#রৌদ্রময়ী_ফিলহাল_প্রকাশন_প্রতিযোগিতা_২০২২_ইং প্রযুক্তির ব্যবহার - অপব্যবহার
দেয়াল
১
ভাপা পিঠা তৈরি করেছেন মা। এই শীতের প্রথম পিঠা। মৌসুমের প্রথম পিঠার স্বাদ তো অবশ্যই প্রতিবেশীদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হয়! তো সেই সুবাদেই জারিনের অনেক দিন পর যাওয়া মৃদুলদের বাসায়।
আন্টির হাতে হাদিয়া দিয়ে টুকটাক কথা বলছিল জারিন। হঠাৎ ভেসে আসে একটা বাচ্চা কন্ঠ। খুব আদুরে গলায় বলছে - জানু! তুমি আর রাগ করে থেকো না। তুমি রাগ করে থাকলে আমি রাতে ভাত খাবো না! ...এই তো লক্ষ্মী জান! উম্মা...উম্মা...
অবাক হয়ে কন্ঠের সোর্স খুঁজল জারিন। পাঁচ বছরের মৃদুল সোফায় উপুড় হয়ে আছে; হাতে তার মায়ের ফোনটা, সেখান থেকেই ভেসে আসছে কথাগুলো। বিস্মিত হয়ে মৃদুলের কাছে গেল জারিন, ইউটিউবের কোন চ্যানেলের আপলোড করা ভিডিওই হবে। ভিডিওতে যে ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে তার বয়স টেনেটুনেও আট বছরের বেশি বলা যাবে না। যে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার বয়সও এমনই ৬-৭ বছর হবে।
পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, বোকা বাবা-মাদের অযত্নে ফেলে রাখা ছেলে-মেয়েদের টোপ বানিয়ে ব্যবসা করার জন্য এসব ভিডিও তৈরি করেছে। পাবলিকের অনুভূতি মজা পাবে যাতে, সেটাই তাদের টোপ হবে। আর বাকি অন্যান্য বিষয় - কচিমনগুলোর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করার ফুরসত বা দরকার কোনটাই এই ব্যবসায়ীদের নেই।
জিজ্ঞাসু চোখে মৃদুলের মায়ের দিকে তাকাল জারিন। তেমন অপ্রস্তুত মনে হলো না তাকে। একটু প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বললেন, এগুলো কী ভিডিও যে ইদানিং তৈরি করেছে! বাচ্চাগুলা কি পাকনা পাকনা কথা বলে। মজাই লাগে দেখতে!
জাহিন কী বলবে বুঝতে পারলো না। তবু কিছু বলার চেষ্টা করল, বলেও বুঝল এগুলো মৃদুলের মায়ের সেন্সের বাইরে দিয়ে চলে গেছে...
...
কয়েক মাস পর। জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল জারিন। নিচের দিকে চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। মৃদুলদের বাসাটা একতলা, সংলগ্ন উঠান আছে; উঠানের আরেক পাশে মৃদুলের জ্যাঠার পরিবার থাকে। উঠানটাতে সেদিন দৃশ্যপটে ছিল মৃদুল আর তার কয়েক মাস ছোট বয়সের চাচাতো বোন। যে দৃশ্য সে দেখল, তা প্রকাশ করার ভাষা জারিনের নেই। এ শুধু ইংলিশ সিনেমাতেই অহরহ দেখা যায়।
তারপর থেকে জারিন তাদেরকে দেখে মাঝেমধ্যে ভাবে। তাদের হয়তো ঐ 'বুঝ' নেই। কিন্তু মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যায়, কয়েক বছর পর ফুলের মত ফুটবে; আরো কয়েকবছর পর আগুন-সুন্দরী হবে। ছেলেটাকে দেখলেও বোঝা যায়, ধীরে ধীরে 'পুরুষের মত পুরুষ' হবে। তারপর কী হবে?
তাদের বাবা-মায়ের দ্বীনের সম্পূর্ণ বুঝ নেই। তাদের মধ্যে এখন পর্দা নেই, ছেলে-মেয়ে দুটো বড় হতে হতে পর্দার বুঝ কি আসবে?
যদি না আসে, এরা ঠিক এভাবেই বড় হতে থাকে; তারপর কী হতে পারে, সেটা ভাবতে গেলে জারিনের চিন্তাশক্তি স্থবির হয়ে আসে। সবচেয়ে ট্রাজেডিক ব্যাপার, এদের যদি সুবুদ্ধি থাকে, বড় হওয়ার পর সবকিছু বুঝে এবং স্থায়ী সম্পর্ক গড়তে চায় এস্টাবলিশমেন্টের আগেই - দুটো পরিবার থেকেই বাধা দেওয়া হবে। কী অদ্ভূত এই সমাজ!
২
ঘরের একপাশে একত্র হয়ে আড্ডা দিচ্ছিল সবাই। হঠাৎ ঘরের আরেক কোণ থেকে ভেসে আসে ৮ বছরের মিথিলার চিৎকার - এই তোমরা চুপ করো, চুপ করো। মিথিলার আওয়াজে সবাই বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকাল। মিথিলা কম্পিউটারে দেখছিল কিছু একটা, এটেনশন সিক করার জন্য অহেতুক চিৎকার করছে।
কম্পিউটারের দিকে তাকাতেই তার এটেনশন সিকিং এর কারণ বোঝা হয়ে গেল সবার। নাহ, ফিল্মটা বাজে কিছু ছিল না; বাচ্চাদের উপযোগী এডভেঞ্চারাস একটা ফিল্মই ছিল। কিন্তু ইংলিশ ফিল্ম বলে কথা, হ্যাপি এন্ডিংটা যেন একটা কিসিং সিন ছাড়া জমেই না! এই সিনটাই মিথিলার এটেনশন সিক করার প্রেক্ষাপট।
কিন্তু তার ঠিক এই সময়ে এটেনশন চাওয়ার কারণ কি? কারণ হচ্ছে এটা যে একটা স্পেশাল সিন, এটা বোঝার মত বয়স বা নলেজ তারও হয়েছে।
মিথিলার পরিবার অশিক্ষিত ভ্রষ্ট না; বরং মোটামুটি রক্ষণশীল পরিবার। স্বভাবতই মিথিলার মা অপ্রস্তুত হয়ে তার দিকে তেড়ে গিয়ে বকাঝকা করলেন। তাতে কী, কম্পিউটার তো মিথিলা নিজে আনেনি, এই ফিল্মও নিজে আমদানি করেনি। সবাই জানে, এই ফিল্ম সে অসংখ্যবার দেখেছে এবং আরো অসংখ্যবার দেখবে।
৩
ফুপুর বাসায় এবার বেড়াতে যাবার পর একদিন শারীনাকে চুপিচুপি এক পাশে ডেকে নিল অর্ণব। বাসায় এমনিতেও তেমন কেউ ছিল না, কয়েকটা পিচ্চি-বাচ্চা ছাড়া। শারীনাকে পিসির রুমে নিয়ে দরজা আটকে দিল।
এগারো বছরের শারীনার বুক ধকধক করছিল। তাহলে কি এতদিনের আকাঙ্খা পূর্ণ হতে যাচ্ছে? চার বছর ধরে অর্ণবের প্রতি পুষে রাখা অনুভূতি কি আজ একটা আশ্রয় পাবে? হ্যাঁ, অবাক করা হলেও সত্যি, সাত বছর থেকেই সে পাশাপাশি বড় হয়ে ওঠা অর্ণবের প্রতি গভীর অনুভূতি লালন করছে। তাই আজকের মুহুর্তটা অবশ্যই তার কাছে বহু আকাঙ্খিত!
তাকে পিসির কাছে টেনে নিয়ে গেল তের বছরের অর্ণব। তারপর এমন দৃশ্য দেখালো যার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না শারীনা। তারপরও এগুলো তেমন ক্রিয়া করল না তার উপর। তার অস্তিত্ব-মন তো অন্য কিছু তে ডুবে রয়েছে।
অর্ণবের আগ্রহে পানি ঢালবে না বলে পিসিতে চলতে থাকা ফিল্ম নিয়ে টুকটাক প্রশ্ন করল তাকে শারীনা। এটা কি? ওটা কি? এটা এমন কেন হচ্ছে ইত্যাদি। অর্ণব আগ্রহ নিয়ে উত্তর দিল, কিন্তু সব উত্তরই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল শারীনার। সে শুধু সুযোগ পেয়ে মন ভরে তার প্রিয়কে দেখছিল, আর চোখের ভাষায় কিছু বুঝাবার চেষ্টা করছিল।
...
তারপর হয়ে গেছে অনেক বছর। শারীনা এখন অনেক বড় হয়েছে। সে দিনটার কথা হঠাৎ কোনদিন মনে পড়লে সে মনে মনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। সেদিন এর থেকে বেশি কিছু হয়নি। যদি হতো, কিছু স্মৃতি নিশ্চিত তাকে প্রেতাত্মার মত তাড়া করে বেড়াত।
তার চোখের ভাষা বুঝেছিল কিনা অর্ণব তা জানে না শারীনা। কিন্তু এতদিনে একটা কষ্টকর বাস্তবতা তাকে স্বীকার করে নিতে হয়েছে, ছেলেরা মনের অনুভূতির সংজ্ঞা থেকে অন্যকিছুর সংজ্ঞা দ্রুত বুঝে এবং বেশি বুঝে।
৪
প্রেতাত্মার মত করে যদি কাউকে কিছু তাড়া করে, তাহলে তার ভিকটিম সাথী। মাঝেমধ্যে কি করবে বুঝে না সে, মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে মন চায়। কেন এ ভুলটা করল, তা নিয়ে আজও নিজেকে বকাবাদ্য করে সে। বকাবাদ্য করে লাভ কি, মানুষের মন-মগজ-অনুভূতি কি মানুষের কথা মতো চলে?
দোষটা আসলে পুরোপুরি তারও ছিল না। এই তো গত বছরেরই কথা, ক্লাস এইটে তখন সে। এক খালার বাসায় গিয়েছে, আপি ভার্সিটিতে পড়ে। বেড়াতে গেলেই অনেক আনন্দ-ফুর্তি হয়, মজা হয় আপির সাথে। সেই আপিই একদিন একটা কার্টুনের নাম বলে তাকে জিজ্ঞাসা করল, এটা দেখেছিস? অনেক এডভেঞ্চারিং, দেখ মজা পাবি!
বাসায় থাকলে তো পড়াশোনার জন্য বাবা-মা তাকে তেমন কোনকিছুরই ফুরসত দেয় না। সময় নষ্ট হবে বলে মোবাইল তো দূর কি বাত, পিসিও দেয় না। সুযোগ পেয়ে তাই মজা করেই দেখছিল সাথী। এন্ডিং সিনটায় গিয়ে হয়ে গেল সমস্যা। সিনটা সেই যে মাথায় গেঁথে গেছে, আর তাড়াতে পারে না। সময়ে-অসময়ে যেন তাকে তাড়া করে বেড়ায়, বিরক্ত লাগে সাথীর। কিন্তু কী করবে বুঝে না।
শেষে বান্ধবী তৃণাকে একদিন বলেই ফেলল - দোস্ত, তোরও কি এমন হয়?
তৃণা শুনে বুঝতে পারছিল না, কী সমাধান দিবে। একটু ভয় দেখিয়ে গেলো সাথীকে - তোর এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা দরকার! কোন জিনিস কোথায় গিয়ে ঠেকে, কেউ বলতে পারে না!
ব্যস, এই বলে তৃণা তো খালাস। কিন্তু সাথীর হয়ে গেল বড় সমস্যা...
____
উপরের প্রতিটি ঘটনা জীবন থেকে নেওয়া, আমার নিজের জানা/শোনা/দেখা। হয়তো একটু প্রেক্ষাপট, চরিত্র পালটে দিয়েছি, কিন্তু মূল গল্পগুলো অবিকৃত।
সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে - এ ধরনের গল্পগুলো (এবং এর থেকে ভয়ানক গল্পও আছে) তৈরি হচ্ছে 'দ্বীনদার' বলে পরিচিত মানুষের ঘরে। যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই, তাদের কাছ থেকে এখনই খুব বেশি কিছু আশা করা কঠিন, তাদের ব্যাপারে আশা করা যায়, একদিন হিদায়াতের আলো যখন তাদের অন্তরকে আলোকিত করে দেবে, ইনশাআল্লাহ তাদের ছোট ছোট অবহেলাগুলো আর থাকবে না।
কিন্তু যখন 'দ্বীনদার'দের ঘরে এ ধরনের ঘটনা তৈরি হয়, তখন সেগুলো কতটা আশাপ্রদ হয়? তাঁরা হয়তো 'দ্বীনদার', কিন্তু তাঁদের সন্তানদের যেভাবে প্রশ্রয় দিয়ে, যে মানসিকতা দিয়ে বড় করে তুলছেন, ঘৃণ্য বিষয়গুলো যেভাবে তাদের কাছে সহজ করে দিচ্ছেন, এমনকি পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে তাদের জন্য দ্বীনকেই কঠিন করে দিচ্ছেন, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী করে এই দ্বীনের পতাকাবাহী হবে?
আমাদের প্রজন্ম এবং আমাদের অভিভাবকের প্রজন্মে রয়ে গেছে বড় ফাঁক। তাঁদেরকে তাঁদের বাবা-মা হয়তো খুব যত্ন করে বড় করেছিলেন; অনেকেই একটু রক্ষণশীল বা অভিজাত পরিবার থেকে গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের শিক্ষা। জীবনের আনাচে-কানাচে থাকা অনেক কলুষ থেকে তাঁদের পৃথিবী ছিল পবিত্র।
কিন্তু এই পৃথিবী তার যত মন্দ, যত কলুষতা, অপবিত্রতা হঠাৎ করে প্রকাশ করে দিয়েছে, যার অন্যতম মাধ্যম হয়েছে ইন্টারনেট। হঠাৎ খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে, হঠাৎ অনেক ফেতনা একসাথে প্রকাশিত হয়েছে; যেসব বিষয় তারা নিজেরা তাঁদের বাল্যকালে বা কৈশোরে চিন্তাও করতে পারতেন না, সেসব খুব সহজলভ্য হয়ে গেছে তাঁদের হাতে-গড়া কিশোর বা তরুণ-প্রাণের কাছে।
কিন্তু যে কারণেই হোক, তাঁরা এই পাল্টে যাওয়া দূষিত পৃথিবীটাকে ঠিক চিনে উঠেননি। এই প্রজন্মের সাথে এর বাবা-মায়ের গড়ে উঠেছে এক আজনবী সম্পর্ক। তাঁরা প্রায় ক্ষেত্রেই তাঁদের সন্তানদের বুঝাতে চান ঐভাবে, যেভাবে তাঁদের বাবা-মা তাঁদের বুঝাতেন। তাঁদের সন্তানদের সেভাবে চিনতে চান, যেভাবে তাঁদের বাবা-মায়েরা তাঁদেরকে চিনেছিলেন।
একই সাথে তাদেরকে 'একটু স্বাধীনতা' দিতে চান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের সময়টা বাঁচানোর জন্য। স্বাধীনতার সাথে যে নজরদারিতা প্রয়োজন, সেটাও তারা উপেক্ষা করে যান নিজেদের সময়-স্বল্পতার বাহানায়।
কিন্তূ কেন যেন তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেন না তাঁদের শৈশবের পৃথিবী আর তাঁদের কলিজাগুলোর পৃথিবীর ভিন্নতা! বুঝেন না নিজ হাতে কোনদিকে ঠেলে দিচ্ছেন! তারপর বুঝতে পারেন না, বলা ভালো বুঝতে চান না তাদের সমস্যাগুলো, তাদের চাহিদাগুলো। তাঁরা বুঝেন না যে, তাঁদের হাতে-গড়া প্রাণগুলো এমন সমস্যায় পড়েছে যে সমস্যায় তারা নিজেরা পড়েননি। তাঁরা বুঝেন না, সন্তানের ভাষা। বুঝেন না, কোন ভাষায় সন্তানের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে! বলা বাহুল্য, তাঁরা চানই না সমাধান করতে! অনেকেই মনে করেন, 'এগুলো কিছু না!' , অনেকেই সন্তানকে লক্ষ্য করে বলে উঠেন - 'আমরা কি এমন সময় পার করিনি? আমরা কি কখনো তোর বয়সী ছিলাম না? তাই বলে আমরা কি তোর মতো করেছি?'
অপরদিকে, ঠিক ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের ধারক হয়ে সন্তানদের অবাধ এই কলুষ দুনিয়ার কাছে উন্মুক্ত করে রেখেছেন। এমনকি নিজে সাজিয়ে-গুছিয়ে বিভিন্ন উসিলায় সন্তানকে অবাধ দুনিয়ার মুখোমুখি করে দেন। একটু স্বাধীন করে দিয়ে যে যার মতো করে তৃপ্তি প্রকাশ করেন, গর্ব করেন। তখন কেন যেন নিজেদের প্রশ্ন করেন না - 'আমরা কি এই ফেতনা গুলোর মুখোমুখি হয়েছি? আমাদের কচিমন কি কখনো এতো বিভ্রান্তি, এতো কষ্ট, পেরেশানিতে পড়েছিলো?'
এই বাবা-মাদের হাত জোড় করে বলতে ইচ্ছে হয়, দয়া করে আপনার সন্তানের প্রতি একটু সমব্যথী হোন। ভাইরাসের কাছে উন্মুক্ত করে রেখেছেন, আক্রান্ত করছেন, ভাল কথা; দয়া করে প্রতিষেধকও তৈরি রাখুন, আপনার মায়া না হলেও আপনার সন্তানের যদি কখনো বোধদয় হয়, অন্তত নিরাময়ের চেষ্টা যেন করতে পারে। তখন অন্তত বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।
আর দ্বীনের বাহক যারা, তারা কি ভাবেন? আপনার বাবা-মা দ্বীনের প্রতি যে ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছিলেন, অথবা আপনার রব আপনাকে দ্বীনের প্রতি নরম করে দিয়েছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন; সেই ভালোবাসা আপনার সন্তানের অন্তরে রোপণ করলেন না, করতে চাইলেন না; বরং দ্বীনের প্রতি একরকম বিতৃষ্ণ করে রাখলেন, হারামের সাথে খাপ খাওয়ার অভ্যাস চরিত্রে রোপণ করে দিলেন! একটু কি চিন্তা হয়?..
এমন দিন কি কখনোই আসবে না, যেদিন বাবা-মা-পুত্র-কন্যা সম্পর্কগুলোর কোন মূল্য থাকবে না। যেদিন একজন আরেকজনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ খুঁজবে! যেদিন শুকরিয়ার অনুভূতি কাজ করবে না, কাজ করবে নিজেকে ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচাবার তাগিদ!
বাবা-মায়ের হাত ধরে যাদের জীবন হয়েছিল ক্লেদাক্ত, দূষিত; তারা কি সেদিন বাবা-মাকে ক্ষমা করে দিয়ে শুকরিয়া জানাবে?
আমার মনে পড়ে যায় নায়লা নুযহাত আপুর ঐ কথাটা - 'অকালে বড় হয়ে যাওয়া বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে আগে বলা দরকার নাকি কখনোই বড় হতে না পারা অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে, ভেবে পাই না!'
---
শেষ করি একজন ভালো মায়ের গল্প দিয়ে। তাঁর ছেলেটাও কথা শিখবার আগে শিখে গিয়েছিল ডিজিটাল জগতের ভাষা। ইচ্ছেমতো গেইমস ডাউনলোড করতে পারত, এমনকি শুনেছি পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখতো। তার কচি চোখগুলো স্বাভাবিকভাবে ঢাকা পড়েছে ভারি পাওয়ারের গ্লাসের আড়ালে।
তার মা একদিন পিসির প্লাগ খুলে ফেললেন, ফোন বাজেয়াপ্ত করলেন। তারপর জীবনটা হয়তোবা বেশ পালটে গিয়েছিল। তার মায়ের ঐ কথাটা এখন কানে বাজে - 'আমার ছেলে আমার কাছে ফিরে এসেছে!'