মায়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশে উঁকি দেবার দু- একটা খবর পেয়েছি । খবর ভুয়াও হতে পারে। কিন্তু সেটা প্রসঙ্গ নয়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের যারা খুন করছে, ধাওয়া করছে তারা বৌদ্ধ এবং তাদের আক্রোশ অন্য কারো উপর নয়, শুধুমাত্র মুসলিমদের উপর। এটা নতুন কোন ইস্যুও নয়। ইতিহাস নয়, কেবল আমাদের জীবদ্দশায় যেসব কাহিনী শুনতে পাই তা পরিষ্কার করে দিয়েছে মুসলিমদের উপর কাফেরদের কি ধরনের আক্রোশ। খৃষ্ট শক্তি, বা ইহুদি কি হিন্দু বা বৌদ্ধ - এরা সুযোগ পেলেই প্রাণপণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আমাদের উপর। এদের একমাত্র মাথাব্যথা মুসলিমদের নিয়ে। এরপরও যদি কারো কাছে এ ব্যাপারটা পরিষ্কার না হয়, তাদের প্রতি একরাশ আফসোস। আর আফসোস তাদের প্রতি যারা এখনো জান-প্রাণ দিয়ে খ্রিষ্টান- হিন্দু সভ্যতার অনুকরণ করে যাচ্ছে।
এ আঘাত বা হানার কাহিনী নতুন কিছু নয়। এটাও উচিত নয় যে, কেবল এখনই যখন আমাদের ভাইরা আশ্রয় নিতে পালিয়ে আসছে, তখনই একটু সচেতন হয়ে উঠি। বরং সত্য হলো, আমেরিকা সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তান নিকেশ করতে কোন দ্বিধা করেনি। এরা পাশে থেকে যে কোন দ্বিধাই যে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করবে, সেটা সহজেই বোঝা যায়। কাফের, সমগ্র কাফেরদের আক্রমণের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় - এদের মধ্যে নিয়মনীতি নাই। এদের নিয়মনীতি তোয়াক্কা করার দরকারও নেই, কারণও নেই। এরা সিদ্ধান্ত নেয়, বাস্তবায়ন করে। এদের লক্ষ্য মুসলমানদের ধ্বংস করা। এর জন্য তারা তাদের চেষ্টার ত্রুটি করে নি, করে না এবং করবেও না।
আমাদের অস্ত্র হলো- ঈমান। এ অস্ত্র আমাদের নিজেদের জন্য তৈয়ার করে রাখতে হবে। কাফের শক্তি যত না কাছে, তার থেকে কাছে হলো মৃত্যু। এ ঈমান আমাদের সবসময়ই তৈয়ার করে রাখতে হবে। বাড়াতে হবে। মেহনত করে বাড়াতে হবে।
একমাত্র ঈমানই আমাদের কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র। আমাদের ঈমান তখন সত্য বলে প্রমাণিত হবে যখন আমরা কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, পোশাক-আশাকে ইসলামকে ফুটিয়ে তুলতে পারবো। এমন হওয়াতো দুঃখজনক যে, যখন কাফেররা এসে দরজায় কড়া নাড়া শুরু করল তখনই সচেতন হলাম। কিন্তু এটাতো আরো দুঃখজনক যদি তারপরও সচেতন না হই। আমাদের মুসলমান হিসেবে আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করতে হবে। বুঝতে হবে, আমরা কেন মুসলমান (আলহামদুলিল্লাহ) আর আমাদের কাজ কি।
এখন, যখন তারা এসে কড়া নাড়ছে_চলুন আমরা আমাদের অস্ত্র রেডি করে ফেলি।
আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনের খবরাখবর মাঝে মাঝেই তো দেখা হয়। যখন ছবি তে দেখি তারা পালাচ্ছে, কাঁদছে _ মনটা কেমন যেন হয়ে যায়। তাদের পোশাক আশাকে দেখা যায় না মুসলমানদের ছাপ। কিন্তু তারা তো মুসলমান, আমাদের ভাই, এ কারণেই মন কাঁদে। দেখলাম রোহিঙ্গাদের। তাদের অবস্থাও প্রায় একরকমই। (আমাদের অবস্থা যে সেই তুলনায় খুব উন্নত তা তো নয়। কিন্তু যখন নির্যাতিত, পালিয়ে আসা মুসলমানদের চিত্র দেখি; তখন এ জিনিসটাই মনে বার বার আঘাত দেয়।) কিন্তু তাদের দেখে মনে আরেকটা প্রশ্ন উঠে আসে- দোষ কি কেবলই তাদের? দোষ তো তাদেরও , যাদের সুযোগ ছিল, (ঈমানী) সম্পদ ছিল; তা পৌঁছাতে চেষ্টা করে নি।
এক মাওলানার বয়ানে পড়েছিলাম, মুসলমানদের ভিতর যখন দাওয়াতের মেহনত চালু থাকে আল্লাহ তাদের কাফেরদের উপর বিজয়ী করে দেন। আর মুসলমানদের ক্রমাগত পরাজয়ের কারণ, একমাত্র দাওয়াতের মেহনতের অভাব।
মুসলমান জাগবে কবে?
চলুন, ছোট পদক্ষেপে হলেও আল্লাহর দিকে এগিয়ে যাই। আমরা এক হাত আগালে, আল্লাহ দুই হাত এগিয়ে আসবেন। আমরা হেঁটে এগোলে আল্লাহ দৌড়ে আসবেন।
ঈমানী চেতনা জাগ্রত করি। ঈমানী কথা বলি, ভাবি।
পরের কাজটি করার আগে বিসমিল্লাহ বলি। পরেরবার জুতো পরার আগে খেয়াল করে ডান পা আগে ঢুকাই, খোলার সময় খেয়াল করি। পরের বার পানি খাবার আগে মাথা ঢেকে নিই, বসে নিই। পরের বার বাথরূমে ঢুকবার আগে মাথা ঢেকে নিই। নিয়ত করি আর দাঁড়ি কাটবো না...
একটু কষ্ট করি। জীবন তো আর একটা নয়। এখন একটু কষ্ট করি। ইসলামকে আমাদের মধ্যে পুনরজ্জীবিত করি। এখনই করি। এখনও যদি সচেতন না হই তবে কবে হবো?
দাওয়াত দিই। আসলে দাওয়াত ছাড়া ইসলাম কি করে জিন্দা থাকবে? ছোট কিছু হলেও দাওয়াত দিই। ছোট ভাই-বোনকে ছোট ছোট কথায় দাওয়াত দিতে পারি। শুধু কথায় তো নয়। আমলেও দাওয়াত হয়। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলি। পরিপাটি থাকি, কথাবার্তা সুন্দর করি।
আরেকটা কথা, আমরা যেন অবশ্যই জামাতবদ্ধ অর্থাৎ যথাসম্ভব ঐক্যবদ্ধ থাকি। সারাবিশ্বের মুসলমানদের বর্তমান অবস্থার জন্য এই একটা কারণকেই উল্লেখ করা যায় - আভ্যন্তরীন কোন্দল আর হুজুর (স) যে ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দিয়েছেন তা মন থেকে উপড়ে ফেলা। আমরা তাওহীদের পতাকা তলে একত্রিত হয়ে থাকি।
রোহিঙ্গাদের সাহায্যের এখন বড় প্রয়োজন। অন্তর ভরে ওঠে যখন চিন্তা করি, আমার দেশের মানুষ যা পারছে করছে। আলহামদুলিল্লাহ, তাদের আশ্রয় দিতে পারছি, খাবার-পোশাকের সংস্থানের চিন্তা হচ্ছে। আমরা তাদেরকে আমাদের সাথে একীভূত করে নিতে পারি। কিন্তু এটাই তো চূড়ান্ত সমাধান নয়। তাদের ভূমি_আমাদের ভাইদের ভূমি তাদের কাছে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করা দরকার। কিন্তু কিভাবে?
চিন্তা করুন তো সেই সেনাবাহিনীর কথা যারা নামাজী, সুন্নতী লেবাসধারী, অন্তরে তাওয়াক্কুল, আল্লাহর শত্রুরা যাদের শত্রু, যাদের সাহায্যকারী আল্লাহ?
অনেকে প্রশ্ন করেন কিভাবে রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে পারি। অনেকে বলেন, তাদের দেশ থেকে বিদেয় করে দেয়া দরকার। কেউ অবশ্য বলেন, তাদেরকে জিহাদি ট্রেনিং দিয়ে ফেরত পাঠানো যায়। তবে সব কথারই প্রথম কথা, আল্লাহর সাহায্য সাথে না নিয়ে লড়লে সারাবিশ্ব একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লেও রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করতে পারবে না।
যারা কিছু করতে চান, পারেন না, কি করবেন ভাবেন- তারা আল্লাহর ওয়াস্তে এই কাজটা করুন। সময় করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যান। তাদের দ্বীন এবং ঈমান-আমল শিক্ষা দিন, তাদের শিখানোর দ্বারা আমরা নিজেরাও পুনরজ্জীবিত হব ইনশাআল্লাহ। বিশেষ করে তাদের সামনে রেখে কাজ করুন, তারা যুদ্ধের সম্মুখীন। আনসারী হয়ে তাদের ঈমানী অস্ত্র উপহার দিন। মহিলা-শিশুদের বাদ দেবেন না। শিশুরাই আগামীকালের সৈন্য, আর মহিলারাই মুজাহিদদের অনুপ্রেরণা জাগাবে। তাদের সামনে রেখে আমরা যাতে আমাদের কাজকে, দায়িত্বকে বুঝে নিই।
আমার বিশ্বাস, যদি পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও দ্বীনের হাওয়া চালু হয়ে যায়, তবে ওরা অবশ্যই নিজেদের ভূমি নিজেরা পুনঃদখল করতে পারবে। দরকার তাওয়াক্কুল, ইখলাস, সেই দ্বীনি আত্মমর্যাদাবোধ। এসব একদিনে গড়ে উঠে না; তবু চেষ্টা করতে থাকি, বাকি আল্লাহ হাওলা।
চলুন আমরা সাহাবীদের জীবনকে সামনে রেখে আমাদের কাজ গুছিয়ে নিই।
আল্লাহ আমার ইখলাসে পরিপূর্ণতা দিন। আমাদেরকে সত্যিকার মুসলমান হবার তৌফিক দিন । আমীন।