Thursday, February 20, 2025

ঐক্য-অনৈক্য-ডাইভারশন

 আমরা একটা টার্ম শুনে থাকি প্রায়ই। ‘ফোকাস ডাইভারশন’। অর্থাৎ, যদি কোন বিষয় থেকে জনতার মনোযোগ সরানোর প্রয়োজন পড়ে, তখন নতুন একটি ইস্যু তৈরি করে দেওয়া হয়। তাতে জনতার মনোযোগ মূল বিষয় থেকে কোন ইচ্ছেকৃতভাবে তৈরি করা ইস্যুতে চলে যায়, ফলে ঐ প্রকল্পগুলো আপসে কিছু কাজ করে ফেলতে পারে।

এটা হচ্ছে ইচ্ছেকৃত ফোকাস ডাইভারশন। তবে দৈনন্দিন জীবনে সবসময় আমরা যার মুখোমুখি হচ্ছি, তা অনেকটা অটোমেটিক। এই ডাইভারশন ব্যক্তি নিজে অবচেতনভাবে তৈরি করে, তবে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 


তো এই ‘ফোকাস ডাইভারশন’ যখন সম্ভব হয় না, বা তা প্রতিরোধ করা যায় - তখনই সম্ভবত ঐক্য গড়ে ওঠে। 


'ফোকাস ডাইভারশন' প্রতিরোধেরর চমৎকার উদাহরণ হলো - ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট। যখন কোটা আন্দোলন ‘জনতার ইস্যু’ হয়ে দাঁড়াল; তখন ডিজিটাল মিডিয়াগুলোর অবস্থা কেমন ছিল?


যদি সঠিক কথা বলা যায়, ডিজিটাল মিডিয়ার প্রতিটি অংশ - ইউটিউব, ফেসবুক, টেলি, টুইটারসহ সমস্ত মিডিয়া আক্ষরিক অর্থেই জুলাই-আগস্টের ঘটনা দিয়ে ‘ফ্লাডেড’ ছিলো। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তি, দ্বীনদার-কম দ্বীনদার-বেদ্বীন, চিন্তাশীল-ভাবুক, ফালতু লোক প্রত্যেকের প্রোফাইল, পোস্টস শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টের ঘটনা ও ঘটনার বিশ্লেষণ দিয়েই ভর্তি ছিল। দেশীয় তো বটেই, বৈশ্বিক ঘটনা প্রচার করার বিশেষ চ্যানেলগুলোও দেশের ঘটনায় সরে এসেছিল। অর্থাৎ, প্রত্যেকের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই ঘটনাগুলো, যা থেকে মুহুর্তের জন্যও কেউই অন্যদিকে মনোযোগ সরাতে চাচ্ছিল না।


এভাবে যে অভূতপূর্ব ডিজিটাল ঐক্য গড়ে ওঠে, তার ফলেই বড় একটি পরিবর্তন ঘটে যায়। সরকার পতন হয়। এ হলো ঐক্যের আল্লাহপ্রদত্ত শক্তি। 


ফিলিস্তিন বিষয়েও প্রায় একই বিষয় দেখা যায়। অক্টোবরের পর প্রথম প্রথম কত ধরনের ঘটনাই ঘটলো। পুরো বিশ্বের ফোকাসে ছিল ফিলিস্তিন। কিন্তু পরবর্তীতে ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞ একরকম রয়ে গেলেও বিশ্বের ফোকাসে এসেছে ডাইভারশন, প্রতিবাদ ও প্রতিবাদী কার্যক্রম কমে এসেছে বহুগুণে।


৫ আগস্টের ঠিক পরের সময়টা ফোকাস ডাইভারশনের চমৎকার উদাহরণ। এর আগ পর্যন্ত দেশের তো বটেই, বৈশ্বিক শক্তিগুলোরও সরকার পতনের দিকে বেশ মনোযোগ ছিল। 


৫ আগস্টের পরপর, যখন সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সময় ছিল নেতৃত্ব নির্বাচনের - ঠিক তখন পুরো দেশ ফোকাস সরিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল বিভিন্ন ইস্যুতে - আয়নাঘর, ক্যালিগ্রাফী-গ্রাফিতি, বিভিন্ন দলের আমলনামা, রাস্তা পরিষ্কার, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। প্রত্যেকটি নিজস্বভাবে গুরত্বপূর্ণ হলেও সময়ের দাবি ছিল গণভবনের দিকে ফোকাস ধরে রাখা। তারপর এই বিভক্তির মাধ্যমে যা হবার হলো।


গ 

রমাদান একেবারে সন্নিকটে। ঠিক এ সময়টাতে টাইমলাইন, ফিডে হালকা চোখ বুলালে কিছু ইস্যুজ নিয়ে বিক্ষিপ্ত আলোচনা চোখে পড়ে। 


রমাদান নিয়ে কমবেশি সকলে মগ্ন ছিল। এর মাঝে হঠাৎ উন্মোচিত হয় আলেপ কাহিনী। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে বহু আগে; আর প্রকাশিত হবার কথা ছিল বহু আগেই, যখন আয়নাঘরের ঘটনাগুলো আসছিল তখন বা পরপর।

৬ মাস পার হয়ে গেছে পতনের, এতদিনে আয়নাঘর দেখবার সুযোগ হলো সবার; মেয়েদের নিগৃহীত হবার ঘটনাগুলোও ঠিক এখনই প্রকাশ পাওয়া শুরু করলো, যদিও পুরুষদেরগুলো প্রকাশ পেয়েছে সেই কবেই। 

আয়নাঘর দ্বারা ফিড নতুন করে ‘ফ্লাডেড’ হচ্ছে। এদিকে ঠিক এ সময়েই রাসূলের প্রতি অবমাননা। শাতিমে রাসূল নিয়ে বিক্ষুব্ধ সকলে। হঠাৎ হঠাৎ নতুন কিছু উসকে দেওয়া আলাপ, উসকে দেওয়া গ্রেফতার… 


কিছু অংশ র‍্যাবকাহিনী, কিছু অংশ আলেপ, কিছু অংশ আয়নাঘর, কিছু অংশ শাতিমে রাসূল আর কিছু অংশ রমাদান নিয়ে মশগুল। অনেকেই আসন্ন বইমেলা নিয়ে ভাবছেন, কেউ বা রমাদানের বিভিন্ন প্রোডাক্ট সরবরাহ নিয়ে; চলমান এসব ইস্যুজে মন নেই অনেকেরই। 

...


অনৈক্যের এই ফিরিস্তির পর মনে ভাসে নেতৃত্বের একতার কথা।


ইস্যু আসছে, যাচ্ছে। সকলে নিমগ্ন, চিন্তিত অথবা বিক্ষুব্ধ, তবে ডাইভার্টেড। পরিশেষে সব আলাপ-আলোচনা, বিক্ষুব্ধতা কিছুটা অর্থহীনতায় ঠেকে। যদি সকল নেতৃত্ব এক হয়ে একটি বিশেষ ইস্যু নিয়ে সরব হতেন, জনমত প্রবাহিত হতো এক খাতে। হয়তো কোনকিছু নিয়ে একটা কিনারায় পৌঁছা যেতো।


No comments:

Post a Comment