আজকে মাথার মধ্যে আল্লাহ এমন একটা আইডিয়া দিলেন যে উঠে কম্পিউটার অন না করে পারলাম না।
এর বাস্তবায়ন যে কোন সদিচ্ছাসম্পন্নের পক্ষেই সম্ভব। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য এমন ব্যক্তিকে প্রয়োজন যিনি আল্লাহকে মানতে চান, কল্যাণকামী আর মানুষের পরকালীন কল্যাণকামী, সুন্নাতের অনুসারী, সুসম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী, আন্তরিক, আত্মবিশ্বাসী, যোগ্যতাসম্পন্ন-শিক্ষিত-ট্রেনিংপ্রাপ্ত, এবং কঠোর পরিশ্রমে পিছপা নন । স্বল্প পরিসরেও এর বাস্তবায়ন সম্ভব।
আমাদের দেশ কৃষিভিত্তিক দেশ, এবং এমন একটা দেশকে শিল্পায়িত (যথেষ্ট পরিমাণ, অতিরিক্ত না হলেও) হয়ত খুব বেশি বুদ্ধিমানের কাজ না। দেশের শিল্পায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান তৈরি করা, শ্রমশক্তিকে বিদেশে পাচার না করে দেশেই কাজে লাগানো। কিন্তু আমি ভাবলাম, যদি এই শ্রমশক্তিকে দেশেই এবং কৃষিক্ষেত্রেই কাজে লাগানো যায়?
আমার আসলে জানা নাই, এরকম কোন প্রকল্প আছে কিনা। আল্লাহ আমাদের দেশের মাটিকে এত উর্বর করেছেন যে, আমরা হয়ত শুধুমাত্র কৃষিক্ষেত্র থেকেই বিপুল পরিমাণ আয় করতে পারি এবং আমাদের প্রয়োজনীয় শিল্পদ্রব্য আমদানি করতে পারি। শিল্পে নিদেনপক্ষে যা কাঁচামাল আসে তা তো কৃষি থেকেই আসতে হবে? যাই উৎপাদন করা হোক না কেন, কাঁচামাল তো কৃষির উপরই নির্ভরশীল। কাজেই আমরা বিপুল পরিমান কাঁচামাল শিল্পায়িত দেশে রপ্তানি করতে পারি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষিতে কিভাবে জনশক্তিকে কাজে লাগানো যায়।
আমাদের জানা আছে যে, প্রচুর পরিমাণ আবাদযোগ্য অনাবাদি জমি পড়ে আছে। অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমি আছে, যার মালিকের প্রযুক্তি প্রয়োগে সর্বোচ্চ লাভে চাষের সুযোগ নেই। অন্যদিকে, এত ছোট জমিতে অনেক প্রযুক্তি যেমন ট্রাক্টর ইত্যাদির প্রয়োগ ঘটানোও সম্ভব নয়। এখন এটি কি সম্ভব যে, চাষীর নিজস্ব জমিতে চাষী নিজেই কাজ করবে শ্রমিক হিসেবে এবং তাতে আধুনিকতম প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হবে?
অর্থাৎ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমিগুলো সরকার অথবা বড় প্রতিষ্ঠান লীজ নিয়ে নেবে। ফলে কৃষক মাসিক ভিত্তিতে কিছু টাকা পাবে অন্যদিকে জমি থেকে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ লাভ সরকার বা ঐ প্রতিষ্ঠান নেবে। এভাবে হিসেবটা সহজ হয়। সরকারের ক্ষেত্রে, জমির মালিকানা একটু ওলটপালট করে কৃষকদের বাসস্থান একদিকে সরিয়ে নেবে ফলে অন্যদিকে বিশাল বিস্তৃত জমি পাওয়া যেতে পারে। কৃষক চাইলে সম্পূর্ণ শ্রমিক হিসেবেই প্রকল্পে যোগ দেবে। এতে তার শ্রম এবং মেধাও কাজে লাগবে।
এ ব্যবস্থায় লোকসানের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। কারণ এভাবে কম খরচে অধিক ফলন সম্ভব। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিদ্রব্য দেশের ভিতরেই এবং কাঁচামাল দেশের বাইরে রপ্তানি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রচুর পরিমাণ লাভ করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি যদি সরকার হয়, এবং সুসরকার, তবে এই লাভ বায়তুল মাল ধরনের কোষাগারে জমা হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবে জনগণের প্রচুর উন্নতি ঘটবে, ইনশাআল্লাহ।
এ ব্যবস্থায় জমিতে শ্রমিক নিয়োগের পাশাপাশি হিসাবাগার, গবেষণাগার, কৃষক পরিবারের বাসস্থান সম্পর্কিত কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
এখানে কয়েকটি পয়েন্ট এরকম যে __
১। প্রতিষ্ঠানটির প্রথমত প্রচুর খরচ করতে হবে। এতে ঋণও নিতে হতে পারে। কিন্তু এ ঋণ নিতে হবে সম্পূর্ণ সুদবিহীন।
২। কৃষক পরিবারগুলো মাসের প্রথমেই তাদের মাসিক প্রাপ্য পাবে। অর্থাৎ প্রকল্পটি তাদের এবং অন্যন্য বেকার শ্রমশক্তির উন্নয়নের জন্য। কাজেই তাদের যেন একটা দিনও কষ্ট করতে না হয়।
৩। কৃষক পরিবারগুলোর জন্য জমির একপার্শ্বে বাসস্থান নির্মাণ করে দেয়া যেতে পারে। ফলে ঘরভিত্তিক ভাড়া প্রতিষ্ঠানটি পাবে। এক্ষেত্রে ব্যাপারটি এমন দাঁড়াচ্ছে যে, প্রতিষ্ঠানটি জমির বদলে মাসিক কিছু টাকা পরিবারটিকে দেবে এবং পরিবারটি ভাড়া হিসেবে প্রতিষ্ঠানকে মাসিক টাকা দেবে।
৪। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের কাছে প্রকল্পটির কল্যাণকর দিকটি তুলে ধরে জনগণের কাছেই নির্দিষ্ট মেয়াদে সুদবিহীন ঋণ নিতে পারে।
৫। প্রতিষ্ঠানটি যদি নিজেকে সৎ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়, তবে আপামর জনতা নিঃসন্দেহে তাদের সাহায্য করবে।
৬। প্রতিষ্ঠানটি দেশের জনশক্তিকে যথাসম্ভব এ কাজে লাগিয়ে দেবে। কৃষক ট্রেনিং সেন্টার সহজলভ্য করবে।
৭। তবে সর্বপ্রথমে নিঁখুত একটা ধারণা অংক কষে তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ কৃষকদের কি রকম লাভ দেয়া হবে, কৃষিক্ষেত্রে কি রকম খরচ পড়বে, বিপরীতে রপ্তানি করে লাভ কি রকম আসবে , তার কত পার্সেন্ট কোষাগারে জমা হবে, কতটুকু পুনঃফলনে খরচ হবে ইত্যাদি। তবে এতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে যাতে, কৃষক পরিবারের কোন ধরনের ক্ষতি না হয় এবং তারা পাওনা তো পাবেই বরং যথাসম্ভব কষ্ট কম করে থাকতে পারে, শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য পায়।
৮। কৃষকদের কোন পার্সেন্টেজ লাভ দেয়া হবে না। তারা জমি লীজ দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাবে এবং প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে কোন শেয়ার বিক্রি না করাই ভালো। কেবল সুদবিহীন ঋণ নেবে। শেয়ার বিক্রয় করলে অবশ্যই নিঁখুত হিসেবের জন্য স্পেশাল টীম তৈরি করতে হবে।
৯। শ্রমিকরাও পার্সেন্টেজ পাবে না, স্বাভাবিকভাবেই। এমনকি যদি কৃষিজমির মালিকও শ্রমিক হিসেবে যোগ দেয়। তার জমি তো তার থাকবে না। শ্রমিককে তার প্রাপ্য দিতে হবে। এ হিসেবও প্রাথমিক হিসেবের অন্তর্ভুক্ত হবে।
এ প্রকল্পের অন্যান্য দিক __
১।ধীরে ধীরে অনেক গবেষণাগারও তৈরি হতে পারে। এর ফলে আল্লাহর সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে মানুষ আরো বেশি করে জানতে পারবে।
২। মসজিদ তৈয়ার হবে কৃষিক্ষেত্রের আশেপাশেই। মুসলমান শ্র্মিকরা বাধ্যতামূলকভাবে জামাতে নামাজ পড়বে।অর্থাৎ শ্রমনিয়োগের শর্ত হচ্ছে, শ্রমিক নির্দিষ্ট পরিমাণ শ্রম দেবে এবং নামাজ পড়বে জামাতে। এতে দ্বিধার কোন অবকাশ নেই কারণ নামাজ আল্লহর পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক এবং কৃষিক্ষেত্র , এ থেকে প্রাপ্ত লাভ, শ্রমশক্তি, সুযোগ, সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা আল্লাহ প্রদত্ত। এতে নামাজ কায়েম হবে, আর নামাজ কায়েমের এ কৃতিত্ব উদ্যোক্তার।
অন্যদিকে, নামাজী শ্রমিকদল দিয়ে কি পরিমাণ লাভ আসতে পারে তা শুধু চোখে দেখারই অপেক্ষা।
৩। দেশের আনাচে কানাচে জমি খুঁজে প্রকল্প আলাদা আলাদাভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন জমির জন্য ভিন্ন ভিন্ন হিসেবাগার থাকবে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে।
৫। যে কোন সৎ ব্যক্তিও মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে কেবলমাত্র একটি এলাকা নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেন। এর জন্য দরকার সদিচ্ছা ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং পরোপকারের নির্ভুল ইচ্ছা।
আরো অন্যান্য দিক __
১। এর সফল বাস্তবায়ন একমাত্র আল্লাহভীরু একজনই করতে পারেন।
২। প্রকল্পে সুদের দূর্গন্ধ থাকলে প্রকল্প মাঠে মারা যাওয়ার জন্য মাত্র কয়েক বছরের অপেক্ষা।
৩। বিশ্বাসভঙ্গ, শোষণের নিয়ত থাকলেও স্বাভাবিকভাবে এর বাস্তবায়নের কোন আশা করা যাবেনা।
৪। মসজিদগুলোতে নিয়মিত দাওয়াতী দলের আনাগোনা রাখতে হবে। এর ফলে_
ক... শ্রমিকদের সমস্ত নেক আমলের সওয়াব উদ্যোক্তা পাবেন।
খ...শ্রমিকদের কাজে আন্তরিকতা তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহ।
গ...শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
ঘ...শ্রমিকদের পারস্পরিক সুসম্পর্ক থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
ঙ...শ্রমিক সম্পর্কিত যে কোন ফেৎনা থেকে বাঁচা যাবে, ইনশাআল্লাহ।
চ...শ্রমিকদের কাজে এখলাস তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহ।
ছ... উদ্যোক্তা প্রকৃত কল্যাণকামী (শ্রমিকদের, সুতরাং বিশাল জনগোষ্ঠীর আখিরাতের) হিসেবে পরিচিত হবেন।
৫। পরবর্তীতে শ্রমিকদের কয়েকটি দল তৈরি করে সমস্ত শ্রমিকের পক্ষ থেকে সারা বছরই কোন না কোন দলকে আল্লাহর রাস্তায় রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে আল্লাহর সাহায্য বিশেষভাবে আসার সম্ভাবনা বেশি।
এ লেখার সমস্ত সঠিক কথা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সমস্ত বেঠিক শয়তান ও আমার পক্ষ থেকে। আল্লাহ মাফ করুন। আল্লাহ আমাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা দান করুন এবং আমাদের এখলাসের সাথে কল্যাণকামী হবার তৌফিক দিন। আমীন।