একটা সময় ছিলো যখন নিষ্পাপ-সঙ্গ অর্থাৎ 'বাচ্চা-কাচ্চা' একরকম 'অপছন্দ' করতাম। কারণটা যথার্থ যুক্তিসঙ্গত ছিল(তখনকার হিসেবে) অর্থাৎ একনাগাড়ে কিছুক্ষণ পরপর কেঁউমেঁউটেঁউটেঁউ সহ্য করার মতো সহনশীলতা ছিল না। আর এগুলো ছিল নিখাদ 'কেঁউমেঁউটেঁউটেঁউ' ই। এর থেকে বেশি কিছু না। 
এখন হয়তো 'বয়স বেড়েছে'। মাঝেমধ্যে এক-আধটু উপভোগ করার চেষ্টা করি নিষ্পাপ-সঙ্গগুলো। শুধু উপভোগ না, কতকিছু আবিষ্কার করে ফেলি নিষ্পাপ-সঙ্গগুলোর আশ-পাশে থেকে থেকে। বরঞ্চ মনে হয় সঙ্গ হিসেবে অন্য অনেক কিছুর থেকে, অন্য অনেক সম্পর্ক থেকে, এই নিষ্পাপ-সঙ্গগুলো ভালো। যদি ভার হিসেবে না দেখে, 'জ্বালাতন' না ভেবে, একটু অন্যরকমভাবে দেখা সম্ভব হয়...একটু অন্যরকমভাবে চিন্তা করা সম্ভব হয়, তাদের এক একটা আচরণ, ভঙ্গি হয়তো এক একটা শিক্ষার ভান্ডার হয়ে দেখা দিবে।
যাক, বাচ্চাদের সবচেয়ে সুন্দর দুটো বিষয় হচ্ছে_আমার অনুভূতিতে_ভিজুয়ালাইজ করতে পারা এবং মনে রাখতে পারা। খাবার পর আহমাদকে হাত ধোয়াতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম - বলো তো, খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ না বললে কী হয়?
ভেবেছিলাম (যদিও ভাবা উচিত ছিল না) ভুলে গিয়েছে, কয়েক মাস আগে এগুলো মাথায় ঢুকানোর চেষ্টা করতাম, এখন নিশ্চয়ই মনে নেই...কিন্তু, চটজলদি উত্তর - শয়তান খেয়ে ফেলে! 
আমি অবাক, কিছুটা! তারপর ছোট ছোট নিষ্পাপ প্রশ্ন - 
-  আমি না খেলে কি শয়তান খাবে না?
-  না খাবে না, বিসমিল্লাহ বলে না খেলে তখন খেয়ে ফেলবে।
- বিসমিল্লাহ বলে খেলে কি শয়তান কানবে? [অর্থাৎ ভিজুয়ালাইজিং শুরু]
- হ্যাঁ, সবসময় বিসমিল্লাহ বলে খেতে থাকলে শয়তান কানবে। বলবে, আহমাদ খালি বিসমিল্লাহ বলে খায়, আমাকে খেতে দেয় না।
ঘুমাতে পাঠালাম। বললাম - যাও। বিসমিল্লাহ বলে ঘুমাবা। জোরে জোরে বলবা। তাহলে শয়তান তোমার সাথে ঘুমাতে পারবে না। 
অতএব জোরে জোরে 'আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া'। এবং রিপোর্ট - জোরে জোরে বিসমিল্লাহ বলছি।
- না হবে না, ঘুমানোর জন্য শুয়ে তারপর পড়তে হবে। (ঘুমানোর জন্য কিঞ্চিত বাইল) 
দুধ খেয়ে শুতে গেলো। জোরে জোরে দুয়া পড়বার আওয়াজ আবারও ভেসে এল কানে। 
ঘটালে এমন ঘটনা ঘটে। আমরা ঘটাই না বেখেয়ালিপনায়। বাচ্চারা নিষ্পাপ থাকে বলেই কী না, সত্যটা বললে ওরা দ্রুত ধরে নেয়। নেয় না কি? 
কিছুটা আক্ষেপ মিশ্রিত ভাবনা এসে ভিড় করে - কোন বড় মানুষকে বললে তো এই সত্যটা এতো সহজে গ্রহণ করতে পারতো না! নিজেই তো পারি না, যেকোন নতুন সত্যের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে, দ্রুত গ্রহণ করে নিতে! 
এর পিছনে একটা বড় কারণ আমার মনে হয় - ভিজুয়ালাইজ করতে না পারা। আমাদের দৃশ্যমান পৃথিবীর বাইরে যে আরেকটা পৃথিবী আছে, তা অনুভব করতে না পারা।
যতো বড় হতে থাকে, মানুষ তত বেশি সম্ভবত ভিজুয়ালাইজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ তাকে যা বলা হয় তা সে মনের চোখে দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যত নিষ্পাপ থাকে, যত ছোট থাকে, দুনিয়াকে যতটা কম চেনে, ততোটা বেশি হয়তো সে ভিজুয়ালাইজ করার ক্ষমতা রাখে।
হয়তোবা, মনের চোখে দেখতে পারার ক্ষমতা কতটুকু এটা হিসেব করে নিজেকে বিচার করা সম্ভব যে, নিজেকে দুনিয়াতে দুনিয়ার বাহ্যিক রূপে কতটা হারিয়ে ফেলেছি। আর এই নিষ্পাপ-সঙ্গগুলো দিয়ে হয়তো কিছুটা হলেও নিজের আসলটাকে অনুভব করা, খুঁজে পাওয়া সম্ভব!
 
No comments:
Post a Comment