Friday, September 28, 2018

জাহিলিয়াতের জ্ঞান



অনেকদিন ধরেই কত কিছুই না লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু লিখার উপকরণ কতই না দূরে দূরে থাকে। কতদিন পর আল্লাহ তৌফিক দিচ্ছেন কিছু একটা লিখার, তাও মনে কত কৃত্রিমতা।

সিরিয়া নাশীদ শুনে কয়টা দিন ধরে মনটা একটু একটু না ভালো লেগে থাকে। প্রাচীর বইটা পড়ছি। বইটার ইন্ট্রোডাকশন দিতে গিয়ে অনুবাদক বলেছেন, অন্যদের লিখা যদি কানে বাজে তবে কারাগারের মুসলিম ভাইদের কথা হৃদয়ে গিয়ে বাজে। কে জানে, হয়তো আসলেই তাই। তারিক মেহান্নার কথা পড়ছি। ভাবতে অবাক লাগে, কত গভীর গভীর চিন্তা এই কারাগারে বসে তাঁরা করতে পারেন। এক একটা আয়াত যা সবসময়ই সাধারণভাবে পড়ছি বা শুনছি, তার কত তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ, চিন্তার কত খোরাক তারা বের করে লিখছেন। বাস্তবিকই, ক্বুরআন কত বড় মোজেযা, কত গভীর চিন্তাভাবনার উৎস। এসব কথা তো কবে থেকেই জানি। তবে বাস্তবে তার সামান্য একটু ছোঁয়া মনে হয় এই লেখাগুলো থেকে পেলাম। খুব সম্ভব, এটা আমাদের সেই আত্মত্যাগী ভাইদের আত্মত্যাগের পুরস্কার। তারা কারাগারে থেকেও যে মুক্ত, আর আমরা মুক্ত থেকেও যে কারাগারে - এই লিখাগুলোই তার যথেষ্ট প্রমাণ। এখন এই কথাও আরেকটু পরিষ্কার করে বুঝে আসে যে, দুনিয়া কত বড় কারাগার।

যাই হোক, ক্বুরআন এবং আপনি পর্ব ০৯ তে তারিক মেহান্না অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় উল্লেখ করেছেন। ইসলাম পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার জন্য একজন মানুষের 'জাহিলিয়াতের জ্ঞান' থাকা অনেক জরুরী। বিষয়টা অত্যন্ত চমকপ্রদ। ঠিক এই বিষয়টা নিয়ে আমি মাঝে মাঝেই চিন্তা করি। আমার অভিজ্ঞতা হল, কারো যখন পাপকাজের সাথে সখ্যতা থাকে তারপর সে যখন ইসলামকে বুঝে শুনে পাপকাজ থেকে আন্তরিকভাবে তাওবা করে তার পরবর্তী জীবন হয় আন্তরিক একটা ইসলাম আদর্শ সমৃদ্ধ জীবন । এই নমুনা যেমন আছে একজন কাফেরের ইসলাম গ্রহণ পরবর্তী জীবনে, একইভাবে ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ মুসলিমের ইসলামের দিকে ফিরে আসার পরের জীবনে। অন্যদিকে, এই অভিজ্ঞতাও আমার আছে, কোন কোন পরিবারের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি, যে কোন একটা পরিবার যদি শুরু থেকে ইসলামের উপর পরিচালিত হয়, তার সদস্যদের মধ্যে ইসলামের বুঝ মনে হয় যেন (একান্ত আমারই মনে হয়, আল্লাহ মাফ করুন) একটু অসম্পূর্ণ থাকতে পারে । যেমন তাদের মধ্যে হয়ত জাহিলিয়াতের বিষয়াবলির দিকে আগ্রহ দেখা যায়। হয়ত মাদ্রাসায় পড়েছে, বা পরিবারে ইসলামের বিষয়াবলির যথেষ্ট আলোচনা হয় তারপরও সাধারণ শিক্ষা, সেই সার্টিফিকেট, ফেসবুক বা ইন্টারনেটের মত বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ আছে, সেসবকে কিছুটা হলেও উঁচু চোখে দেখে। অন্যদিকে যারা সাধারণ শিক্ষায় পড়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয়েছে- তাদের অনেককেই হয়ত দেখা যাবে নিজের সন্তানদের মাদ্রাসায় দিবার ফিকির করছে, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়েছে, ইন্টারনেটের সাথে সম্পর্ক কমিয়ে বা বন্ধ করে দিয়েছে।

এখন গতি কি সেদিকেই নিয়ে যাবে, এই মাদ্রাসা পড়ুয়া সন্তান বড় হয়ে নিজের মূল্য অনুধাবন করতে পারবে? জাহিলিয়াতের বিষয়ের প্রতি তার ঘৃণা সৃষ্টি হবে কি?

আলহামদুলিল্লাহ, প্রাপ্ত সম্পদের মূল্য বুঝে এমন অনেক সূর্যসন্তানের কথা ইতিহাসেও পাওয়া যায়, এখনও। কিন্তু বিপরীত নমুনাও চোখের সামনে দেখতে পাই, সংখ্যাটা খুব কম নয় ।

কিন্তু কোন জিনিস এই মাদ্রাসা পড়ুয়া সন্তানকে বা দ্বীনি পরিবেশে বড় হওয়া এই সন্তানকে এই দ্বীনি পরিবেশের, তার অর্জিত ইলমের , তার বুকে রক্ষিত ক্বুরআনের মর্যাদা বুঝাতে পারবে? যেমনভাবে একজন জাহিল আগ্রহ করে ক্বুরআন শিখে তার মূল্য দেয়, অন্তত তেমনভাবে দেবে? মনে হয়, এর উত্তর এখানেই। যখন কেউ জাহিলিয়াতের আনাচে কানাচে সম্পর্কে জেনে ফেলবে, সেগুলো তার মনে আর কোন আগ্রহই জন্ম দেবে না। তখন সে নিজের মর্যাদা, নিজের প্রাপ্ত সম্পদের মর্যাদা ইনশা আল্লাহ বুঝতে পারবে। বাকি হিদায়াত তো আসলে আল্লহর পক্ষ থেকে।

যেমন সাহাবীরা ছিলেন। তারা জাহিলিয়াতের মাঝে ডুবে ছিলেন। তার ভিতর থেকে ভিতর পর্যন্ত তারা চিনে ফেলেছিলেন। তারপর যখন ইসলাম তাঁদের জীবনে এলো, তারা তা বুঝে নিলেন এবং নিঃসংকোচে জাহিলিয়াতের আবর্জনা থেকে নিজেকে তুলে এনে ইসলামের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে গেলেন। সম্ভবত এভাবেই বর্তমান হিন্দু-খ্রিস্টান থেকে কনভার্ট হওয়া মুসলমানরা এত মজবুত হয়। এভাবে জাহিলিয়াতের জীবন যাপন করা মুসলমান যখন ফিরে আসে, তাঁদের আমলী জীবন বানাবার আগ্রহও ঈর্ষা করার মতন হয়।

এ কারণে হয়তো উচিত, সন্তানদেরকে শুধু দ্বীনি শিক্ষা, দ্বীনের ফজীলত শিক্ষা দেওয়া নয়; পাশাপাশি আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নোংরা আবর্জনা দূর্গন্ধময় অনৈসলামিক বিষয়গুলোর স্বরূপ_ইসলামের চোখে হোক বা একান্ত দুনিয়াবীভাবেই_চিনিয়ে দেওয়া, যাতে এসব সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টি হয়। নিজে থেকে সরে থাকার উদ্যম থাকে।

অন্ধকার চিনি বলেই তো আলোর এত মূল্য। দুনিয়াকে যত চিনব, বুঝব; দ্বীনের মূল্য আমার কাছে ততই বাড়বে। মূর্খতাকে যত চিনছি, বুঝছি; জ্ঞান ততই প্রিয় হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ জাহিলিয়াত কে চিনে নেব তার ভিতর পর্যন্ত; আর যাতে কোন আগ্রহই বাকি না থাকে, যাতে দ্বীন আমার কাছে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়তে থাকে, যাতে প্রিয় থেকে প্রিয় হয়। ওয়ামা তাওফীক্বী ইল্লা বিল্লাহ।

Saturday, September 15, 2018

নিরাপদ সড়ক চাই

(নিরাপদ সড়ক চাই  আন্দোলনের সময় লিখেছিলাম।)

ঢাকার সড়কগুলোর আশেপাশে দাঁড়ি-টুপিওয়ালাদের বেশি করে কেন দেখা যাচ্ছে না? এটা কি চোখের ভুল না ক্যামেরার ফোকাসের ভুল?
হে দ্বীনের বুঝওয়ালা, হে প্রাক্টিসিং মুসলিম,  হে দায়িত্ববোধসম্পন্ন দাঈ, হে কাশ্মীর-ফিলিস্তিন-আফগানিস্তানের যুদ্ধে নেমে পড়তে প্রাণ আনচান করা মুজাহিদ ভাই, আপনি এখন কোথায় হারিয়ে গেলেন? নিরাপদ সড়ক কি কেবল সাধারণ নাগরিক অধিকার? এটা কি মনুষ্যত্বের দাবি না? এটা কি মুসলমানদের প্রাণের দাবি নয়? যারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, তারা কি মুসলিম উম্মাহর অংশ না? তাঁদের প্রাণ হারানোয় কি আপনার উম্মাহ-দেহে ব্যথা অনুভব করছেন না? মুসলমানের জান-প্রাণ, সময় বাঁচাতে সাহ্যয্য করা; এটা কি মুসলমান হিসেবে আপনার কর্তব্য না? আপনার সামর্থ্যের কাছে কি এটা সাধারণ জনগণের হক না যে, তারা একটা নিরাপদ সড়ক পাবে?
এটা তো কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়, কোন দলীয় ব্যাপার নয়, এখানে প্রতিপক্ষ নেই। আপনাদের উচিত ছিল , বহু আগেই নেমে পড়া। তাহলে হয়ত সড়ক অনেক আগেই নিরাপদ হত, আপনার উসিলায় আল্লাহ হয়ত অনেক প্রাণ বাঁচিয়ে দিতেন দুর্ঘটনা হতে, আপনার উসিলায়। আপনি দেরি করেছেন, নামেননি। আল্লাহ নামিয়ে দিয়েছেন আরেক দলকে। যেখানে আপনি হতে পারতেন, সেখানে আরেক দল নেমে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ তাদের পূর্ণ হিদায়াত দিন, তাদের মকবুল করুন। কিন্তু আপনার তো উচিত ছিলো, তাদের এরকম পদক্ষেপের যাতে দরকারই না পড়ে। তারা যাতে নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে বরাবর যাতায়াত করতে পারে। চোখের সামনে কোন মৃত্যু তাদের দেখতে না হয়। হাত কেটে 'We Want Justice' লিখে দেখাতে না হয়।
হ্যাঁ, এখন তারা দেখিয়ে দিয়েছে। এখন আর আপনার সামনে কোন যুক্তি নেই। তারা তাদের ক্ষমতা দেখিয়েছে, এবার আপনার পালা; এবার আপনি আপনার সামর্থ্য দেখাবেন। এবার দেখাবেন, দ্বীন কি প্র্যাক্টিকেল কিছু? দ্বীন কি ব্যাপক শান্তির কিছু? নাকি দ্বীন মানে মাদ্রাসা শিক্ষা , ব্যাক্তিগত আমল, তাবলীগ, দ্বীনি বার্তাবাহী স্ট্যাটাস, শেয়ার , বই লিখা-কিনা আর আক্ষেপ,ট্রল এটুকুই।
একটু দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু খুব বেশি নয়। আপনার ছোট ভাইয়েরা করে দেখিয়েছে, এবার আপনি চালিয়ে দেখান। তারা হয়ত খুব বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না, এত সুন্দর স্বস্তিদায়ক জিনিস হুজুগের খাতায় হয়ত চলে যাবে। কিন্তু আপনার দায়িত্ব, আপনার কর্তব্য; আপনি তা হতে দেবেন না। তারা হাল ধরেছে, এবার আপনি পালে হাওয়া লাগিয়ে দিন। সাধারণ ছাত্রদের ক্ষমতা মানুষ দেখেছে , এবার দাঁড়ি-টুপিওয়ালা, দ্বীনি বুঝজ্ঞানসম্পন্ন আপনাকে আল্লাহ যে কিছু যোগ্যতা দিয়েছেন সেটা দেখান।  তরুণ ছাত্রদের কাছে যান, তাদের কাঁধে হাত রাখুন। তাদের বাহ্যিক সাপোর্ট দিন।
আপনার কি মনে হয়? সড়ক নিরাপদ করা দ্বীন প্রচার নয়? এক এক জামাত এক এক দিন ডিউটি দিন। মানুষকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সুযোগ করে দিন। একবার নয়, বারবার। তাদের অন্তরের দোয়া আপনার দিকে আসতে দিন। দ্বীন কি আর ইসলাম কি, তাদের জানিয়ে দিন বুঝিয়ে দিন। এভাবে দাওয়াত দিন তাদের, এভাবে।
অন্তত আপনার এলাকার সড়কের লিড নিয়ে নিন (তারপর হয়ত সড়কের নেমে পড়া তরুনদের লিডও দিতে হবে, যদি অন্য কেউ এগিয়ে না আসে) । এটুকু আপনাকে করতেই হবে। ছাত্ররা করেছে, আপনাকে করতেই হবে। এলাকার তরুণদের নিয়ে শূরা গঠন করে ফেলুন। মাশোয়ারা করুন। তারপর কাজে নেমে পড়ুন। আপনার এলাকার সড়ক যাতে অনিরাপদ না থাকে। যদি থাকে, তবে তা আপনারই অযোগ্যতার প্রমাণ। আল্লাহর জন্য করুন, আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন। মুসলমানদের জন্য করুন, আপনার 'ভাই' এর জন্য করুন, যে ভাই কাশ্মীর ফিলিস্তিন আরাকানে নয়, যে ভাই আপনার পাশে আপনার কাছে; তার জন্য করুন।
 আপনি কি এখনো মুজাহিদ হবার স্বপ্ন দেখেন?

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দিন।