Monday, October 17, 2022

বিবাহবিভীষিকা ও আমরা

 'বিয়ে কঠিন' - প্রসঙ্গে যে আলোচনাগুলো উঠে আসে তার প্রায় সবটা জুড়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের বিদআত, কনেপক্ষের বড় অংকের মোহরের দাবি, বরপক্ষের যৌতুক অথবা কন্যার রূপের দাবি, বাবা-মা এর বিভিন্ন কারণে অমত ইত্যাদি। স্বয়ং বিবাহকেই কীভাবে কঠিন হিসেবে অবিবাহিতা মেয়ের কাছে প্রতীয়মান থাকে সেটা সযত্নে বা অযত্নে অবহেলায় আলোচনা থেকে একরকম উহ্যই রাখা হয়। 
এ কাঠিন্যের ফল হচ্ছে অভিভাবক ও কন্যা দুপক্ষেরই উত্তম সময়ে বিবাহ থেকে নিবৃত্ত রাখা ও থাকা, তারপর সামগ্রিকভাবে কন্যার বিবাহ-পূর্ব বা পরবর্তী জীবনে এমন সমস্যায় পড়া যা কন্যার কোনভাবেই প্রাপ্য ছিল না। অথচ সঠিক সময়ে না সে বুঝতে পারে, না বুঝতে পারে তার অভিভাবক। অবশেষে যখন অনেক কিছু বোঝার সময় হয়ে যায়, তখন আর পিছিয়ে এসে পুনরাবৃত্তির সুযোগ থাকে না; শুধু আফসোস করাটুকু বাকি থাকে। 

- পড়াশোনা করে না তো, বিয়ের পর জামাইয়ের বাড়ি হাঁড়ি ঠেলবে গিয়ে। (বিয়ে করলে জামাইয়ের বাড়ি হাঁড়ি ঠেলাই হচ্ছে কাজ)
- রান্না শিখো না যে! শ্বশুরবাড়ী গিয়ে রান্না করে খাওয়াতে হবে না? (শ্বশুরবাড়ী গেলে রান্না করে খাওয়ানোটা অন্যতম কাজ, এজন্য বিয়ের আগেই রান্না শেখা দরকার)
- জামাই কি বসায় বসায় খাওয়াবে? (জামাইরা বসিয়ে খাওয়ায় না, কাজের বিনিময়ে খাওয়ায়)

আমরা (এ ধরনের কন্যারা) বড় হই বিয়ে সম্পর্কে এ ধরনের বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য শুনে শুনে। আমাদের পানিশমেন্ট থাকে - বিয়ে। যার সাথে পড়াশোনার সম্পর্ক হচ্ছে দুই পৃথিবী দূরত্ব প্রায়। কেউ এতোটা পানিশমেন্ট না দিলেও এসব উল্লেখ করতে ভুলে না -

- স্বামীকে মান্য করা ফরজ। অমান্য করা যায় না। (স্বামীর সাথে মূল সম্পর্কটাই হচ্ছে অর্ডার এন্ড ওবেই। মন না চাইলেও কষ্ট করে মানতেই হবে)
- সংসার বড় কঠিন পরীক্ষার জায়গা। 
- বিয়ে তো ছেলেখেলা না। অনেক দায়িত্বের বিষয়। 

আমরা বড় হতে হতে মন-মগজে এ কথাটাই খুব ভালোভাবে গেঁথে যায় যে, বিয়ে এমন একটা জিনিস যার সাথে কঠিন সংসার কঠিনভাবে জড়িত। সংসার কঠিন এক কারাগার, যাতে বিয়ে নামের এক বেড়ী পায়ে পরে ঢুকতে হয়। আর ঐ বেড়ীর অপরপ্রান্ত ধরা থাকে 'স্বামী'র হাতে, যে যখন যা ইচ্ছে অর্ডার করতে পারে, যেটা আমাদের ইচ্ছে না থাকলেও মানতে হবে। যদি না মানতে চাই, থাকবে আল্লাহর লানত। আর যেহেতু শ্বশুরবাড়ির খেদমত করলে স্বামী সন্তুষ্ট থাকবে, এ কারণে বিয়ের সাথে সাথে শ্বশুরবাড়ীর সাথে এডজাস্টমেন্ট এবং রান্না-বান্নাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য আফটার অল প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। 

কথাগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে যতোই সঠিক থাকুক, বাবা-মায়ের আদরে বড় হওয়া, দ্বীনের চর্চা থেকে একটু দূরে থাকা(ইভন দ্বীনের চর্চাযুক্ত ফ্যামিলিগুলোতেও দাম্পত্যের সৌন্দর্যের অংশটুকু সযত্নে আলোচনা থেকে উপেক্ষিত হয়), জীবনে-কিছু-একটা করতে চাওয়া কন্যার কানে সেগুলোকে মোটেই সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য মনে হয়না। তার মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, 'ইসলাম এতো কঠিন কেন?'। সাথে সাথে দাম্পত্য-কলহের সুর, স্বামীর আধিপত্যের সুর প্রতিনিয়ত তার কানে বেজেই যায়। বিয়েটাকে সে কোন অংশেই গ্রহণযোগ্য, অন্তত তার বর্তমান তারুণ্যের সুন্দর সময়ে গ্রহণযোগ্য কিছু বলে মনে করতে পারে না। 

সে মোটামুটি দৃঢ় শপথ নিয়ে নেয় যে, নিজের ভবিষ্যতটুকু সে কোনভাবেই এতো অনাকাঙ্খিতভাবে কাটাবে না। বলা বাহুল্য, এই কন্যাদের অভিভাবকেরাও গ্রহণযোগ্য দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য হয়তো খুব কমই দেখেছেন। তাই ভালোবাসা বশতঃই তারা কন্যার কানে সহজে বিয়ের কথা তোলেন না। তারা আমাদের সত্যিই ভালোবাসেন, তাই ইসলামপ্রদত্ত কন্যার অনুমতির অংশটুকু তারা ইগনোর করেন না, আমরা না চাইলে তারা চাপিয়ে বিয়ে বসিয়ে দেন না। 'একদিন তো স্বামীর বাড়ি যেতেই হবে, তখন তো চাইলেও অনেক কিছু করতে পারবে না', বিয়ে একেবারে দিবেন না এমনও তো ভাবতে পারেন না, তাই কয়েকটা বছর কন্যাকে কিছুটা নিজের মত করে কাটাতে দেন (হয়তো নিজের চাপা দেওয়া শখ-আহ্লাদের কথা মনে পড়ে যায়)। বিলাসী না হোক, নাজায়েজ না হোক, তাদের জায়েয শখ-আহ্লাদগুলো অপূর্ণ রাখেন না। 

বাবা-মার স্নেহ-আদরে থাকা আমরা স্বভাবতঃই একটা মোটামুটি আনন্দময় জীবন কাটাই। তাই বিয়ে আমাদের কাছে বিভীষিকারই একটা পর্যায়। যেখানে বাবা আমার পছন্দের জিনিসগুলো বাছাই করে আনেন, আমার কষ্ট হবে বলে মা অনেক কাজ থেকেই অব্যাহতি দেন, একটু আবদার করলে চা বানিয়ে দেন, আমাকে হাসতে দেখে খুশি হন; সে জীবন থেকে কষ্টকর বিবাহিত জীবনে পদার্পন করার কোন মানেই থাকে না আমাদের কাছে।

কেমিস্ট্রি-বায়োলজি পড়া, টুকটাক শখের কাজগুলো গুছিয়ে নেওয়া, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবার শখ মনে রেখে সোৎসাহে পড়াশোনা করে যাওয়া আমাদের কানে হঠাৎ যখন বাজে 'মেয়েদের জীবনে স্বামী-সংসারই আসল, সন্তান লালন-পালন করাই তাদের মূল দায়িত্ব' - আমরা আরেকটু বিতৃষ্ণ হয়ে উঠি। পড়ায় আরেকটু মন দিই, নিজ প্রতিজ্ঞায় আরেকটু দৃঢ় হই। 

এত ক্লান্তিকর সংসারে পদার্পণ করা থেকে ফোনে বেজে ওঠা টুং এর জবাবে ছোট করে আরেকটা টাং আমাদের কাছে ঢের সহজ। কেউ যখন বলে - 'এটা ফেতনার সময়, বিয়ে করে নাও। পবিত্র থাকবে, ভালো থাকবে।' - আমরা বক্তার পজিশন অনুসারে হয়তো ইগনোর থাকি, অথবা মুচকি হেসে এড়িয়ে যাই অথবা বিরক্তি প্রকাশ করি।

আমাদের বর্তমান জীবনে তো আল্লাহ অসন্তুষ্ট নন। আল্লাহ আমাদের কিছু আগ্রহ দিয়েছেন, আমরা সেই আগ্রহের চর্চা করি। বাবা-মায়েরা আমাদের উপর তো অসন্তুষ্ট নন, আমাদের ছোট সংসারে আমরা হাসিখুশি থাকি টুকটাক বাবা-মায়ের সাহায্য করি; আর আমাদের লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে যাই। এর থেকে সুন্দর জীবন আর কি হতে পারে? এ জীবন ছেড়ে 'বিয়ে' নামের শৃঙ্খল পায়ে পরে, স্বামী নামক আতঙ্ক গ্রহণ করে বাচ্চাধারণ করে পালার আইডিয়া আমাদের কাছে স্রেফ পাগলেরই প্রলাপ।

বিয়ে কি এবং কেন - এসব আমাদের জানার কোন প্রয়োজনই নেই। ঈমানের কম-বেশ অনুসারে, কখনো আমরা টুকটাক সম্পর্ক মেইনটেইন করি, কখনো আমাদের আভিজাত্যের বশে এসব থেকে দূরেই থাকি। তবে অন্তরের গহীন থেকে জানি, এখন না হোক পাঁচ-দশ বছর পর 'বিয়ে' নামক বিভীষিকা আমাদের গ্রহণ করতে হবে, তার জন্য ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিতে হবে। 

এভাবে গেঁথে দেওয়া বিরূপ মনোভাবের প্রভাব কি আমাদের দাম্পত্য জীবনে পড়বে না? 

Saturday, October 01, 2022

অভিভাবক ও আমাদের বিবাহ

 আমাদের জেনারেশনের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অভিভাবকরা বিয়ে নিয়ে কয়েক ধরনের জুলুম করে। দ্বীনের জ্ঞান নেই, তারা তো একরকম। আর দ্বীনিবোধ রাখা অভিভাবকেরা দ্বীনের নামে কয়েক ধরনের জুলুম করেন। 

প্রথমত, বিয়েকে তারা কঠিন, অনাকাঙ্খিত, যত-দেরিতে-হয়-ভাল এমন একটা বিষয় হিসেবে রাখেন। অনেকটা নিষিদ্ধ প্রথার মত। 
দ্বিতীয়ত, সন্তানের ১৬-১৭ বয়স থেকে যে অনুভূতিগুলো তৈরি হতে থাকে, সেগুলোকে একরকম ইগনোর করেন। 
তৃতীয়ত, এ অনুভূতিগুলোকে প্রপারলি হ্যান্ডেল করেন না।
চতুর্থত, অবশেষে সন্তান যখন নিজ থেকে অনুভূতি প্রকাশের জায়গা খুঁজে নেয়, তারা পিছনের কারণ রেখে নিজের মান-সম্মান, সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন ইত্যাদি নিয়ে হায়-আফসোস করতে থাকেন।
পঞ্চমত, এমন সময় বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট করেন, যখন দাম্পত্য জীবনে যে অনুভূতিগুলো সম্পর্কটাকে দৃঢ় করতে পারত সেগুলো একরকম হারিয়ে অধিকারবোধ প্রবল হয়েছে।
ষষ্ঠত, বিয়ের আগে দাম্পত্য জীবন, সংসার ইত্যাদি নিয়ে, এমনিভাবে বাচ্চা পালন ইত্যাদি নিয়েও কোন ধরনের শিক্ষাপ্রদানের ব্যবস্থা করেন না।
সপ্তমত, বিয়ের আগে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ব্যবস্থা করেন না, 'সবর' 'বিয়ে তো একটা পরীক্ষা' ইত্যাদির আড়ালে সব ঔচিত্য হারিয়ে যায়।
অষ্টমত, বিয়ের পর কোন সমস্যা হলে কেউ 'সবর' ও 'পরীক্ষা'র সবক দেন; কেউ বদনামে নেমে পড়েন। ভুলে যান যে, এ দাম্পত্য বিষয়ক সমাধানের জন্য হুযুর সা. এর আদালতে জায়গা ছিল, যেখানে প্রপারলি বিচার করা হত। শুধু 'সবর' এর সবক পড়ানো হত না।
আর যারা ডিভোর্সকে সমাধান ভেবে আদাজল খেয়ে লাগেন, তাদের কথা বাদ ই থাক। 
নবমত, দাম্পত্য জীবনের এই গ্যাঁড়াকল দেখে  বাকিরা যখন বলতে থাকে - 'আমার বিয়ের ইচ্ছা নেই', 'আমি ত্রিশ বছরের পর বিয়ে করব', 'পড়াশোনা শেষ করে নেই' ইত্যাদি, তখন তারা চুপ থেকে সহমত জানান। 

অভিভাবককে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া যেহেতু একেবারেই বেহায়াপনা; অতএব চুপ থেকে অনেকেই ত্রিশের কোঠা পার করে ফেলেন, 'তাকদীর' বলে সবকিছু মেনে নেন। আর ভিতরে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা প্রকাশ করা তো নিষিদ্ধ এবং লজ্জাজনক তাই প্রকাশ করেন না, এভাবে সবচেয়ে সুন্দর সময়টাকে একেবারে হারিয়ে ফেলেন। 

----

শুরু এবং তারপর

শুরুটা সুন্দরই থাকে। একজন সন্তান একটা সুস্থ সুন্দর শিক্ষিত পরিবারে গড়ে উঠতে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কালচারে বেহায়াপনা নেই, তাই ম্যারিটাল বিষয় বা অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে যদি কিছু কথা চালাচালি হয়, সেটা বড়দের সামনে হয় না, সমবয়সীদের মাঝে হয়। কিন্তু বড়দের সামনে হয়না মানে তার অস্তিত্ব নেই এমন নয়। একটা পরিবার যতো শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত হোক না কেন, একটা সমাজের রীতিনীতি যেমনই হোক,  এজন্য আল্লাহর নিয়ম থেমে থাকবেন না। তিনি যে নিয়মে মানুষকে ম্যাচুউরিটি দেন, সেভাবেই এখনো দিবেন। তাই একটা মেয়ের(ছেলেদের কথা আপাতত থাকুক, তাদের সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই) ১৬-১৭ বছর থেকেই কিছু অনুভূতির সৃষ্টি হতে থাকে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক, এটা অভিভাবকেরাও জানেন। সবাই জানে। 

সমস্যা হচ্ছে, যখন অভিভাবকেরা সম্পূর্ণ ব্যাপারটা ইগনোর করে যান। ব্যাপারটা এমন না যে, তারা বিয়ে দিয়ে দিবেন। তারা সম্পূর্ণ ব্যাপারটা সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু তারা করেন না, করেন না যে তার প্রমাণ হচ্ছে পরবর্তীতে হঠাৎ করে তারা কিছু অনাকাঙ্খিত সংবাদ পান। কী সংবাদ পান, সেটা কি সরাসরি বলতে হবে?

এই ঘটনাগুলো যদি শুধুমাত্র এক পরিবারে, এক যুগে একবার হঠাৎ ঘটতো তাহলে এটাকে এক্সেপশন ধরে নেওয়া যেত। রিপিটেডলি কোন ঘটনা ঘটলে তাকে আর এক্সেপশন বলা যায় না, তার সমাধানের জন্য ফিক্সড কোন উপায় খুঁজতে হয়। 

দ্বীনি ফ্যামিলিগুলোতে থেকেই আমরা সিনেমা-নাটক দেখার স্পেস পাই। সেগুলোতে কী কনটেন্ট থাকে অভিভাবকরা তা জেনেও না জানার ভান করেন। 'বিয়ে করব' বলা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ, কিন্তু হারাম কনটেন্ট দেখা, হারাম কনটেন্ট পড়া আমাদের জন্য নিষিদ্ধ নেই। আমরা যত্রতত্র যখন তখন চোখের পবিত্রতা হারাই, অন্তরের পবিত্রতা হারাই। এগুলো চোখে দেখা যায় না, তাই এগুলো আমাদের জন্য পারমিটেড; গোপনে রিলেশনে জড়িয়ে আবার ফিরে আসতে পারি, এটাও পারমিটেড (কোন কোন দ্বীনদার-বলে-পরিচিতদের মধ্যে তো প্রকাশ্য রিলেশন ই পারমিটেড)। কিন্তু হালাল সম্পর্কে জড়িয়ে জীবনটাকে পবিত্র করা, গতিশীল করতে চাওয়া আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। 

---

উপার্জনক্ষমতা

যে আল্লাহ পারস্পরিক অনুভূতির সৃষ্টি করেন, সে আল্লাহ কি এতটাই জুলুমকারী যে (একজন ছেলের ক্ষেত্রে) এভাবে অন্তত ৯-১০ বছর টেনে নেওয়ার পর (চাকরি পাবার পর)বিবাহের পারমিশন দিবেন? এতটাই কঠোর যে, অনুভূতিগুলো তৈরিও করবেন, আবার তিনি যেসব কাজ করতে অনুমতি দেননি সেসব করলে গোনাহও দিবেন (সাথে সাথে অভিভাবকদেরও দায়ী হিসেবে গোনাহ দিবেন এবং এই অবস্থায় ঐ সন্তানের মৃত্যু হলে তাকে অপরাধী হিসেবে শাস্তি দিবেন), আবার একই সাথে(২৫-২৬ বছর পর্যন্ত চাকরি পাবার আগ পর্যন্ত) বিবাহের অনপযুক্ত করে রাখবেন? 

কখনোই না। হতেই পারে না।
একটা ছেলে অবশ্যই অন্তত ২০-২২ বছরে (বাইরের দেশে তো আরো কমেই হয়) উপার্জনের সক্ষমতা রাখে। এটা সম্পূর্ণ অভিভাবকের জুলুম যে, তাকে ধীরে ধীরে অনেক বছর সময় লাগিয়ে প্রায় ৩০ এর কাছাকাছি পৌঁছার পর উপার্জনে সক্ষম করার প্রসেস চালানো হয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা যেমন হোক - পরিবর্তন যদি দ্বীনদারদের পক্ষ থেকে না হয় কোত্থেকে হবে? তারপর একজন দ্বীনদার ছেলে উপার্জন ছাড়া বিয়ে করতে চায় না, এটা তার পক্ষ থেকে ঠিক থাকুক অভিভাবকের পক্ষ থেকে এটা কেমন ন্যায় হলো? 
আল্লাহ কুরআনে সরাসরি বলেছেন - 

وَ اَنۡکِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡکُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِکُمۡ وَ اِمَآئِکُمۡ ؕ اِنۡ یَّکُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِهِمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ
[আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্ৰস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।]

আয়াতের তাফসীরে যাবার যোগ্যতা নেই। তবে কেউ চাইলে ভেবে দেখতে পারে, আল্লাহ কেন সরাসরি এ ওয়াদা করছেন? এটাই যদি উত্তম সিস্টেম হতো যে, একজন ছেলে প্রায় ২৭-২৮ এ পৌঁছে উপার্জনক্ষম হয়ে (স্বাভাবিক ডিফারেন্স রাখলে ২৩-২৪ বছরের কাউকে) বিয়ে করবে, তাহলে এই ওয়াদার কী প্রয়োজন ছিল? 

হাদীস তো প্রচুউউর। এগুলো এখানে উল্লেখ করলে অনেকেই ধৈর্যহীন হয়ে যাবেন। 

-----
পড়াশোনা

একটা কমন কথা হচ্ছে, বিয়ে দিলে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই...
এখানে আর কী বলব? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এমন জীবন কীভাবে কাম্য হয় যেখানে পড়াশোনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে রাখা হয়? যতো বয়স ই হোক না কেন, এটা কীভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব যে পড়াশোনাকে জীবনে খাটো করে দেখা হবে? অথচ, জীবন গড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের পড়াশোনা অবশ্যই চালু রাখা দরকার। এবং শিক্ষার কোন শেষ নেই। বিশেষ করে, দ্বীনদার ফ্যামিলি থেকে কীভাবে এ ধরনের কথা উঠতে পারে? 

যদি পড়াশোনা এমন হয়, যেটার ফলাফল, কল্যাণ অনেক ব্যাপক অন্তত সে ধরনের পড়াশোনাকে থামিয়ে রাখার তো মানেই নেই। [হ্যাঁ, কেউ যদি মনে করে আপাত-বৈরাগ্যের জীবনে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে জাতির জন্য প্রস্তুত করবে, সেটা ভিন্ন কথা; কিন্তু সেটা স্বাভাবিক উদাহরণ হতে পারে না]

এছাড়া আরেকটা কথা হচ্ছে, অনেকেই গবেষণামূলক পড়াশোনা, উচ্চতর জটিল পড়াশোনা করেন বিয়ের পর এমনকি সন্তানাদি হবার পর। তখন কীভাবে তা সম্ভব হয়?

-----
একটা শিক্ষিত পরিবারের পক্ষ থেকেই আশা করা যায় যে, তারা একটা নতুন জীবন শুরুর করার আগে ঐ নতুন জীবন সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা দিবেন যেন সন্তান নতুন পরিবেশে নতুন সম্পর্কগুলোকে সহজভাবে মেইনটেইন করতে শিখবে। এই শিক্ষা শুধু মাসআলাগত শিক্ষা না, ঠেকে শেখার শিক্ষা না, বরং সিস্টেমিক শিক্ষা যেন ঐ সন্তানের পরবর্তী জীবন নিয়ে ভীতি না থাকে। যেন এটা তার কাছে অন্ধকারে ঝাঁপ দেবার মত না হয়। 

তাহলে সম্পর্কগুলো কমপ্লিকেটেড হয় না, টেনশনের হয় না; সুস্থ-সুন্দর হয়। শুধু শিক্ষার কল্যাণে অনেক জটিল অবস্থা সৃষ্টিই হবে না, সমাধানের পর্যায় যাওয়া তো দূরে থাক। 

একটা বড় ব্যাপার হলো, এমন পরিবেশে দেবার নিয়ত করা এমন ভার চাপানোর নিয়ত করা যা সন্তানের ক্যাপাসিটির বাইরে। যেমন, এখন সে ৭-৮ ঘন্টা পড়াশোনা করে; এমন জায়গায় দেওয়া যে ৭-৮ ঘন্টা রান্নাঘরেই থাকতে হবে। তাহলে এই বিয়ে কারই বা চাহিদা হবে, না অভিভাবকের, না সন্তানের। 

আমার পর্যবেক্ষণ থেকে (পর্যবেক্ষণে সম্পূর্ণ নির্ভুল দাবি করছি না) , বিবাহভীতির বেশিরভাগ পয়েন্ট তৈরি হয় এমন কিছু বিষয় থেকে যেগুলোর নির্দেশনা ইসলামে নেই। বেদ্বীন যারা প্রথা মেনে চলে তাদের কথা বাদ, দ্বীনদাররা দ্বীনের বাইরের এমন বিষয়গুলোর নাম 'দ্বীন' 'ইসলাম' দিয়ে বিয়েটাকে কঠিন বানিয়ে তারপর বিয়েকে আপাত-নিষিদ্ধ করে দেন। এ সার্কেল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে অনেকের জন্যই সহজ হতো। 

যাই হোক, মোদ্দাকথা হচ্ছে, বিয়ে যদি অনাকাঙ্খিত বিষয় হয় তবে সারাজীবনই এ থেকে দূরে থাকা হোক, দূরে রাখা হোক।
আর যদি এতে কল্যাণ আছে বলে মনে করা হয়, তবে এমন সময়ই এরেঞ্জ করা হোক, যখন কল্যাণ সর্বোচ্চ হবে, উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। যে সময়ে মানুষের স্রষ্টা, সম্পর্কের স্রষ্টা, আমাদের অভিভাবক আল্লাহ তা'আলা এবং পৃথিবীর সবচেয়ে স্বচ্ছ ব্যালেন্সড বুঝদার মানুষ হুযুর সা. সাজেস্ট করেছেন [অবশ্যই তৈরি করে]। আমাদের জেনারেশনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টাকে নষ্ট, অপবিত্র করার পথে দেয়াল তুলে দেওয়া হোক। কিছু সুন্দর সুন্দর কাম্য দৃষ্টান্ত তৈরি হোক।