলোচনায় ছিলো। ঐ সময়ে ফিলিস্তিনি যে চিত্রগুলোর বর্ণনা পাই, বর্তমান ফিলিস্তিনের চিত্র যেন প্রায় একইরকম। অর্থাৎ এখন আমরা যা দেখছি, অনুভব করছি; এটাই ফিলিস্তিনিরা এবং ঐ সময়কার সচেতন মুসলিম বা নেতারা অনুভব করছিলেন। গত শতাব্দীতে ফিলিস্তিনিরা এভাবেই নিপীড়িত হয়েছে, যেমন এখন হচ্ছে।
তবে একটা পার্থক্য মনে হয়, ঐসময়ে জাতিগতভাবে পাশে দাঁড়ানোর মত খুব বেশি কেউ ছিল না (আমার জ্ঞান অনুসারে)। এখন আমরা যথেষ্ট গাদ্দারি দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি আলহামদুলিল্লাহ্, পাশে দাঁড়ানোর মত কিছু দেশ দেখছি, কিছু কথা শুনছি। যেহেতু বিজয় সংখ্যা দিয়ে আসে না, দেশ ও শক্তি দিয়ে আসে না এবং বিজয়ের কৃতিত্ব আল্লাহ ইনশাআল্লাহ যোগ্য হাতেই দিবেন, তাই খুব ভরসা করতেই পারি তাঁর উপর।
গত শতাব্দীতে একটানা মুসলিম নিপীড়নের হাহাকার ই ভেসে ওঠে। কিন্তু কে জানে, হয়তো বা একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকটি আমাদের বিজয়ের?
বাকি আমাদের খুব দ্রুত সচেতন হয়ে যাওয়া এবং দুয়া, খুব দুয়া।