নিজের উপর বিরক্ত লাগছে নিশির। কিছুতেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছে না। একবার ভালো করে বুঝাচ্ছে নিজেকেই , দেখো নিশি, এটা একটা মাখলুক। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া এটা কিছুই করতে পারবে না তোমার । তোমার কাছেই ঘেষতে পারবে না..
কিন্তু কাজ হচ্ছে না কেন যেন। ঈমানী কথাগুলো মাথায় ঠিক ক্রিয়া করছে না। অস্থির অস্থির লাগছে, শরীরে-মনে। শেষমেষ একটা ধমকই লাগালো নিজেকে , কি হলো তোমার! এভাবে অস্থির অস্থির করে কী লাভ হচ্ছে! এভাবে কি মৃত্যু ঠেকাতে পারবে? প্রস্তুতিটাও তো নিতে পারবে না..
নাহ..মৃত্যুভয় নয়, নিজেকে বলে নিশি। মৃত্যু, কবর, হাশর - কোনকিছুই তার মাথায় খেলা করছে না। তাছাড়া স্ট্যাটিসটিক্সও দেখেছে। তুলনামূলকভাবে মৃত্যুহার তো কমই..কিন্তু কেমন অদ্ভুত আতঙ্কগ্রস্ত লাগছে। যেন বাড়ির বাইরে মিলিটারি এসে দাঁড়িয়ে আছে, যে কোন মুহূর্তে ঢুকে সব তছনছ করে দেবে।
ভাগ্যিস OCD(১) নেই নিশির , থাকলেও কেবল অর্ধেকটা আছে। পুরোটা থাকলে আর দেখতে হতো না..তার মনে হচ্ছে, সবকিছুর মধ্যে করোনা কিলবিল করছে, জামা-কাপড়, বিছানা, ল্যাপটপ থেকে বইপত্র সবকিছুতে। কোনমতে ঠেকিয়ে রেখেছে নিজেকে..আর কীই বা করবে! এখন বুঝি রুম শাওয়ার করা শুরু করবে? কভি নেহি ম্যান..
*
হইচই শুনে বই থেকে মুখ তুলে তাকালো নিশি। একটা ছেলে পড়ে গেছে বোধহয় কাদায় পিচ্ছিল খেয়ে। তাই এতো আনন্দ । একটু অন্য ভাবনায় ডুবে গেল । এই তো ছেলেগুলো কী সুন্দর হাসছে, খেলছে! কে বলবে ওদের মধ্যে কারো করোনা নেই ? শুধু ছেলেরা? ঐ তো একপাশে খেলছে মেয়েরাও। এতক্ষণ কানামাছি খেলছিল, এখন অন্য খেলার প্ল্যান চলছে বোধহয়। ঐ যে ফ্রক করা মেয়েটা , এক ফাঁকে জামায় নাক মুছে নিলো। আর ছেলেগুলোও..ঘামছে দরদর করে , কেউ শার্টের হাতায় , কেউ বা রুমালে-গামছায় মুখ মুছছে।
একটা শ্বাস ফেলে আবার বইয়ে চোখ ফেরালো নিশি। আতঙ্ক কাটাতে শেষমেষ বইয়েরই আশ্রয় নিয়েছিলো সে। তারপর আছর হতেই উঠে এসেছে ছাদে। ইদানিং বই কেনাই হচ্ছিল না..মামীমার কাছে টাকাটা হাদিয়া পেয়ে ভাবলো , আচ্ছা এবার কিছু বইই কিনি! কী ভাগ্য ! হাতে এসে মাত্র পৌঁছল প্যাকেটটা , তার দুদিন পরেই কার্ফু শুরু! কী যে সৌভাগ্য - বইগুলোর দিকে চোখ পড়লেই মনে মনে শুকরিয়া করে নিশি।
কিন্তু বইয়ে মন টিকছে না এখন, চোখ উঠিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকাল। সব স্বাভাবিক, কোন আতঙ্ক নেই কোথাও; নেই শংকা , ভয় , সচেতনতা তো বহুদূর!
মনে মনে হাসলো নিশি। এখনই যদি কেউ মাঠটা এক চক্কর ঘুরে গলির এমাথা-ওমাথা একবার টহল দিয়ে কাশতে কাশতে ঘোষণা দেয় যে , আমি করোনা। ব্যস , পুরো এলাকা নিশ্চিত ফাঁকা হয়ে যাবে। আসলে কিছু কিছু মানুষের সচেতনতা মনে হয় সম্ভাবনার আপেক্ষিকতার ভিত্তিতে কাজ করে । আর সম্ভাবনা নির্ধারিত হয় কী দিয়ে? হয়তো প্রত্যক্ষ জ্ঞান দিয়ে । হয়তোবা এ কারণেই করোনার বিস্তার সূত্রের জ্ঞান তাদের ক্ষেত্রে কাজ করে না । তবে একজন কাশির রোগীকে নির্দ্বিধায় একঘরে করে দেয়। আবার সন্দেহযুক্ত কেউ মারা গেলে তাকে এলাকায় দাফন করতেই ভয়! আচ্ছা, করোনায় মারা গেলে কি লাশ থেকে ভুরভুর করে করোনা বের হয়?
এক স্তরের মানুষকে লজিক বুঝানো যায় না; কেউ বুঝেও বুঝতে চায় না, কারো তাওয়াক্কুল আ’লাল্লহ এখন লজিকের আওতায় নেই। শত বুঝালেও তাঁদের মস্তিষ্ক করোনা ট্রান্সমিশনের মতো ব্যাপার উপলব্ধি করতে পারে না । আচ্ছা, আল্লাহ তাদের সাথে কীভাবে মুআমালা করবেন? তাদের তাওয়াক্কুলকে গ্রহণ করে তাঁর প্রতি তাদের ধারণা অনুযায়ী ব্যবহার করবেন , নাকি তাদেরকে করোনা ছড়াবার উসিলা হিসেবে নির্ধারণ করবেন?
বই বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকালো নিশি। মনটা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসছে। পরীক্ষার আগের রাতে যদি কেউ আবিষ্কার করে তেমন কিছুই পড়া হয়নি অথবা মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করে দিলে , যেমনটা কেউ কেউ শান্ত হয়ে প্রস্তুতি নেয়..মনে মনে বললো - 'আল্লাহ! তুমি কতো পবিত্র! আমরা তো তোমাকে ছেড়ে আসবাব নিয়ে থাকতে ভালোবাসি, আসবাব নির্ভর হতে চাই! তুমি দেখিয়ে দিচ্ছো , আমরা আসবাব গ্রহণেও কতোটা অপারগ! ' - চোখ ভিজে গেলো নিশির - 'আল্লাহ, যেভাবে ভালোবেসে আমাদের তুমিমুখী করে নিচ্ছো, তৌফিক দাও সেভাবেই ভালোবেসে যাতে তোমাকে অন্তরে অনুভব করে নিই..আজীবন..'
*
মুগ্ধ হয়ে সাবান মাখা হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে নিশি। নাহ , মুগ্ধতা হাতের সৌন্দর্যের কারণে না; তার মাথায় একটু আগে শিখা যে দুআটা ঘুরছে তার কারণে । ভাবছে , কে এতো সুন্দর এতো উপযুক্ত দুআটা চালু করেছেন! কী করে তিনি জানতেন যে, হাত ধোয়ার সাথে এ ধরনের একটা দুআর প্রয়োজন হবে!(২)..
ট্যাপ ছেড়ে দিলো নিশি-
নিশির মন অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠছিল। ইশ! কতোদিন ধরে মন দিয়ে উযূটাও করা হয় না। এতক্ষণে মনে পড়লো , উযুর সাথে তো সমস্ত গুনাহও ধুয়ে চলে যায়। যত্ন করে বাকি উযু শেষ করলো নিশি। পা ধোয়ার সাথে সাথে খেয়াল হলো - আরে! উযুর পানি না শেফা! ধ্যাত ! বিরক্ত হলো নিশি নিজের উপরই, মগে উযু করার অভ্যাসটা এখনই করে ফেলতে হবে। আর 'পরে কখনো'র জন্য ফেলে রাখা যাবে না ।
মাগরিবের নামাযের পর সন্ধ্যার দুআগুলো নিয়ে বসলো নিশি । একইসাথে মুগ্ধতা, তৃপ্তি আর প্রশান্তি খেলা করছিল তার মনে। ধীরে ধীরে অর্থ মিলিয়ে মিলিয়ে উচ্চারণ করছিল সে -
মন ভরে যাচ্ছিলো নিশির..
*
রাতে শুতে যাবার আগে ভালোবাসা নিয়ে একবার বইয়ের স্তুপের একেবারে উপরে তাকায় সে। নাহ! ধূলিমলিন নয় কিতাবটা, দুদিনে একবার হলেও তো হাতে নেয় সে তাকে..
শুয়ে পড়লো নিশি। সকালের আগেই উঠে পড়তে হবে , তার সাথে গল্প করবে না?
হুম, মৃত্যুকে সে ভয় পায় না। কেউ যদি তাকে হাতে ধরে, পদে পদে তাঁর ভালোবাসাকে স্মরণ করিয়ে দেয় , তারঁ ডাকে সাড়া দিতে ভয় কি তার? কিন্তু, তাঁর চিঠিটা বুকে নিয়ে যেতে না পারলে বড় আফসোস থাকবে..
……..তথ্যসূত্রঃ…...
১.Obsessive-Compulsive Disorder (OCD)। শুচিবায়ু।
২.উযূর অঙ্গগুলো ধোয়া/মাসেহ করার দুআগুলো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে বুযুর্গানে দ্বীন এগুলো পাঠ করেছেন বা করেন।(আহকামে যিন্দেগী)
৩.অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট মঙ্গল ও বরকত কামনা করি এবং অমঙ্গল ও ধ্বংস থেকে পানাহ চাই।(আহকামে যিন্দেগী)
৪.অর্থঃ আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি তারই উপর নির্ভর করি। তিনি মহা আরশের অধিপতি। (সুরা তওবা: আয়াত-১২৯)
৫.অর্থঃ আল্লাহর নামে, যার নাম (স্মরণের) সাথে আসমান ও যমীনে কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।(আবু দাউদঃ ৫০৮৮)
৬.অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই। (মুসলিমঃ ২৭০৯)
৭অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি আমার দ্বীনদারি ও দুনিয়ার, আমার পরিবার ও সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় পরিণত করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হিফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের উসীলায় আশ্রয় চাই আমি নিচ থেকে হঠাৎ ধ্বংস হওয়া থেকে।(আবু দাউদঃ ৫০৭৪)
৮সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার। (বুখারী ৬৩০৬)
কিন্তু কাজ হচ্ছে না কেন যেন। ঈমানী কথাগুলো মাথায় ঠিক ক্রিয়া করছে না। অস্থির অস্থির লাগছে, শরীরে-মনে। শেষমেষ একটা ধমকই লাগালো নিজেকে , কি হলো তোমার! এভাবে অস্থির অস্থির করে কী লাভ হচ্ছে! এভাবে কি মৃত্যু ঠেকাতে পারবে? প্রস্তুতিটাও তো নিতে পারবে না..
নাহ..মৃত্যুভয় নয়, নিজেকে বলে নিশি। মৃত্যু, কবর, হাশর - কোনকিছুই তার মাথায় খেলা করছে না। তাছাড়া স্ট্যাটিসটিক্সও দেখেছে। তুলনামূলকভাবে মৃত্যুহার তো কমই..কিন্তু কেমন অদ্ভুত আতঙ্কগ্রস্ত লাগছে। যেন বাড়ির বাইরে মিলিটারি এসে দাঁড়িয়ে আছে, যে কোন মুহূর্তে ঢুকে সব তছনছ করে দেবে।
ভাগ্যিস OCD(১) নেই নিশির , থাকলেও কেবল অর্ধেকটা আছে। পুরোটা থাকলে আর দেখতে হতো না..তার মনে হচ্ছে, সবকিছুর মধ্যে করোনা কিলবিল করছে, জামা-কাপড়, বিছানা, ল্যাপটপ থেকে বইপত্র সবকিছুতে। কোনমতে ঠেকিয়ে রেখেছে নিজেকে..আর কীই বা করবে! এখন বুঝি রুম শাওয়ার করা শুরু করবে? কভি নেহি ম্যান..
*
হইচই শুনে বই থেকে মুখ তুলে তাকালো নিশি। একটা ছেলে পড়ে গেছে বোধহয় কাদায় পিচ্ছিল খেয়ে। তাই এতো আনন্দ । একটু অন্য ভাবনায় ডুবে গেল । এই তো ছেলেগুলো কী সুন্দর হাসছে, খেলছে! কে বলবে ওদের মধ্যে কারো করোনা নেই ? শুধু ছেলেরা? ঐ তো একপাশে খেলছে মেয়েরাও। এতক্ষণ কানামাছি খেলছিল, এখন অন্য খেলার প্ল্যান চলছে বোধহয়। ঐ যে ফ্রক করা মেয়েটা , এক ফাঁকে জামায় নাক মুছে নিলো। আর ছেলেগুলোও..ঘামছে দরদর করে , কেউ শার্টের হাতায় , কেউ বা রুমালে-গামছায় মুখ মুছছে।
একটা শ্বাস ফেলে আবার বইয়ে চোখ ফেরালো নিশি। আতঙ্ক কাটাতে শেষমেষ বইয়েরই আশ্রয় নিয়েছিলো সে। তারপর আছর হতেই উঠে এসেছে ছাদে। ইদানিং বই কেনাই হচ্ছিল না..মামীমার কাছে টাকাটা হাদিয়া পেয়ে ভাবলো , আচ্ছা এবার কিছু বইই কিনি! কী ভাগ্য ! হাতে এসে মাত্র পৌঁছল প্যাকেটটা , তার দুদিন পরেই কার্ফু শুরু! কী যে সৌভাগ্য - বইগুলোর দিকে চোখ পড়লেই মনে মনে শুকরিয়া করে নিশি।
কিন্তু বইয়ে মন টিকছে না এখন, চোখ উঠিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকাল। সব স্বাভাবিক, কোন আতঙ্ক নেই কোথাও; নেই শংকা , ভয় , সচেতনতা তো বহুদূর!
মনে মনে হাসলো নিশি। এখনই যদি কেউ মাঠটা এক চক্কর ঘুরে গলির এমাথা-ওমাথা একবার টহল দিয়ে কাশতে কাশতে ঘোষণা দেয় যে , আমি করোনা। ব্যস , পুরো এলাকা নিশ্চিত ফাঁকা হয়ে যাবে। আসলে কিছু কিছু মানুষের সচেতনতা মনে হয় সম্ভাবনার আপেক্ষিকতার ভিত্তিতে কাজ করে । আর সম্ভাবনা নির্ধারিত হয় কী দিয়ে? হয়তো প্রত্যক্ষ জ্ঞান দিয়ে । হয়তোবা এ কারণেই করোনার বিস্তার সূত্রের জ্ঞান তাদের ক্ষেত্রে কাজ করে না । তবে একজন কাশির রোগীকে নির্দ্বিধায় একঘরে করে দেয়। আবার সন্দেহযুক্ত কেউ মারা গেলে তাকে এলাকায় দাফন করতেই ভয়! আচ্ছা, করোনায় মারা গেলে কি লাশ থেকে ভুরভুর করে করোনা বের হয়?
এক স্তরের মানুষকে লজিক বুঝানো যায় না; কেউ বুঝেও বুঝতে চায় না, কারো তাওয়াক্কুল আ’লাল্লহ এখন লজিকের আওতায় নেই। শত বুঝালেও তাঁদের মস্তিষ্ক করোনা ট্রান্সমিশনের মতো ব্যাপার উপলব্ধি করতে পারে না । আচ্ছা, আল্লাহ তাদের সাথে কীভাবে মুআমালা করবেন? তাদের তাওয়াক্কুলকে গ্রহণ করে তাঁর প্রতি তাদের ধারণা অনুযায়ী ব্যবহার করবেন , নাকি তাদেরকে করোনা ছড়াবার উসিলা হিসেবে নির্ধারণ করবেন?
বই বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকালো নিশি। মনটা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসছে। পরীক্ষার আগের রাতে যদি কেউ আবিষ্কার করে তেমন কিছুই পড়া হয়নি অথবা মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করে দিলে , যেমনটা কেউ কেউ শান্ত হয়ে প্রস্তুতি নেয়..মনে মনে বললো - 'আল্লাহ! তুমি কতো পবিত্র! আমরা তো তোমাকে ছেড়ে আসবাব নিয়ে থাকতে ভালোবাসি, আসবাব নির্ভর হতে চাই! তুমি দেখিয়ে দিচ্ছো , আমরা আসবাব গ্রহণেও কতোটা অপারগ! ' - চোখ ভিজে গেলো নিশির - 'আল্লাহ, যেভাবে ভালোবেসে আমাদের তুমিমুখী করে নিচ্ছো, তৌফিক দাও সেভাবেই ভালোবেসে যাতে তোমাকে অন্তরে অনুভব করে নিই..আজীবন..'
*
মুগ্ধ হয়ে সাবান মাখা হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে নিশি। নাহ , মুগ্ধতা হাতের সৌন্দর্যের কারণে না; তার মাথায় একটু আগে শিখা যে দুআটা ঘুরছে তার কারণে । ভাবছে , কে এতো সুন্দর এতো উপযুক্ত দুআটা চালু করেছেন! কী করে তিনি জানতেন যে, হাত ধোয়ার সাথে এ ধরনের একটা দুআর প্রয়োজন হবে!(২)..
ট্যাপ ছেড়ে দিলো নিশি-
(৩)اللهم اني اسالك اليمن و البركة و أعوذ بك من الشؤم و الهلكة
নিশির মন অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠছিল। ইশ! কতোদিন ধরে মন দিয়ে উযূটাও করা হয় না। এতক্ষণে মনে পড়লো , উযুর সাথে তো সমস্ত গুনাহও ধুয়ে চলে যায়। যত্ন করে বাকি উযু শেষ করলো নিশি। পা ধোয়ার সাথে সাথে খেয়াল হলো - আরে! উযুর পানি না শেফা! ধ্যাত ! বিরক্ত হলো নিশি নিজের উপরই, মগে উযু করার অভ্যাসটা এখনই করে ফেলতে হবে। আর 'পরে কখনো'র জন্য ফেলে রাখা যাবে না ।
মাগরিবের নামাযের পর সন্ধ্যার দুআগুলো নিয়ে বসলো নিশি । একইসাথে মুগ্ধতা, তৃপ্তি আর প্রশান্তি খেলা করছিল তার মনে। ধীরে ধীরে অর্থ মিলিয়ে মিলিয়ে উচ্চারণ করছিল সে -
(৪)حَسْبِيَ اللَّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
(৫)بِسْمِ اللَّهِ الذي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ في الأَرْضِ وَلاَ في السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
(৬)أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِي وَمَالِي اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي وَاحْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي
মন ভরে যাচ্ছিলো নিশির..
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ
*
রাতে শুতে যাবার আগে ভালোবাসা নিয়ে একবার বইয়ের স্তুপের একেবারে উপরে তাকায় সে। নাহ! ধূলিমলিন নয় কিতাবটা, দুদিনে একবার হলেও তো হাতে নেয় সে তাকে..
শুয়ে পড়লো নিশি। সকালের আগেই উঠে পড়তে হবে , তার সাথে গল্প করবে না?
হুম, মৃত্যুকে সে ভয় পায় না। কেউ যদি তাকে হাতে ধরে, পদে পদে তাঁর ভালোবাসাকে স্মরণ করিয়ে দেয় , তারঁ ডাকে সাড়া দিতে ভয় কি তার? কিন্তু, তাঁর চিঠিটা বুকে নিয়ে যেতে না পারলে বড় আফসোস থাকবে..
……..তথ্যসূত্রঃ…...
১.Obsessive-Compulsive Disorder (OCD)। শুচিবায়ু।
২.উযূর অঙ্গগুলো ধোয়া/মাসেহ করার দুআগুলো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে বুযুর্গানে দ্বীন এগুলো পাঠ করেছেন বা করেন।(আহকামে যিন্দেগী)
৩.অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট মঙ্গল ও বরকত কামনা করি এবং অমঙ্গল ও ধ্বংস থেকে পানাহ চাই।(আহকামে যিন্দেগী)
৪.অর্থঃ আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি তারই উপর নির্ভর করি। তিনি মহা আরশের অধিপতি। (সুরা তওবা: আয়াত-১২৯)
৫.অর্থঃ আল্লাহর নামে, যার নাম (স্মরণের) সাথে আসমান ও যমীনে কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।(আবু দাউদঃ ৫০৮৮)
৬.অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই। (মুসলিমঃ ২৭০৯)
৭অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি আমার দ্বীনদারি ও দুনিয়ার, আমার পরিবার ও সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় পরিণত করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হিফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের উসীলায় আশ্রয় চাই আমি নিচ থেকে হঠাৎ ধ্বংস হওয়া থেকে।(আবু দাউদঃ ৫০৭৪)
৮সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার। (বুখারী ৬৩০৬)
No comments:
Post a Comment