আমাদের জেনারেশনের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অভিভাবকরা বিয়ে নিয়ে কয়েক ধরনের জুলুম করে। দ্বীনের জ্ঞান নেই, তারা তো একরকম। আর দ্বীনিবোধ রাখা অভিভাবকেরা দ্বীনের নামে কয়েক ধরনের জুলুম করেন।
প্রথমত, বিয়েকে তারা কঠিন, অনাকাঙ্খিত, যত-দেরিতে-হয়-ভাল এমন একটা বিষয় হিসেবে রাখেন। অনেকটা নিষিদ্ধ প্রথার মত।
দ্বিতীয়ত, সন্তানের ১৬-১৭ বয়স থেকে যে অনুভূতিগুলো তৈরি হতে থাকে, সেগুলোকে একরকম ইগনোর করেন।
তৃতীয়ত, এ অনুভূতিগুলোকে প্রপারলি হ্যান্ডেল করেন না।
চতুর্থত, অবশেষে সন্তান যখন নিজ থেকে অনুভূতি প্রকাশের জায়গা খুঁজে নেয়, তারা পিছনের কারণ রেখে নিজের মান-সম্মান, সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন ইত্যাদি নিয়ে হায়-আফসোস করতে থাকেন।
পঞ্চমত, এমন সময় বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট করেন, যখন দাম্পত্য জীবনে যে অনুভূতিগুলো সম্পর্কটাকে দৃঢ় করতে পারত সেগুলো একরকম হারিয়ে অধিকারবোধ প্রবল হয়েছে।
ষষ্ঠত, বিয়ের আগে দাম্পত্য জীবন, সংসার ইত্যাদি নিয়ে, এমনিভাবে বাচ্চা পালন ইত্যাদি নিয়েও কোন ধরনের শিক্ষাপ্রদানের ব্যবস্থা করেন না।
সপ্তমত, বিয়ের আগে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ব্যবস্থা করেন না, 'সবর' 'বিয়ে তো একটা পরীক্ষা' ইত্যাদির আড়ালে সব ঔচিত্য হারিয়ে যায়।
অষ্টমত, বিয়ের পর কোন সমস্যা হলে কেউ 'সবর' ও 'পরীক্ষা'র সবক দেন; কেউ বদনামে নেমে পড়েন। ভুলে যান যে, এ দাম্পত্য বিষয়ক সমাধানের জন্য হুযুর সা. এর আদালতে জায়গা ছিল, যেখানে প্রপারলি বিচার করা হত। শুধু 'সবর' এর সবক পড়ানো হত না।
আর যারা ডিভোর্সকে সমাধান ভেবে আদাজল খেয়ে লাগেন, তাদের কথা বাদ ই থাক।
নবমত, দাম্পত্য জীবনের এই গ্যাঁড়াকল দেখে বাকিরা যখন বলতে থাকে - 'আমার বিয়ের ইচ্ছা নেই', 'আমি ত্রিশ বছরের পর বিয়ে করব', 'পড়াশোনা শেষ করে নেই' ইত্যাদি, তখন তারা চুপ থেকে সহমত জানান।
অভিভাবককে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া যেহেতু একেবারেই বেহায়াপনা; অতএব চুপ থেকে অনেকেই ত্রিশের কোঠা পার করে ফেলেন, 'তাকদীর' বলে সবকিছু মেনে নেন। আর ভিতরে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা প্রকাশ করা তো নিষিদ্ধ এবং লজ্জাজনক তাই প্রকাশ করেন না, এভাবে সবচেয়ে সুন্দর সময়টাকে একেবারে হারিয়ে ফেলেন।
----
শুরু এবং তারপর
শুরুটা সুন্দরই থাকে। একজন সন্তান একটা সুস্থ সুন্দর শিক্ষিত পরিবারে গড়ে উঠতে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কালচারে বেহায়াপনা নেই, তাই ম্যারিটাল বিষয় বা অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে যদি কিছু কথা চালাচালি হয়, সেটা বড়দের সামনে হয় না, সমবয়সীদের মাঝে হয়। কিন্তু বড়দের সামনে হয়না মানে তার অস্তিত্ব নেই এমন নয়। একটা পরিবার যতো শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত হোক না কেন, একটা সমাজের রীতিনীতি যেমনই হোক, এজন্য আল্লাহর নিয়ম থেমে থাকবেন না। তিনি যে নিয়মে মানুষকে ম্যাচুউরিটি দেন, সেভাবেই এখনো দিবেন। তাই একটা মেয়ের(ছেলেদের কথা আপাতত থাকুক, তাদের সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই) ১৬-১৭ বছর থেকেই কিছু অনুভূতির সৃষ্টি হতে থাকে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক, এটা অভিভাবকেরাও জানেন। সবাই জানে।
সমস্যা হচ্ছে, যখন অভিভাবকেরা সম্পূর্ণ ব্যাপারটা ইগনোর করে যান। ব্যাপারটা এমন না যে, তারা বিয়ে দিয়ে দিবেন। তারা সম্পূর্ণ ব্যাপারটা সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু তারা করেন না, করেন না যে তার প্রমাণ হচ্ছে পরবর্তীতে হঠাৎ করে তারা কিছু অনাকাঙ্খিত সংবাদ পান। কী সংবাদ পান, সেটা কি সরাসরি বলতে হবে?
এই ঘটনাগুলো যদি শুধুমাত্র এক পরিবারে, এক যুগে একবার হঠাৎ ঘটতো তাহলে এটাকে এক্সেপশন ধরে নেওয়া যেত। রিপিটেডলি কোন ঘটনা ঘটলে তাকে আর এক্সেপশন বলা যায় না, তার সমাধানের জন্য ফিক্সড কোন উপায় খুঁজতে হয়।
দ্বীনি ফ্যামিলিগুলোতে থেকেই আমরা সিনেমা-নাটক দেখার স্পেস পাই। সেগুলোতে কী কনটেন্ট থাকে অভিভাবকরা তা জেনেও না জানার ভান করেন। 'বিয়ে করব' বলা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ, কিন্তু হারাম কনটেন্ট দেখা, হারাম কনটেন্ট পড়া আমাদের জন্য নিষিদ্ধ নেই। আমরা যত্রতত্র যখন তখন চোখের পবিত্রতা হারাই, অন্তরের পবিত্রতা হারাই। এগুলো চোখে দেখা যায় না, তাই এগুলো আমাদের জন্য পারমিটেড; গোপনে রিলেশনে জড়িয়ে আবার ফিরে আসতে পারি, এটাও পারমিটেড (কোন কোন দ্বীনদার-বলে-পরিচিতদের মধ্যে তো প্রকাশ্য রিলেশন ই পারমিটেড)। কিন্তু হালাল সম্পর্কে জড়িয়ে জীবনটাকে পবিত্র করা, গতিশীল করতে চাওয়া আমাদের জন্য নিষিদ্ধ।
---
উপার্জনক্ষমতা
যে আল্লাহ পারস্পরিক অনুভূতির সৃষ্টি করেন, সে আল্লাহ কি এতটাই জুলুমকারী যে (একজন ছেলের ক্ষেত্রে) এভাবে অন্তত ৯-১০ বছর টেনে নেওয়ার পর (চাকরি পাবার পর)বিবাহের পারমিশন দিবেন? এতটাই কঠোর যে, অনুভূতিগুলো তৈরিও করবেন, আবার তিনি যেসব কাজ করতে অনুমতি দেননি সেসব করলে গোনাহও দিবেন (সাথে সাথে অভিভাবকদেরও দায়ী হিসেবে গোনাহ দিবেন এবং এই অবস্থায় ঐ সন্তানের মৃত্যু হলে তাকে অপরাধী হিসেবে শাস্তি দিবেন), আবার একই সাথে(২৫-২৬ বছর পর্যন্ত চাকরি পাবার আগ পর্যন্ত) বিবাহের অনপযুক্ত করে রাখবেন?
কখনোই না। হতেই পারে না।
একটা ছেলে অবশ্যই অন্তত ২০-২২ বছরে (বাইরের দেশে তো আরো কমেই হয়) উপার্জনের সক্ষমতা রাখে। এটা সম্পূর্ণ অভিভাবকের জুলুম যে, তাকে ধীরে ধীরে অনেক বছর সময় লাগিয়ে প্রায় ৩০ এর কাছাকাছি পৌঁছার পর উপার্জনে সক্ষম করার প্রসেস চালানো হয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা যেমন হোক - পরিবর্তন যদি দ্বীনদারদের পক্ষ থেকে না হয় কোত্থেকে হবে? তারপর একজন দ্বীনদার ছেলে উপার্জন ছাড়া বিয়ে করতে চায় না, এটা তার পক্ষ থেকে ঠিক থাকুক অভিভাবকের পক্ষ থেকে এটা কেমন ন্যায় হলো?
আল্লাহ কুরআনে সরাসরি বলেছেন -
এছাড়া আরেকটা কথা হচ্ছে, অনেকেই গবেষণামূলক পড়াশোনা, উচ্চতর জটিল পড়াশোনা করেন বিয়ের পর এমনকি সন্তানাদি হবার পর। তখন কীভাবে তা সম্ভব হয়?
No comments:
Post a Comment