৪.
মনে হয়, কতো কিছু লিখবো। এতো কথা একসাথে ভিড় করে, কোনটা লিখা যায় বুঝে উঠতে পারিনা। মনে হয় যেন, স্মৃতি একটু ঘোলাটে হয়ে এলে লেখার কিছু ভাষা ফিরে পাওয়া যায়...কিছুতেই এক বসায় শেষ করতে পারছি না...
চিন্তা-চেতনায় যখন কাশগড়, তখনই হঠাৎ ফ্রান্সের এই খুঁচিয়ে দেওয়া। ওদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, হয়তো ওরা পরীক্ষা করতে চায়- আমরা কতোটা মুসলমান আছি; অথবা জাস্ট খেপিয়ে দিতে চায়, কোন একটা ইস্যু বের করে আবার নতুন কোথাও হামলা করা জায়েয বানানোর জন্য...
দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছি...ফ্রান্সের উষ্কানি; আলহামদুলিল্লাহ মনে একটু জোয়ার আসে, আমরা নিশ্চিহ্ন হইনি ইনশাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ আমরা আছি, ইনশাআল্লাহ একসাথেই আছি...ভালো লাগে...
ওরা কেন শুধু শুধু খেপাতে চায়? কেন ১৫০০ বছর আগের একজন মানুষকে নিয়ে তাদের এতো 'মাথানষ্ট'? আবার 'শক্ত অবস্থান'? আবার 'পাশে থাকা'?
আসলে ওরা ভয় পায়...খুব ভয় পায়; আমরা জানিনা, তবে ওরা জানে আমাদের শক্তি কোথায়...এজন্যই ওদের এতো মাথাব্যথা...
কিন্তু...
সব ভালোলাগার মধ্যেও হঠাৎ 'কাশগড়' দপ করে দেখা দিয়ে যায়। হঠাৎ বোবা হয়ে যাই। যা দেখছি, তা কি সত্যি? সত্যিই কি উম্মাহ বেঁচে আছে, জেগে আছে? শুধু আষ্ফালন নয় তো? শুধুমাত্র দুদিন একটু জোর দেখানো না তো?
এ আন্দোলনকে সপ্রশংসিত উৎসাহ দেখিয়ে তারপর,
প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে - উম্মাহ! আসলেই কি আছো তুমি?
তাহলে বলো - হুযুর সা. যদি বেঁচে থাকতেন, কোন জিনিস নিয়ে বেশি দুঃখিত হতেন?
আমাদের উম্মাহর পক্ষ থেকে আমাদের জান-প্রাণ দিয়ে হুযুর সা. এর মান-ইজ্জত রক্ষা করা আমাদের ঈমানের দাবী; শুধু দাবী নয়, আরো বেশি কিছু। একে একে প্রাণ দিয়ে দিই, তবু তিনি বেঁচে থাকুন...আমাদের পূর্বপুরুষরা তো এমনই ছিলেন...
কিন্তু বলো দেখি, আমরা যার সম্মানের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত...তাঁর কান্নাজড়িত রাতগুলো দুয়াগুলোর কি আমাদের কাছে কোন মূল্যই নেই?
বলো দেখি, যতদিন বেঁচে ছিলেন - কাদের আদর্শ হবার জন্য তিনি নিজের জীবনকে অতিকষ্টে কাটিয়ে গেছেন? বলো, কাদের জন্য জিহাদ করেছিলেন? কাদের জন্য জীবনের ঝুঁকির সাথে দাওয়াতের কাজ করে গেছেন? তাঁর চিন্তা-ভাবনা জুড়ে কারা ছিলো?
আমরা নই কি? আমাদের ভাই-বোনরা নয় কি?
আমরা পারবো না, ঠিক পরের মুহুর্ত থেকে তাঁর আদর্শ অনুসরণের দৃঢ় নিয়ত করতে; যার জন্য আমরা প্রাণ দিতে প্রস্তুত হয়েছি?
উম্মাহ! কোথায় ছিলে এতোদিন? তোমার সামনে আমেরিকা একের পর এক তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিলো, যাদের জন্য তোমার নবী নিজের জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করেছেন, যাদেরকে ভালোবেসে গেছেন, জন্মের দেড় হাজার বছর আগেই যাদের স্মরণ করেছেন।
তোমার সামনেই কাশ্মীর জ্বলছে, তোমার সামনেই ভারতে তোমার ভাইদের জায়গা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে; তোমার সামনেই তোমার রোহিঙ্গা ভাইয়েরা স্বদেশ ছাড়া হলো..কোথায় ছিলে তুমি?
এখন তোমার চোখের পিছনে_তবে সদিচছুকের সচেতন চোখের পেছনে নয়_তোমার উইঘুর ভাইদের স্রেফ নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে..
আফসোস, ট্যাগ মেরে নবীপ্রেম দাবি করা তুমিই তো আবার দাবি করো..
'ওসব প্রোপাগান্ডা!'
'এসব ওদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার!'
'বাংলাদেশে তো হচ্ছে না! আমরা এখনো স্বাধীন(আলহামদুলিল্লাহ)! ওসব নিয়ে আমাদের চিন্তার প্রয়োজন নেই!'
ছি: কীভাবে এতো জঘন্য হলাম!
ভাবছো, তোমাকেই কেবল বকে যাচ্ছি? আসলে তা নয়, বকছি নিজেকেই..আমি তো তোমারই অংশ..
৫.
তিনটি খবর..
- জাতিসংঘে উইঘুরদের পক্ষে গেলো ২৭টি চিঠি। এর মধ্যে মুসলিম দেশ ছিলো...একটিও না!
- জাতিসংঘে উইঘুরদের বিপক্ষে চায়নার পক্ষে গেলো ৩৭টি চিঠি, যার মধ্যে মুসলিম দেশ ছিলো..গুনো, পারবে না?
https://thediplomat.com/2019/07/which-countries-are-for-or-against-chinas-xinjiang-policies/
- ভারতে গণহত্যার প্রস্তুতি চলছে, জেনোসাইড বিশেষজ্ঞের মতে। এখন আছে ১০টির মধ্যে একদম শেষ ধাপে।
https://www.theweek.in/news/world/2019/12/14/muslims-in-kashmir-assam-1-step-away-from-extermination-genocide-researcher.html
কী মনে হয়? একটুও আঁচ লাগবেনা বাংলাদেশে; যেমন রোহিঙ্গা তাড়ানোর সময়েও লাগেনি, তাই না? বাংলাদেশ তো একদম স্বাধীন, এতো স্বাধীন যে মোদি হুজুর নিজের অধিকারবশেই হুমকি-ধামকি দিতেও খুব ভয় পায়, তাই না?
আরে, চিন্তা করো না ভাই; আমরা উম্মাহবাদী না হলে কী হয়েছে, জাতীয়তাবাদী তো!
আর ওরা জাতীয়তাবাদী না হলে কি হবে, উম্মাহবিরোধী তো!
একদম চিন্তা করো না; যাও, নিজের কাজে ফিরে যাও।
৬.
আশ্চর্য! কবে আমরা জাতীয়তাবাদের সবক এতো চমৎকারভাবে মুখস্থ করলাম?!
কবে এতো সংকীর্ণ চিন্তাধারার অধিকারী হলাম?
আমাদেরকেই কি অত্যন্ত ভালোবেসে বলা হয়নি-
তোমার একটি দেহ, তোমরা একে অপরের ভাই?
আশ্চর্য! কবে ভুললাম, কেন ভুললাম?
কেন, ওরা তো ভুলেনি!
ওরা আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইরাক-সিরিয়ায় কেন বোমা ফেলে? আমরা মুসলিম বলেই তো!
শ্বেতসন্ত্রাসের বলি কারা হচ্ছে?
কাশ্মীরে কেন রক্তপাত চলছেই? ওরা মুসলিম নয়, এ কারণে?
কেন রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিলো? কেন ভারত রাতারাতি মুসলিমদের ঐতিহাসিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়? কেন অসম্ভব গল্প মুসলিমদের নিয়েই ফাঁদে?
কেন চায়নার মনে হয়, তুর্কিস্তানীদেরকেই 'সুশিক্ষা' দেওয়া দরকার?
কেন ওরা সব ভুলে একে অপরের 'পাশে' থেকে যায়? আর আমরাই কেন নিজেরই পাশ থেকে সরে যাই? হ্যাঁ, আমরা তো এক!
ওরা জাতীয়তাবাদের 'সবক' শিখায়, তারপর নিজেরাই তো ভুলে যায়..
ওরা তো মানচিত্রের আঁকিবুকির পরোয়া করেনা! আমরা কেন ওদের এঁকে দেওয়া আঁকিবুকি থেকে নিজের চিন্তাকেও সাজিয়ে নিই?!
কী আফসোস! আফসোস প্রকাশের আলাদা কোন ভাষাও তো নেই!
আল্লাহ কতো করুণাময়, তাঁর অবাধ্য বান্দাদের প্রতিও কতোটা_ভালোবাসা বলবো না? নাকি কেবল ন্যায়বিচার_দেখিয়ে আমাদের সতর্ক করে বললেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও (হুজুরাত: ৬)
আর আমরা?
নিজ সম্প্রদায়ের হালাক হবার, ধ্বংস হয়ে যাবার খবর শুনছি; তবু কেবল পাশ কাটিয়ে চলে যাই, প্রোপাগান্ডা বলে উড়িয়ে দিই। সত্য না মিথ্যা যাচাই করবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা পোষণ করিনা।
আমাদের বিচার কেমন হওয়া উচিত?
আল্লাহ ক্ষমা করুন। সংশোধনের তৌফিক দিন।
No comments:
Post a Comment