Thursday, February 20, 2025

ঐক্য-অনৈক্য-ডাইভারশন

 আমরা একটা টার্ম শুনে থাকি প্রায়ই। ‘ফোকাস ডাইভারশন’। অর্থাৎ, যদি কোন বিষয় থেকে জনতার মনোযোগ সরানোর প্রয়োজন পড়ে, তখন নতুন একটি ইস্যু তৈরি করে দেওয়া হয়। তাতে জনতার মনোযোগ মূল বিষয় থেকে কোন ইচ্ছেকৃতভাবে তৈরি করা ইস্যুতে চলে যায়, ফলে ঐ প্রকল্পগুলো আপসে কিছু কাজ করে ফেলতে পারে।

এটা হচ্ছে ইচ্ছেকৃত ফোকাস ডাইভারশন। তবে দৈনন্দিন জীবনে সবসময় আমরা যার মুখোমুখি হচ্ছি, তা অনেকটা অটোমেটিক। এই ডাইভারশন ব্যক্তি নিজে অবচেতনভাবে তৈরি করে, তবে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 


তো এই ‘ফোকাস ডাইভারশন’ যখন সম্ভব হয় না, বা তা প্রতিরোধ করা যায় - তখনই সম্ভবত ঐক্য গড়ে ওঠে। 


'ফোকাস ডাইভারশন' প্রতিরোধেরর চমৎকার উদাহরণ হলো - ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট। যখন কোটা আন্দোলন ‘জনতার ইস্যু’ হয়ে দাঁড়াল; তখন ডিজিটাল মিডিয়াগুলোর অবস্থা কেমন ছিল?


যদি সঠিক কথা বলা যায়, ডিজিটাল মিডিয়ার প্রতিটি অংশ - ইউটিউব, ফেসবুক, টেলি, টুইটারসহ সমস্ত মিডিয়া আক্ষরিক অর্থেই জুলাই-আগস্টের ঘটনা দিয়ে ‘ফ্লাডেড’ ছিলো। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তি, দ্বীনদার-কম দ্বীনদার-বেদ্বীন, চিন্তাশীল-ভাবুক, ফালতু লোক প্রত্যেকের প্রোফাইল, পোস্টস শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টের ঘটনা ও ঘটনার বিশ্লেষণ দিয়েই ভর্তি ছিল। দেশীয় তো বটেই, বৈশ্বিক ঘটনা প্রচার করার বিশেষ চ্যানেলগুলোও দেশের ঘটনায় সরে এসেছিল। অর্থাৎ, প্রত্যেকের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই ঘটনাগুলো, যা থেকে মুহুর্তের জন্যও কেউই অন্যদিকে মনোযোগ সরাতে চাচ্ছিল না।


এভাবে যে অভূতপূর্ব ডিজিটাল ঐক্য গড়ে ওঠে, তার ফলেই বড় একটি পরিবর্তন ঘটে যায়। সরকার পতন হয়। এ হলো ঐক্যের আল্লাহপ্রদত্ত শক্তি। 


ফিলিস্তিন বিষয়েও প্রায় একই বিষয় দেখা যায়। অক্টোবরের পর প্রথম প্রথম কত ধরনের ঘটনাই ঘটলো। পুরো বিশ্বের ফোকাসে ছিল ফিলিস্তিন। কিন্তু পরবর্তীতে ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞ একরকম রয়ে গেলেও বিশ্বের ফোকাসে এসেছে ডাইভারশন, প্রতিবাদ ও প্রতিবাদী কার্যক্রম কমে এসেছে বহুগুণে।


৫ আগস্টের ঠিক পরের সময়টা ফোকাস ডাইভারশনের চমৎকার উদাহরণ। এর আগ পর্যন্ত দেশের তো বটেই, বৈশ্বিক শক্তিগুলোরও সরকার পতনের দিকে বেশ মনোযোগ ছিল। 


৫ আগস্টের পরপর, যখন সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সময় ছিল নেতৃত্ব নির্বাচনের - ঠিক তখন পুরো দেশ ফোকাস সরিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল বিভিন্ন ইস্যুতে - আয়নাঘর, ক্যালিগ্রাফী-গ্রাফিতি, বিভিন্ন দলের আমলনামা, রাস্তা পরিষ্কার, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। প্রত্যেকটি নিজস্বভাবে গুরত্বপূর্ণ হলেও সময়ের দাবি ছিল গণভবনের দিকে ফোকাস ধরে রাখা। তারপর এই বিভক্তির মাধ্যমে যা হবার হলো।


গ 

রমাদান একেবারে সন্নিকটে। ঠিক এ সময়টাতে টাইমলাইন, ফিডে হালকা চোখ বুলালে কিছু ইস্যুজ নিয়ে বিক্ষিপ্ত আলোচনা চোখে পড়ে। 


রমাদান নিয়ে কমবেশি সকলে মগ্ন ছিল। এর মাঝে হঠাৎ উন্মোচিত হয় আলেপ কাহিনী। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে বহু আগে; আর প্রকাশিত হবার কথা ছিল বহু আগেই, যখন আয়নাঘরের ঘটনাগুলো আসছিল তখন বা পরপর।

৬ মাস পার হয়ে গেছে পতনের, এতদিনে আয়নাঘর দেখবার সুযোগ হলো সবার; মেয়েদের নিগৃহীত হবার ঘটনাগুলোও ঠিক এখনই প্রকাশ পাওয়া শুরু করলো, যদিও পুরুষদেরগুলো প্রকাশ পেয়েছে সেই কবেই। 

আয়নাঘর দ্বারা ফিড নতুন করে ‘ফ্লাডেড’ হচ্ছে। এদিকে ঠিক এ সময়েই রাসূলের প্রতি অবমাননা। শাতিমে রাসূল নিয়ে বিক্ষুব্ধ সকলে। হঠাৎ হঠাৎ নতুন কিছু উসকে দেওয়া আলাপ, উসকে দেওয়া গ্রেফতার… 


কিছু অংশ র‍্যাবকাহিনী, কিছু অংশ আলেপ, কিছু অংশ আয়নাঘর, কিছু অংশ শাতিমে রাসূল আর কিছু অংশ রমাদান নিয়ে মশগুল। অনেকেই আসন্ন বইমেলা নিয়ে ভাবছেন, কেউ বা রমাদানের বিভিন্ন প্রোডাক্ট সরবরাহ নিয়ে; চলমান এসব ইস্যুজে মন নেই অনেকেরই। 

...


অনৈক্যের এই ফিরিস্তির পর মনে ভাসে নেতৃত্বের একতার কথা।


ইস্যু আসছে, যাচ্ছে। সকলে নিমগ্ন, চিন্তিত অথবা বিক্ষুব্ধ, তবে ডাইভার্টেড। পরিশেষে সব আলাপ-আলোচনা, বিক্ষুব্ধতা কিছুটা অর্থহীনতায় ঠেকে। যদি সকল নেতৃত্ব এক হয়ে একটি বিশেষ ইস্যু নিয়ে সরব হতেন, জনমত প্রবাহিত হতো এক খাতে। হয়তো কোনকিছু নিয়ে একটা কিনারায় পৌঁছা যেতো।


Saturday, November 02, 2024

সে বাস্তবতা, যার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই

খবর আসছে, ইথারে ভাসছে হাহাকার, কান্না। এমন কোন দিন আক্ষরিক অর্থেই পাওয়া যায় না, যেদিন অবৈধ হাতে কোন কোন না শাহাদাহর খবর পাওয়া যায়।

আজ হয়তো আপনার-আমার মতোই রাজনৈতিক আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বললেন, পরিবারের সাথে বন্ধুর সাথে জরুরী আলাপ শেষে ঘুমোতে গেলেন। অথবা বেঁচেই আছেন জীবন্মৃত হয়ে, বাঁচবার ইচ্ছে বা তাকিদ ততটুকুও কাজ করে না, যতটুকু কাজ করে শাহাদাহর প্রেরণা। বিশ্বাসঘাতক একা করে দেওয়া এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার চেয়ে মুক্ত হয়ে যাওয়া হয়তো তাঁর কাছে সত্যিই বহুগুণ শ্রেয়। 

হয়তোবা ঘুমাবার আগেই অথবা আধো-ঘুমের ভিতরই শহীদ হয়ে গেলেন। অথবা জেগেই ছিলেন সন্তানকে বুকে নিয়ে; এই বিশ্বাসঘাতক পৃথিবীর কথা ভাবছিলেন। সন্তানদের নিয়ে তাঁদের কি আর স্বপ্ন জাগে? না-ই বা জাগবে কেন? তাঁদের সন্তানেরাই তো আগামী পৃথিবীর রাহবার হবে, যেমন হয়েছিলেন মুসা আ.। কিন্তু...হয়তো স্বপ্ন বুকে রেখে বাঁচতে চাওয়া, বাঁচাতে চাওয়া মানুষটা...অথবা একবুক দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখা নির্লিপ্ত মানুষটা এক রাতে শহীদ হয়ে গেলেন। 

আমরা এতটুকুই ভাবি, এভাবেই ভাবি; এতোজন শহীদ হয়ে গেলেন।

একটু যদি চোখ বন্ধ করে অনুভব করি, একটু ভিন্নভাবে। যতটুকু সম্ভব! 

সেই মানুষটা আমার মতোই একজন ছিলেন (বা আছেন এখনো, একটু পর হয়তো শাহাদাত বরণ করবেন)। তাঁর জীবনটা আমার মতোই ছিলো। আমার জীবনে যেমন আল্লাহর উপস্থিতি অনুপস্থিতি, আল্লাহর রাসূলের অনুপস্থিতি উপস্থিতি, ইসলামের আদর্শের কম-বেশি ছাপ। তার মাঝেও এমন কিছু ছিল। 

মারা গেলেন। কেন মারা গেলেন? 'কীভাবে' নয়। যদি জিজ্ঞাসা করি, 'কেন' মারা গেলেন? 

সত্য কথা, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সত্য কথা, আপনার-আমার কাছে তিক্ত সত্য - তিনি মারা গেলেন, কারণ তার জীবনের সময় ফুরিয়ে গিয়েছিল, কারণ তাঁর রিজিক ফুরিয়ে গেছে; শ্বাস নেবার রিজিক, খাবার রিজিক, কথা বলার রিজিক, হায়াতের রিজিক। সব ফুরিয়ে গেছে। তাই বিদায় নিয়েছেন। 

কীভাবে বিদায় নিয়েছেন - সেটা ভিন্ন বিষয়। এবং সেটা হয়তোবা অনেকটাই নির্ভর করে মানুষের ইচ্ছা বা নিয়তের উপর; কারো ক্ষেত্রে হয়তো চেষ্টার উপর অথবা অনেক কিছুর উপর... 

আমি-আপনি তো ভাবছি ৫০০ জন মারা গেলেন, ১০০০ জন মারা গিয়েছেন; ২০০০ জন মারা গিয়েছেন। কেউ আফসোস করছেন, একজন প্রখ্যাত শিল্পী মারা গেলো! কেউ কাঁদছেন, হয়তো নিজ সন্তানের দিকে তাঁকিয়ে আরো হাজার সন্তানের ছবি চোখে ভাসছে... 

তাঁদের ঈমান-আক্বীদা-মাকবুলিয়াত-মৃত্যুর সময়ের অবস্থা কোনকিছুই আমরা জায করার যোগ্যতা রাখি না। ঐ পর্যন্ত আমাদের চিন্তা পৌঁছাবার যোগ্যতা, এমনকি হয়তো অধিকারও নেই। 

কিন্তু এবার যদি একটু ভিন্ন দৃশ্যপট থেকে অনুভব করতে যাই - হঠাৎই প্রচন্ড শব্দে মিসাইল আঘাত করলো; সবাই দেখছে আগুনের বিস্ফোরণ, দেখছে বিল্ডিং ধসে পড়া, শুনছে চিৎকার...

যিনি একটু পরেই শহীদের মর্তবা গ্রহণ করবেন - তাঁর কাছে বিষয়টা কেমন থাকে? তিনি কিছুক্ষণ অন্যদের মতোই হয়তোবা সবকিছু দেখেন, শোনেন। তারপর? 

তারপর তাঁর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যটা উপস্থিত হয়। জীবনে, এই রূহের জীবনে, যে বিষয়টা আপনার এবং আমার জন্য সমানভাবে সত্য এবং অনস্বীকার্যভাবে সত্য - তিনি মালাকুল মাওতকে দেখতে পান। যখন তাঁকে দেখেন, নিশ্চিতভাবে জীবনের সবকিছু; এই যে আশেপাশের ভেঙে পড়া, চিৎকার, সন্তানের মৃত্যু বা বাবার মৃত্যু সবকিছু বিলীন হয়ে যায়। সবকিছু থেকে তাঁর কাছে গুরত্ববহ হয়ে যায়, তার কাটিয়ে আসা জীবনটা। জীবনের পথটা। তাঁর ঈমান। তাঁর চিন্তা-ধারা।  

আমরা বলছি ১০০০ প্রাণ। কিন্তু দুনিয়ার সীমানাটা যখন পাড়ি দিয়ে ফেললেন, তাঁদের প্রত্যেকের নিজস্ব প্রাণটাই তখন চিন্তার বিষয়। তখন ১ এর হিসাব। একটিমাত্র প্রাণের হিসাব। তখন কি এই ইস্যুগুলো আর তাঁদের কাছে ইস্যু থাকে? থাকা সম্ভব? 

যখনই আখেরাতের সীমানায় কেউ পৌঁছে যায়, দুনিয়ার কোন হারজিতই তাঁকে আর ছুঁইতে পারে না। 

এতো মানুষ ইন শা আল্লাহ শহীদের মর্তবায় পৌঁছে গেলেন, কেউ হয়তো মারা গেলেন। কজনের আর খবর আমরা রাখি? 

হয়তো কয়েক যুগ পরে, ধ্বংসস্তুপ থেকে কারো মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ বের হবে। সবাই বলাবলি করবে, ২০২৩ সালে ইসরাঈলী হামলার শহীদ...

কিন্তু তিনি তখন? তাঁর কী এসে যায়, এই কয়েক যুগ ধরে কী হল না হলো তাতে? কিছুই না! একদম কিছুই না!

হয়তোবা তাঁর জানাযা হয়নি, নিয়মতান্ত্রিক কবর তো হয়ই নি। তাই বলে কি তাঁর হিসেব-নিকেশ থেমে ছিল; নিশ্চয়ই না! তাঁকেও জবাব দিতে হয়েছে - তাঁর ইলাহ কে ছিল? তাঁর জীবনে আভাস ছিল কার? তাঁর দ্বীন কী ছিল? 

তিনি এখন আর আমাদের কাছে কিছু নন, তিনি পাঁচশ বা একহাজার জনের মধ্যে একজন। কিন্তু আখেরাতে? রবের কাছে? আমাদের রব প্রত্যেকের সাথে আলাদা মুয়ামালা করার সক্ষমতা রাখেন। তাঁকে কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। 

যদি শহীদ না হই - বোমার আঘাতে মরলাম, না ঘরের বিছানায়; তাতে কী আসে যায়? যদি শহীদ হই, কিন্তু ঘাড়ের উপর ঋণের বোঝা রেখে?(১) হয়তো, মৃত্যুর পর সবার কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে গেলাম; তাতে কী আসবে যাবে, যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পারি? 

আল্লাহ না করুন, যদি এমন হয়; কবরে কেউ হিন্টস দেবার মতো থাকলো না; আমার জীবনের দিকে তাকিয়ে শুধু একবুক হাহাকার জন্মালো - আল্লাহ না করুন, যদি এমন হয়, তাহলে কীভাবে মারা গেলাম তাতে কী এসে গেলো?

(আল্লাহ করুন, আমাদের ভাইদের বোনদের পূর্ণ শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। তাঁদের অপূর্ণ রাখা যেকোন হক নিজ দায়িত্বে পূর্ণ করে দিন।)

যখন পরিস্থিতি চলে আসে, বরং পরিস্থিতি চলে আসবার আগেই; তার জন্য প্রস্তুতি রাখা - একজন মু'মিনের কর্তব্য, একজন মুসলিমের কর্তব্য, কর্তব্য তাদের সবার - যাদের সামান্যতম সচেতনতা আছে। ভাবনা আছে। 

কিন্তু, ব্যক্তিগত উন্নতি, ব্যক্তিগত মাকবুলিয়াত - নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবার ঠিক করে ফেলা প্রয়োজন। রিজিক ফুরিয়ে যাবার আগেই। একবার এই দুনিয়ার সীমানা পার হয়ে গেলে, কীভাবে মারা গেলাম - তাতে তেমন কিছু এসে যাবে না! কীভাবে এর বদলে হয়তোবা 'কী করে' মারা গেলাম - সেটাই বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাবে!

(১৮/১০/২০২৩, কিঞ্চিত পরিমার্জিত) 

(১)  আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত মু’মিনের রূহ্ ঋণের সাথে লটকানো থাকে। - ইবনু মাজাহ ২৪১৩, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৭৮ [হাদিসবিডি]

Thursday, April 18, 2024

তিলাওয়াতুল কুরআন আমামা রব্বানা

রমাদানী আনন্দের অন্যতম উৎস হলো কুরআন! এ আনন্দ বিভিন্নভাবে কুরআনের সাথে কাটাবার আনন্দ!
কুরআনী আনন্দগুলোর মধ্যে অন্যতম আনন্দ হলো - রবের সামনে দাঁড়িয়ে রবকে বেশির চেয়ে বেশি তিলাওয়াত শোনানো। এই অনন্য আনন্দটুকুর জন্যই কি আমাদের রব রামাদানে তারাবীহকে জরুরী করে দেননি? সিয়াম উপলক্ষে যে অবসরটুকু পাই, তা কাজে লাগিয়ে ভিন্ন এক স্বাদে নিমগ্ন হবার জন্যই নয় কি? 

অথচ বাস্তবতা হলো, তারাবীহ আমাদের কাছে বাড়তি বোঝার মতো বোধ হয়। কোনভাবে তারাবীহ শেষ করে 'ফ্রি' হতে পারলেই আমাদের নির্ভার লাগে। আফসোস, তারাবীহে দীর্ঘসময় নিমগ্ন তিলাওয়াতের স্বাদ থেকে আমরা বঞ্চিতই রয়ে গেলাম! 

বিশেষত হিফয থাকার পরও বৎসরে মাত্র একবার আসা এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়া কতোই না কষ্টের! এর পিছনে বাহ্যিক কারণগুলো বাদ দিলেও আরও নিজেদের কিছু গাফলতিও কাজ করে - আমাদের হিফযের দূর্বলতা, যার কারণে পুনঃইয়াদ না করে বা এক-দু বার দেখে না পড়ে সালাতে পড়তে পারি না। অথচ এর জন্য যে সময়টুকুর প্রয়োজন, রামাদানের অন্যান্য ব্যস্ততা, ক্লান্তির মাঝে ঐ মনোযোগ বা সময়টুকু প্রায়ই দিয়ে ওঠা হয় না। অবশেষে সালাতে তিলাওয়াতের অতুলনীয় স্বাদ থেকে বঞ্চিত থেকে যাই।

আরেকটা বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি কি? আমরা যথারীতি হিফয করি, কুরআনের ভাষাশিক্ষায় মশগুল হতে চাই - তবু বারংবার তাল নষ্ট হয়ে যায়, গতি মন্থর হয়ে যায়। প্রায়শই আমরা আমাদের মেহনত থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই! হিফযের ক্ষেত্রে তো রিভিশন এর সময় পাইনা, তাই ইয়াদ করা অংশগুলো ভুলে যেতে থাকি। সেগুলোই পুনঃইয়াদ করা হয়ে ওঠে না, নতুন ইয়াদ আর কখন করবো!
এ ছাড়া হিফযের মেহনতে থাকলে সালাতে তিলাওয়াতের যতোটুকু ইচ্ছে ও আগ্রহ কাজ করে, যখন আমরা হিফয থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই তার কতোটুকুই বা আর বেঁচে থাকে?
আর কিয়ামুল লাইলের প্রতি গাফলতির কথা উহ্যই করে যাই বরং! 

সবকিছুর পিছনে কোন বিষয়টা কাজ করে বলুন! 

আমার তো মনে হয়, এটি ছাড়া আর কোন কারণই নেই যে আমরা আমাদের রবের সামনে তিলাওয়াতের স্বাদটুকু ভুলে গিয়েছি, অথবা মোটেই পাইনি। বছরে ঠিক কতোবার এমন হয় যে, আমরা সালাতে আমাদের রব আল্লাহ জাল্লা জালালুহুকে তিলাওয়াত করে শুনাচ্ছি আর আয়াতের গভীরতায়, ভারে কাঁদছি!

বোনেরা, আমরা তো মূল আনন্দটুকুই হারিয়ে ফেলেছি! এ কারণে হিফয করা হোক বা কুরআন বোঝার মেহনত, অথবা কিয়ামুল লাইল - সবকিছু থেকেই বারংবার পিছলে যাচ্ছি! মাহরূম হয়ে যাচ্ছি। 

কোন স্বাদে হুযুর সা. সালাত পড়তে পড়তে পা ফুলিয়ে ফেলতেন! সূরার পর সূরা তিলাওয়াত করে যেতেন! জুয এর পর জুযের সফর শেষ করতেন! কোন স্বাদে আমাদের সালাফেরা এক কি দুটি আয়াত পড়তে পড়তে রাত পার করে দিতেন! আমরা তো তার ছোঁয়া থেকেই বহুদূর!


সূরা মুযযাম্মিলে আল্লাহ তা'আলার এই আহবানগুলো কি আমাদের অন্তর টানে না - 

يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ (١) قُمِ اللَّيْلَ إِلا قَلِيلا (٢) نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلا (٣) أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلا (٤)
হে বস্ত্রাবৃত! রাতে দন্ডায়মান থাকুন, কিছু অংশ ছাড়া; (দন্ডায়মান থাকুন) - আধা রাত, অথবা তা থেকে কিছুটা কমান, কিংবা তার চেয়ে বাড়িয়ে নিন এবং কুরআন পাঠ করুন ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে।  (মুযযাম্মিল ১-৪) 

দেখুন, তিনি আবারো ডাকছেন একই সূরায় -

عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۖ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ ۚ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ ۙ وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ ۙ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ ۚ
তিনি জানেন যে, তোমরা তার (অর্থাৎ সময়ের) সঠিক হিসাব রাখতে পারবে না, সুতরাং তিনি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন কুরআন থেকে ততটুকুই পড়, যতটুকু সহজ হয়। তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কতক অসুস্থ হবে, আর কিছু সংখ্যক যারা যমীনে ভ্রমণ করবে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে, আর কিছু লোক থাকবে, যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধরত থাকবে। অতএব কুরআন থেকে যতটুকু সহজ হয় ততটুকুই পড়।

চলুন না, আজ নিয়ত করি আমরা নিজেদের এই কুরআন বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে তুলে আনবো। যতটুকুই আল্লাহ হিফয করার তৌফিক দিয়েছেন, তার মধ্যে যতটুকুই সহজ হয়, ততটুকু আমরা আমাদের সালাতে জারি করে নেবো রামাদান আবারও আমাদের কাজে পৌঁছে যাবার আগে, ইনশাআল্লাহ! আগামী রামাদান হোক না আরেকটু জৌলুসপূর্ণ! আমাদের কিয়ামুল লাইল জীবন্ত হয়ে উঠুক প্রাণবন্ত আন্তরিক মুহাব্বাতের তিলাওয়াতে! 
কীভাবে আমরা আমাদের সালাতে কুরআনকে জারি করতে পারি?

এজন্য আমরা এখন থেকেই সচেতনভাবে সালাতে কুরআনকে বাড়াতে থাকবো ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি চেষ্টা করবো, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে কুরআনী শব্দার্থের ভান্ডারও বাড়াতে থাকার; কুরআনী ভাষাশিক্ষার মেহনত তো থাকবেই। আল্লাহর রহমত যদি শামিল হয়, আল্লাহ যদি অবশেষে আবারও রামাদান পর্যন্ত পৌঁছে দেন, ইনশাআল্লাহ একটি নতুন সফর শেষে রামাদানকে নতুনভাবে অনুভবের সুযোগ হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।
এ ব্যাপারে খসড়া একটা পরিকল্পনা সামনে রাখা হলো। এই তালিকাটি ত্রিশ পারার সূরা দুহা থেকে শুরু করা হয়েছে, যেহেতু হিফযের ক্ষেত্রে এগুলো অগ্রাধিকার পায়।

তালিকাটি করার ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়েছে যে, ঐ বোনের এই সূরাগুলো মুখস্থ আছে তবে তাঁর সালাতে এগুলো তিলাওয়াত করে অভ্যাস নেই। বোনেরা একে নিজেদের অভ্যাস ও হিফয অনুসারে কম-বেশি করে নিতে পারেন। কেউ চাইলে এক পৃষ্ঠা, বা একটি রুকু, দুটি ছোট সূরা অথবা একটি বড় সূরাও রাখতে পারেন। তবে প্রথম প্রথম কম হলেই ভালো। 'আল্লাহর কাছে ঐ আমলটিই প্রিয় যা অল্প কিন্তু নিয়মিত হয়'।

এই অংশটুকু শেষ হলে ক্রমান্বয়ে হিফযে থাকা অন্যান্য অংশগুলো নিয়ে এভাবে তালিকা প্রস্তুত করে তিলাওয়াত করতে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে কয়েকটা বিষয় লক্ষ্য করিঃ

১। তিলাওয়াতুস স্বলাহ এর জন্য আলাদা একটি নোটবুক বা ডায়েরী প্রস্তুত করে নিলে খুবই ভালো হয়। এতে বিষয়টির গুরত্ব বাড়বে। যদি ডায়েরীটিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে তো আর কথাই নেই! 
কেমন হবে, যদি একদিন ডায়েরীটির পাতার পর পাতা ভরে যায় এ কারণে যে, আপনার হিফযের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং সালাতে তিলাওয়াতের পরিমাণও একই সাথে বেড়েই চলেছে! সুবহানাল্লাহ!

২। এই পরিকল্পনা অনুসারে, আমার তালিকায় আমি যতটুকু করে পড়বো ততটুকু লিখে তালিকা করে ফেলবো। যেদিন যে অংশটি পড়বে, প্রতিদিনের সালাতে ঐ অংশটি আমার নিয়মিত পড়া সূরাগুলোর সাথে বারংবার পড়তে থাকবো। প্রতি ওয়াক্তে অন্তত একবার যেন পড়া হয়। 
এই নির্দিষ্ট অংশটুকু বোনেদের নিজ নিজ হিফয অনুসারে কম-বেশি হবে।

৩। নির্দিষ্ট অংশটি প্রতিদিন যতবার পড়বো, তত সংখ্যাটি 'দৈনিক পড়া' টালি বা টিকচিহ্ন দিয়ে রেকর্ড রাখবো। 

৪। এভাবে কিছু অংশ পড়া হলে, যেমন পারার এক চতুর্থাংশ পড়া হলে অথবা কোন বড় সূরা শেষ হলে তা সপ্তাহজুড়ে টানা পড়তে থাকবো। সপ্তাহজুড়ে পড়ার সময় যতবার কোন অংশ পড়া হচ্ছে তাও লিপিবদ্ধ রাখতে পারি 'সাপ্তাহিক পড়া' ঘরে।

৫। সপ্তাহশেষে আবারও নতুন অংশের তিলাওয়াতে যাবো, এবং একইভাবে লিপিবদ্ধ রাখবো।  তবে এবার যখন পুনরাবৃত্তির সপ্তাহ আসবে, আগের অংশটুকুসহ এবার পুনরাবৃত্তি করবো।

৬। এভাবে একাধিক পারা শেষ হয়ে এলে প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তের প্রতি রাকাতে ভিন্ন ভিন্ন অংশ তিলাওয়াত করবো।

৭। কারো কাছে বারংবার আপডেট করাও 'বাড়তি কাজ' মনে হতে পারে, তারা ডায়েরী কলমসহ জায়নামাজের কাছেই রেখে দিবো, সালাত শেষে অথবা দিনে অন্তত একবার আপডেট করবো।

৮। এছাড়া আরো তিনটি কলাম রাখা হয়েছে- শব্দার্থ, তরজমা, তাফসীর। এগুলো ঐচ্ছিক কলাম। যখন কুরআনের কোন অংশের শব্দার্থ শেখা, তরজমা বা তাফসীর পড়া শেষ হবে, এখানে তার রেকর্ড রেখে দিতে পারি। বছরশেষে পাতা উল্টিয়ে নিজের অবস্থান বুঝতে পারবো।

এটি একটি পূর্ণ পরিকল্পনা। কারো কাছে ভারী মনে হলে এটাকে সামনে রেখে নিজের সুবিধা ও সামর্থ্য অনুসারে কম-বেশি করে নিতে পারি।

আল্লাহ যদি সত্যিই তৌফিক দিন - আমরা আমাদের সালাতের স্বাদ কিছুটা হলেও ফিরে পাবো,  ইনশাআল্লাহ। সালাতের প্রতি আগ্রহ, কিয়ামুল লাইলে উঠবার উদ্দীপনা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে। যখন একটু একটু বুঝে পড়তে শিখবো, একটু কাঁদতে শিখবো; পুরো কুরআন বুঝে ফেলবার তড়প চলে আসবে ইনশাআল্লাহ!

আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন, ভরপুর তৌফিক দিন! 

Friday, January 12, 2024

ইতিহাসের পাতায় - ১২/০১ /২৪

 ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনটা কেমন হতে পারে? জানিনা, তবে আজ আমার জন্য মোটামুটি গুরত্বপূর্ণ উপলদ্ধির দিবস। 

কেন জানি না, আজকেই অনেকগুলো গুরত্বপূর্ণ বিষয় একসাথে চোখের সামনে চলে এলো। বেশ কিছু সুতো মিলে যেতে থাকলো। জানি না কেন। কয়েক সপ্তাহ ধরেই, গত শতাব্দীর ইতিহাস পড়া/বোঝাটা খুব বেশি গুরত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। যতো দিন যাচ্ছে, এই অনুভূতি আরো তীব্র হচ্ছে।

নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনী ধরনের একটা বই ধরেছিলাম পড়তে। অনুবাদ বলেই কি না, বেশি এগুতে পারিনি। আজ মাওলানা আতিক উল্লাহর দারস শুনতে শুনতে আবারো উজ্জীবিত হতে হলো। আজ অন্য বেশ কিছু কাজ লিস্টে ছিল, সব ফেলে মন দিয়ে কিছু নিউজ ফলোআপ করলাম। অন্যসময় অনুভব হয়, সময় বেশ কিছুটা নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু এখন জেনে-থাকাটা খুব, খুব বেশি গুরত্বপূর্ণ মনে হয়। 

যাই হোক, মূল কথায় আসি।

আফ্রিকা, পীড়িত-নিপীড়িত আফ্রিকা ICJ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত এ ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলা সম্পর্কে যারা জানি, স্বভাবত নিরাশবোধ করতেই পারি। বিশেষত আন্তর্জাতিক আইন, মামলা ইত্যাদি কার অধীনে সবাই কম-বেশি জানি এবং এই মামলার শেষ পরিণতি কী হবে তাও জানা। এছাড়া যা বুঝলাম, এ ধরনের মামলা শেষ হতে হতে বছরও পেরিয়ে যায়; সুতরাং আফ্রিকা যে জন্য মামলা দায়ের করেছে সেটা কিছুটা অর্থহীন এ পৌঁছে যেতে পারে।

কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকা সব যুক্তিতর্ক ঠেলে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছে, ভালোভাবে মামলা তুলে ধরেছে। এটা অবশ্যই বর্তমান সময়ের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ এবং জাতিগত শক্তি ও সাহসের পরিচায়ক। ইসরাইল ও তার দোস্তদের অল্প পরিসরে হলেও জবাবদিহিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। অলরেডি শুনানি শুরু হয়েছে। যদিও কী বলবে মোটামুটি আন্দাজ করা যায়, তবু মোটামুটি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। 

আরো মজার বিষয় হচ্ছে, ইসরাইলী সৈন্যরা সব নীতি ভঙ্গ করে যা কিছু করেছে, সব কিছুর স্বহস্ত-প্রমাণ রেখে দিয়েছে। এতদিন তো সবই হেলায় করেছে, কিন্তু আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য এই প্রমাণগুলো্র খুব দরকার ছিলো। 

আজকে উস্তাদ আতিকুল্লাহ আলোচনায় এটাও বললেন, কুরআনেই আছে, তারা খুব সহজে উস্কে উঠে। ওদের দিকে একটু হাত তোলা সহ্য করতে পারে না। গাজা-লেবানন-ইয়েমেন আরো সব বিষয়ে এই মামলা ওদের কী পরিমাণ জ্বলুনি তৈরি করেছে তার ইফেক্ট দেখতে সত্যিই অপেক্ষা করতে মন চাচ্ছে না। 

(লেখায় গ্যাপ পড়ে যাওয়ায় তাল পাচ্ছি না) 

দ্বিতীয় গুরত্বপূর্ণ খবরটা হলো, ইয়েমেন। এতদিন হুথিদের খবরগুলো টুকটাক পড়ছিলাম, অত মনোযোগ দিচ্ছিলাম না। শুধুমাত্র সমুদ্রপথ আটকে দিয়ে হুথিরা গাজার বড় সাহায্য করেছে। 

কেমন সাহায্য করেছে, বা ইসরাইল সহ তার মিত্রদের কেমন ক্ষতি করেছে সেটা বোঝা যায় এই আক্রমণের বহর থেকেই। শুধুমাত্র ইসরাইল বা আমেরিকা না; লটবহর নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বাহরাইন - এতগুলো দেশের যৌথ আক্রমণ হয়েছে। এবং সেটা তারা তাদের অফিসিয়াল একাউন্টে পরিষ্কার টুইট করেছে। এটাও দাবি করেছে যে, কোন মানুষ মারা যায়নি। 

কোন পর্যায়ে কোনঠাসা হলে একটা দেশের উপর এতগুলো দেশ ঝাঁপিয়ে পড়ে? তাদের দাবি অনুসারে যদি  সত্যিই কোন মানুষ না মারা গিয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে খুব সতর্কতার সাথে আক্রমণ করেছে। এই সতর্কতার মানে কী? ইসরাইল আক্রমণে বিশ্ব-পরিস্থিতিই প্রকাশ করে তাদের সতর্কতার প্রয়োজন।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এটাকেও আত্মরক্ষামূলক আক্রমণ বলেছে। হাহা। 

আর দু-একটা বিষয় নোট করার মত মনে হয়েছেঃ
১। ওমান। সে তার আকাশপথকে ইয়েমেনে আক্রমণের জন্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
২। সৌদি। সে যা করার কথা করেছে, আক্রমণকে সাপোর্ট করেছে এবং খুব সম্ভবত সরাসরি আক্রমণ না করলেও সাহায্য করেছে। 
৩। বাহরাইন। গাদ্দারের লিস্টে চোখে পড়া নতুন নাম।

ইয়েমেন আক্রমণের সাথে সাথে সে দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলেছে, আমরা গাযানদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবো না। এবং বারংবার গাযার প্রসঙ্গ তুলে এনেছে। এখন ইয়েমেনি জনগণের মানসিকতা খুবই গুরত্বপূর্ণ। যদি তারাও এমন দৃঢ়তা প্রকাশ করতে পারে (অলরেডি একজনকে দেখলাম), তাহলে ইয়েমেন খুব গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ। [এখানে কূটনৈতিক টুকটাক কিছু ব্যাপার থাকতে পারে, কিন্তু এতগুলো আক্রমণ সয়ে কোন দেশ কীভাবে ভুয়া সহমর্মিতা দেখাতে পারে; এটা অসম্ভব ই মনে হচ্ছে। দেখা যাক সামনে।]

৩ 

উস্তাদ আতিকুল্লাহ আরেকটা গুরত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। কয়েকদিন আগে এক আলোচনায় আমি বলছিলাম, গাযার যেমন ইসরাইল আছে আমাদেরও কিছু একটা আছে। আজকে উস্তাদ বললেন, ইহুদিদের সবচেয়ে কাছাকাছি হলো মুশরিকরা। আর এখন এর প্রকাশ্য নিদর্শন ও কার্যক্রম দেখাও আমাদের বাকি নেই। 

এখন আমাদের জন্য খুব জরুরী হলো, ইসরাইলী পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণ করা, বোঝা। এখানে পুরুষ-নারী ভেদ নেই। তারা পুরুষ-নারী ভেদ করে না। ফ্রন্ট চেনে না। নাগরিক চেনে না। ওদের কোন নীতি নেই। এখানে আমরা যত নিজেদের ভেদ করে নিজেদের অসচেতন করে রাখবো, তত নিজেদের এবং নিজেদের সন্তানদের ভোগান্তির জন্য তৈরি করে রাখবো। 

গত কয়েকদিনে হাতে আসা ১-২ টা বইয়ে গত শতাব্দীর দেশগুলোর যুদ্ধ-সংঘাতের যে চিত্র চোখে পড়েছে; তাতে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট মনে হয়েছে - প্রতিটি সংঘাতের সাথে ফিলিস্তিন কোন না কোনভাবে জড়িত। আমাদের বিজয়ে যারা অগ্রবর্তী ছিলেন, তারা অন্যান্য দেশে যদিও কাজ করেছেন, কিন্তু বারংবার ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ তাঁদের কথায় ছিলো, আলোচনায় ছিলো। ঐ সময়ে ফিলিস্তিনি যে চিত্রগুলোর বর্ণনা পাই, বর্তমান ফিলিস্তিনের চিত্র যেন প্রায় একইরকম। অর্থাৎ এখন আমরা যা দেখছি, অনুভব করছি; এটাই ফিলিস্তিনিরা এবং ঐ সময়কার সচেতন মুসলিম বা নেতারা অনুভব করছিলেন। গত শতাব্দীতে ফিলিস্তিনিরা এভাবেই নিপীড়িত হয়েছে, যেমন এখন হচ্ছে। 

তবে একটা পার্থক্য মনে হয়, ঐসময়ে জাতিগতভাবে পাশে দাঁড়ানোর মত খুব বেশি কেউ ছিল না (আমার জ্ঞান অনুসারে)। এখন আমরা যথেষ্ট গাদ্দারি দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি আলহামদুলিল্লাহ্‌, পাশে দাঁড়ানোর মত কিছু দেশ দেখছি, কিছু কথা শুনছি। যেহেতু বিজয় সংখ্যা দিয়ে আসে না, দেশ ও শক্তি দিয়ে আসে না এবং বিজয়ের কৃতিত্ব আল্লাহ ইনশাআল্লাহ যোগ্য হাতেই দিবেন, তাই খুব ভরসা করতেই পারি তাঁর উপর। 

গত শতাব্দীতে একটানা মুসলিম নিপীড়নের হাহাকার ই ভেসে ওঠে। কিন্তু কে জানে, হয়তো বা একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকটি আমাদের বিজয়ের? 

বাকি আমাদের খুব দ্রুত সচেতন হয়ে যাওয়া এবং দুয়া, খুব দুয়া। 

Friday, October 20, 2023

ফিরদাউসী প্রতীক্ষার বীজ - শুধু এতটুকুর জন্যেই

গত হবে হয়তোবা, তাদাব্বুরে ভেজা এক বিকেল;
কোন একদিন...
কিছুটা স্বপ্নের মতো, কিছু শংকায়...

কোন এক শুক্র-সন্ধায় হয়তো দেখা হবে, 
এক চোখ তৃপ্তির জন্য,
শুধু এতটুকুর জন্যই। 

শুধু এতটুকুর জন্যেই হয়তোবা ভাসবে
কালো প্রদীপ্ত শোক, অথবা 
গাঢ় সবুজের সাফল্যে আচ্ছাদিত
তোমার অবয়ব। 

পিছনে ফিরদাউসের বাগানের আহবান রেখে,
এক শুক্র-দুপুরের অমিয় তেজে
ক্লান্ত, তবু সজীব ছাপে
বুনে দিতে এক চিরায়ত প্রতীক্ষা
শুধু একটি হৃদয়ের সুরক্ষায়। 
শুধু এতটুকুর জন্যই...

সে শুক্র-বিকেলেই হয়তোবা হবে 
গল্পের আপাত শেষটা
স্নিগ্ধ বুলেটের সুনিপুণ ছেদে,
সুগন্ধে রঞ্জিত ভূমিতে...

যখন আড়াল হয়ে যাবে রক্তিম সূর্য,
আরো একটি গল্পের সাক্ষী হয়ে; 
দোয়া কবুলের মুহুর্তটিতে
ফিরদাউস-চত্বর আবারো হয়তো প্রফুল্ল হয়ে উঠবে_
নতুন অভ্যর্থনায়...
সালাম! 
সালাম! ক্বাওলাম মির রব্বির রহিম! 

নতুন পাখিটি
তখন অমিত অপেক্ষায়, 
আরেকটি সুপ্রতীক্ষিত অভ্যর্থনার! 


Friday, June 30, 2023

আমার কবি বা লেখিকা কোনটাই না হয়ে উঠবার গল্প

 অনেকদিন ধরেই কিছু লেখা হচ্ছে না। এই টপিকটা দেখেই হঠাৎ মনে হলো, লিখি একটুখানি এটা নিয়েই। হয়তো 'লেখা' হবে না, হোক যা কিছু একটা। 'লেখালেখির হাতেখড়ি' মানেই স্মৃতি, আর স্মৃতিই তো লেখার বড় একটা উপাদান।  স্মৃতিরোমন্থন আমার ভীষণ প্রিয়, যদিও স্মৃতি মানেই ভীষণ বিষণ্নতাও বটে! 

আমার লেখালেখির হাতেখড়ি মানে সেই পুরনো যুগে ফিরে যাওয়া, যখনকার স্মৃতি আসলে ঝাপসা হয়ে গেছে এখনই। আমার লিখতে খুব ভালো লাগতো, অর্থাৎ কলম বা পেনসিল দিয়ে খাতায় অক্ষর সাজিয়ে শব্দের বুনন। পড়তে যতো না ভালো লাগতো, লিখতে তার থেকে বেশিই ভালো লাগতো। সেটা একাডেমিক হোক, আর এমনি শব্দ-গাঁথুনি। 

লেখালেখি অর্থাৎ মস্তিষ্ক থেকে সৃজনশীল কিছু উৎপাদন, সেটা প্রথম হয় সম্ভবত ৫-৬ বছরে। শুরুটা ছিলো ছন্দ দিয়ে (যদিও আমরা বলতাম কবিতা)। একটা চার লাইনের কবিতা ছিল সেটা, যতদূর মনে পড়ে। সেই শুরু। নানা টুকটাক কবিতা লিখতেন, মায়েরও অভ্যাস ছিল। হয়তো সে সূত্রে জিনগত প্রভাব থেকেই কাব্যরচনার সূত্রপাত। তবে তখন যেসব উৎপাদিত হতো সেগুলো কবিতা বললে, কবিতার অপমান হবে; কিন্তু তখন ছন্দে মেলানো ছন্দগুলোই ছিল আমার কবিতা। প্রায়ই ছোট ছোট কবিতা লিখতাম। সবাই উৎসাহ দিতো। আব্বা হাসতেন, কী যেন বলতেন - এতো ছোট মানুষ, আবার কবিতা লিখে! 

কবিতার প্রতি আমার অনেক টান ছিল, এমন নয়। তবে আমি কবিতা লিখতে ভালোবাসতাম। তখন বেশিরভাগ কবিতাতেই ছাপ ছিল আমার বিশ্বাসের, কবিতাগুলো খুলে বসলে দেখা যায় - অনেকগুলোতেই হয়তো বেশিরভাগেরই মূল ধারায় চলে আসতো জান্নাত-জাহান্নাম, বেহেশত-দোযখের গল্প। কবিতা বলতে অন্ত্যমিল, লাইনের শেষ অক্ষরে মিল হতে হবে; এতটুকুই টার্গেট ছিলো। কোন কোনটার অর্থ হয়তো একটু হাস্যকর হয়ে হাসির খোরাক হিসেবে মুখে মুখে ফিরতো, তাতে কী! কবিতা তো! ছোট ছোট চার লাইনের কবিতা ছিল অনেক, অনেকগুলোই ছিল বিশেষ বিশেষ মানুষদের ঘিরে। ক্লাস ফোরে এক ঝাঁক বন্ধু-বান্ধব পেয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য, যাদের সাথে মেলামেশা ছিলো বেশি, তাদের প্রায় প্রত্যেককে নিয়েই টুকটাক কবিতা হতো, বড়-ছোট। 

কবিতা লেখার এই যাত্রায় একটা উৎসাহ হিসেবে পেয়েছিলাম 'মুসলিম ডাইজেস্ট', আমার বড়আব্বার পাবলিশ করা ছোট একটা ম্যাগাজিন। মাঝেমধ্যেই সেখানে কবিতা পাঠাতাম, ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখতে তো বেশ ভালোই লাগতো! সম্ভবত আমার ১০-১২ বছর পর্যন্ত সেখানে লেখা পাঠানো হতো। বড়আব্বা মারা গেছেন অনেক আগেই, তার আগেই বন্ধ হয়ে যায় এই ডাইজেস্ট। এছাড়া পত্র-পত্রিকায় খুব মাঝে মাঝে হঠাৎ এক দুটো পাঠাতাম, হয়তো ছাপা হতো বা হতো না। 

আরেক উৎসাহ ছিলেন, আমার সেজমামা। প্রায়ই কবিতার বই ছাপাবার কথা বলতেন।  আমার কবিতার সংকলনের খাতা তাঁর অফিসে জমা হয়ে ছিল; তবে ঐ খাতা থেকে কবিতা টুকে নিয়ে সত্যি সত্যি একদিন বই ছাপিয়ে বসলেন। পরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল, খাতাটা পেলাম না আর। ঐ খাতার বাইরের কিছু কবিতাও অবশ্য আমি নিজ হাতে টাইপ করে পাঠিয়েছিলাম। সেটা ছিল আমার জীবনের দ্বাদশ বছর। 

তারপর এই কবিতার গল্পটা আরো লম্বা হতে পারতো, কিন্তু হলো না। কবিতার বইটা খুললে ভীষণ লজ্জা হতো (এখনো হয়)। বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক ছিল, সেগুলো আম্মুকে দিয়ে হাতে এডিট করিয়ে আব্বুই বিভিন্ন মানুষকে হাদিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার নিজের মধ্যে কোন উৎসাহ কাজ করতো না, কাউকে দিতে ইচ্ছেও করতো না। একদিন বড়ুমামার বাসায় গিয়ে দেখলাম, আমার বইয়ের অনেকগুলো কপি একেবারে সামনে সাজানো। এতো লজ্জা হলো, মামীকে গিয়ে অনুরোধ করলাম ওখান থেকে সরিয়ে ফেলতে। একদিন মনে হলো, কবিরা বোকা হয়; ব্যস, ছেড়ে দিলাম কবিতা লেখা। 

এভাবে কি ছাড়া সম্ভব? সম্ভব হয়েছিল আমার জন্য। কারণ ঐ যে, কবিতার প্রতি আমার তেমন কেন টান ছিল না। কিন্তু কবিতা আসতো, তাই লেখা হতো। এতটুকুই ছিল।

যেদিন আবদুল্লাহ মাহমুদ নাজীব সম্পর্কে প্রথম জানলাম, সেদিন অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে বসেছিলাম। বয়স কাছাকাছি, জীবনের শুরুভাগে কবিতা তো আমারও হাতে এসেছিল; তাহলে কবিতা নিয়ে এতোটা বড় হলাম না কেন? কারণ ছিলাম নিজেই। তখনো কেউ আমার ভাবনার বুকে চাবুক মেরে বলতে পারেনি যে, 'আরে কবিতা ছেড়ে দিলে কি তুমি বড় বুদ্ধিমতী হয়ে যাবে?'। আর টান, টানটাই ছিলো না যে! কবিতা লিখতাম, কিন্তু কবিতা-চর্চা ছিল না কখনোই। কবিতা লিখতাম, কিন্তু পড়ার কোন ইচ্ছেই জাগতো না। পুরনো কবিতা ঘষে-মেজে সুন্দর করা, নতুন নতুন শব্দ বের করে সাজাবার ইচ্ছা, ধৈর্য, চেষ্টা কোনটাই আমার মাঝে ছিলো না। 

তবে কবিতা সত্তায় তো আছে! ছেড়ে দিলাম কিন্তু একেবারেই কি? হঠাৎ হঠাৎ আসতো কবিতা, বছরে এক দু'বার অথবা দু বছরে এক বার এক দুটো লেখা হতো। তেমন আসে না বলে কষ্টও হতো না। কৈশোরে আস্তে আস্তে গদ্যের একটা ধাঁচ আসে কবিতায়। কিশোরীর অশ্রু নিয়ে কিছুটা গদ্য-ধাঁচের একটা কবিতা লিখি, যেটা এখনো আমার প্রিয়। পনের বছরে প্রথম (এবং সম্ভবত শেষ) ইংরেজি কবিতা লিখি। বিষয়বস্তু ছিল, 'আমার প্রচন্ড ইচ্ছে করছে পাগল হয়ে যেতে, কিন্তু পারছি না'। লিখে ডেইলিস্টারে পাঠাই কাউকে না জানিয়েই, অতটুকুই; ছাপা হবার মুখ সেটা দেখেনি। তারপর তারুণ্য পেরিয়ে কিছু রোমান্টিক কবিতা, বিশেষ কারো জন্যে জমা। ব্যস, সব পর্বেই জাস্ট 'হাতে-খড়ি'র পরই ছুটি। 'কবি' হিসেবে সেই ছোটবেলার পর আর নামকরণের সুযোগই নেইনি। শেষ কবিতা লিখেছি বোধহয় হয়েছে, দু'বছর। 


শুধু কবিতা না, গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ সবকিছুতেই হাতেখড়ি পড়ার পরই ছুটি নিয়েছি একরকম। এখানে হাতে-খড়ির শুরু অবশ্যই ডায়েরী। কবিতা থাকুক বা না থাকুক, কবিসত্তা তো আছে, কবিসত্তার নিরেট যে ভাব-জগত তাও তো যথারীতি বিদ্যমান। আজ এটা করেছি, ওটা করেছি - এতটুকুতে আমার ডায়েরী লেখা সীমাবদ্ধ থাকতো না; মনের সব ভাবনা বিস্তারিত লিখে বসতাম। ডায়েরী ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। এমন কি মনে হতো ডায়েরী শুধু কাগজ-সংকলন না, বরং সত্যি প্রাণ আছে। ডায়েরীকে সম্বোধন করেও লেখা হতো - 'ডায়েরী, তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয়...' ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যিই ডায়েরীকে যা বলা যায়, পৃথিবীর কাউকেই হয়তো বলা যায় না। যেভাবে ইচ্ছে যখন ইচ্ছে বলা যায়, যত বিশদভাবে ইচ্ছে বলা যায়- থামিয়ে দিয়ে খোঁটা দেয় না, অবজ্ঞা-অবহেলা করে না। 

লিখেছি টানা কয়েক বছর, তারপর আবার কয়েক বছরের বিরতি। এটা ইচ্ছেকৃত ছিল না, অনেকটা জীবনের ব্যস্ততার চাপে, জীবনবোধের বাস্তবতার অতি-অনুভূতিতে হারিয়ে ফেলার মতো। তবে এখানে বাধ সাধার মত কেউ ছিল। একদিন প্রিয় উস্তাদ আবু তাহের মিসবাহ হাফিযাহুল্লাহ এর তাকিদে ভুল শুধরে এলো, কতবার কতভাবে যে তিনি ছাত্রদের, পুষ্পকলিদের রোযনামচা অর্থাৎ ডায়েরী লিখতে বলেছেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছেন - 

'...এজন্যই তোমাদের এত করে বলি, রোযনামচা লেখো। রোযনামচা হচ্ছে তোমার লেখকসত্তাকে জাগ্রত করার, সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট করার প্রথম উপাদান...' 

লেখনীর সফলতার জন্য যে উপায়গুলো লিখেছেন, তার প্রথমটাই হচ্ছে রোযনামচা লেখা অর্থাৎ ডায়েরী লেখা। 

শুধু লেখনী না, রোযনামচা অর্থাৎ ডায়েরী লেখার অভ্যাস জীবনের অন্যান্য অনেক দিকের জন্যই উপকারী। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের চিহ্ন।

লেখনীর যাত্রায় আরেকটা জিনিস ছিল - চিঠি। যখন ডায়েরী লিখতাম, তখন এই চিঠিও লেখা হতো। বান্ধবীকে মোবাইলের যুগেও চিঠি লিখে পাঠাতাম, সেও পাঠাতো। মজার ব্যাপার ছিলো, আমাদের বাবা-মায়েরা এসব ছেলেমানুষী প্রশ্রয়ও দিতেন। এই ধারা অবশ্য বেশিদিন চলেনি। তবে আমার ভাবুক মন চিঠি লেখার মতো এক 'অজানা' কে তৈরি করে নিয়েছিল। সেই অজানাকে লক্ষ্য করে কতো কতো চিঠি যে লেখা হতো। নিরেট ডায়েরী লিখতে হয়তো ভালো লাগতো না, তাই এই চিঠিরূপ। সত্যি কোন মানুষকে চিঠি লিখে সব জানাবার মজাই যে আলাদা! 

ডায়েরী লেখা পর্বে ভাটা পড়বার সময় এই ধারাতেও ভাটা পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পরেও মাঝেমধ্যে অস্তিত্বশীল (existing) মানুষকেও কখনো-না-পাঠানো চিঠি লেখা হতো। কারণ, ওটাই। চিঠি লিখবার মধ্যেও আলাদা প্রশান্তি আছে। কোন কথা আলাদাভাবে বলা সম্ভব, যেটা হয়তো সাধারণ ডায়েরীতে সম্ভব না। 

৪ 

লেখনীর এই ধারায়, ডায়েরীর পরবর্তী ধাপ ছিল ব্লগ। তখনের কথা মনে করলে কিছুটা হাসি আসে, আর ভাবি - হ্যাঁ, এমনই তো হয়। মডেমের যুগ। মাসে ১ জিবি করে কেনা হতো। সেই ১ জিবি শেষ হয়ে গেলে একটু কষ্টেই কাটতো। আর স্পিডের কথা তো বলাই বাহুল্য! আপু খুব ব্লগ পড়তো। ব্লগের এক একটা পেইজ লোড হতে মাঝেমধ্যে ৭-৮ মিনিটও লাগতো বোধহয়। তো যাই হোক, আপু তো পড়তো। আমিও টুকটাক পড়তাম, তবে আমার লেখার দিকে মনোযোগ ছিল বেশি। ১৩-১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি ব্লগ লিখেছি। ব্লগ মানে ডায়েরীই, কাগজের পাতার বদলে ব্লগের বুকে; এই আরকি। পার্সোনাল ব্লগ, কোথাও পাবলিশড ছিল না; পাবলিশ করবোই বা কোথায়! প্রতিদিন যা যা ঘটতো, বিশাল ফিরিস্তি লিখতাম। শেষদিকে অবশ্য কিছু চিন্তাশীল লেখাও লিখতাম। কিছু লেখা আবর্জনার মত লাগতো, কিন্তু লিখছি তো; এটাই হচ্ছে কথা। লিখতে ভালো লাগতো। লিখার মধ্যে অনন্য একটা স্বাদ আছে, যারা লেখেন তারাই জানেন। ব্লগ সাজিয়েছিলাম একটা কবিতা দিয়ে -

নীল কুয়াশায় দূর আকাশে ভাসতে আমি চাই

বাবার কাছে ভালো একটা ক্যামেরা পেতে চাই

নীল আকাশের রঙে ভেজা ডায়রি হাতে চাই

মনের মত অনেক বড় লাইব্রেরীটা নাই

মরূভূমির রৌদ্রতাপে জ্বলতে আমি চাই

নীল ছোঁয়া ওই পাহাড় চূড়ার নাগাল পেতে চাই

বন্ধুরা সব, তোদের যেন আবার খুঁজে পাই

সন্ধ্যাবেলায় চায়ের সাথে আড্ডা হবে,তাই।


পরে ব্লগ লেখাতেও কিছুটা ইস্তফা আসে। কারণ, ঐ তো অতিরিক্ত বাস্তবমুখিতা। ২-৩ বছর মোটামুটি এতে ভাটা পড়ার পর পুরনো হাবিজাবি ব্লগকে হাইড করে নতুন ব্লগ খুলি - নতুন লেখাগুলোর জায়গা দেবার জন্য। তারপর মাঝে মাঝে হঠাৎ চিন্তা, ইচ্ছে এবং সুযোগ একসাথে এলে একটা লেখা হয়ে ওঠে। 

একটা আলাদা ব্লগও খুলেছিলাম। ইংরেজি। 

অনার্সে বাধ্যতামূলকভাবেই ইংরেজি কবিতা পড়তে হতো। পড়তে কেমন লাগতো, সেই গল্প এক পাশে থাকুক। তবে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ধরা পড়তো আমার চোখে, জানি না সত্য না মিথ্যা। কবি সবাই ছিলেন অমুসলিম। আমার মনে হতো, তাদের কবিতার কোন না কোন অংশে হঠাৎ সত্যের একটা ছাপ পড়েছে। অনেককেই মনে হতো সত্যের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। বারংবার মনে হতো। এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে আমি বেশ কিছু ব্লগ লিখেছিলাম। আমার ইচ্ছে হতো, বিষয়গুলো কারো সাথে আলোচনা করে পাবলিশ করি। একক চিন্তায় তো ভুল হতেই পারে। তবে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, তেমন কারো সাক্ষাৎ আজ পর্যন্ত মেলেনি। এমনকি এ বিষয়টার কথা আমি ভুলেও গিয়েছিলাম। বহুদিন পর আজ মনে পড়লো।

কবিতা পড়তে ভালোবাসতাম না। কিন্তু গল্পের বই পড়তে খুব ভালো লাগতো। তবে আমি হয়তো জাত-পড়ুয়া ছিলাম না। অন্য অনেক বই-মাতালের চেয়ে কম হলেও, এককালে অনেকটা নেশার মতো ছিল এই গল্পের বই পড়া।  আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, সেই তুলনায় গল্প লেখা হয়েছে খুবই কম। উপন্যাসও ধরেছি এক দুইটা; তারপর আর লেখা হয়নি। 

---

তারপর...

তারপর আর কি! আপাত অসমাপ্তি সহকারে এই ছিলো আমার 'হাতেখড়ি'র যেমন-তেমন গল্প।  

শেষ করি প্রিয় একটি উক্তি দিয়ে - 

লেখার জগত সম্পূর্ণ আলাদা একটি জগত। আশ্চর্য কোমল এবং আশ্চর্য মধুর এক জগত। একজন লেখকের একটি বড় পরিচয়, তিনি একজন শিক্ষার্থী। সবার কাছ থেকে এবং সবকিছু থেকে তিনি শিখতে থাকেন, শিক্ষা অর্জন করতেই থাকেন। ...

                                                                             মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ হাফিযাহুল্লাহ 

#লেখালেখির_হাতেখড়ি  

Monday, October 17, 2022

বিবাহবিভীষিকা ও আমরা

 'বিয়ে কঠিন' - প্রসঙ্গে যে আলোচনাগুলো উঠে আসে তার প্রায় সবটা জুড়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের বিদআত, কনেপক্ষের বড় অংকের মোহরের দাবি, বরপক্ষের যৌতুক অথবা কন্যার রূপের দাবি, বাবা-মা এর বিভিন্ন কারণে অমত ইত্যাদি। স্বয়ং বিবাহকেই কীভাবে কঠিন হিসেবে অবিবাহিতা মেয়ের কাছে প্রতীয়মান থাকে সেটা সযত্নে বা অযত্নে অবহেলায় আলোচনা থেকে একরকম উহ্যই রাখা হয়। 
এ কাঠিন্যের ফল হচ্ছে অভিভাবক ও কন্যা দুপক্ষেরই উত্তম সময়ে বিবাহ থেকে নিবৃত্ত রাখা ও থাকা, তারপর সামগ্রিকভাবে কন্যার বিবাহ-পূর্ব বা পরবর্তী জীবনে এমন সমস্যায় পড়া যা কন্যার কোনভাবেই প্রাপ্য ছিল না। অথচ সঠিক সময়ে না সে বুঝতে পারে, না বুঝতে পারে তার অভিভাবক। অবশেষে যখন অনেক কিছু বোঝার সময় হয়ে যায়, তখন আর পিছিয়ে এসে পুনরাবৃত্তির সুযোগ থাকে না; শুধু আফসোস করাটুকু বাকি থাকে। 

- পড়াশোনা করে না তো, বিয়ের পর জামাইয়ের বাড়ি হাঁড়ি ঠেলবে গিয়ে। (বিয়ে করলে জামাইয়ের বাড়ি হাঁড়ি ঠেলাই হচ্ছে কাজ)
- রান্না শিখো না যে! শ্বশুরবাড়ী গিয়ে রান্না করে খাওয়াতে হবে না? (শ্বশুরবাড়ী গেলে রান্না করে খাওয়ানোটা অন্যতম কাজ, এজন্য বিয়ের আগেই রান্না শেখা দরকার)
- জামাই কি বসায় বসায় খাওয়াবে? (জামাইরা বসিয়ে খাওয়ায় না, কাজের বিনিময়ে খাওয়ায়)

আমরা (এ ধরনের কন্যারা) বড় হই বিয়ে সম্পর্কে এ ধরনের বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য শুনে শুনে। আমাদের পানিশমেন্ট থাকে - বিয়ে। যার সাথে পড়াশোনার সম্পর্ক হচ্ছে দুই পৃথিবী দূরত্ব প্রায়। কেউ এতোটা পানিশমেন্ট না দিলেও এসব উল্লেখ করতে ভুলে না -

- স্বামীকে মান্য করা ফরজ। অমান্য করা যায় না। (স্বামীর সাথে মূল সম্পর্কটাই হচ্ছে অর্ডার এন্ড ওবেই। মন না চাইলেও কষ্ট করে মানতেই হবে)
- সংসার বড় কঠিন পরীক্ষার জায়গা। 
- বিয়ে তো ছেলেখেলা না। অনেক দায়িত্বের বিষয়। 

আমরা বড় হতে হতে মন-মগজে এ কথাটাই খুব ভালোভাবে গেঁথে যায় যে, বিয়ে এমন একটা জিনিস যার সাথে কঠিন সংসার কঠিনভাবে জড়িত। সংসার কঠিন এক কারাগার, যাতে বিয়ে নামের এক বেড়ী পায়ে পরে ঢুকতে হয়। আর ঐ বেড়ীর অপরপ্রান্ত ধরা থাকে 'স্বামী'র হাতে, যে যখন যা ইচ্ছে অর্ডার করতে পারে, যেটা আমাদের ইচ্ছে না থাকলেও মানতে হবে। যদি না মানতে চাই, থাকবে আল্লাহর লানত। আর যেহেতু শ্বশুরবাড়ির খেদমত করলে স্বামী সন্তুষ্ট থাকবে, এ কারণে বিয়ের সাথে সাথে শ্বশুরবাড়ীর সাথে এডজাস্টমেন্ট এবং রান্না-বান্নাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য আফটার অল প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। 

কথাগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে যতোই সঠিক থাকুক, বাবা-মায়ের আদরে বড় হওয়া, দ্বীনের চর্চা থেকে একটু দূরে থাকা(ইভন দ্বীনের চর্চাযুক্ত ফ্যামিলিগুলোতেও দাম্পত্যের সৌন্দর্যের অংশটুকু সযত্নে আলোচনা থেকে উপেক্ষিত হয়), জীবনে-কিছু-একটা করতে চাওয়া কন্যার কানে সেগুলোকে মোটেই সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য মনে হয়না। তার মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, 'ইসলাম এতো কঠিন কেন?'। সাথে সাথে দাম্পত্য-কলহের সুর, স্বামীর আধিপত্যের সুর প্রতিনিয়ত তার কানে বেজেই যায়। বিয়েটাকে সে কোন অংশেই গ্রহণযোগ্য, অন্তত তার বর্তমান তারুণ্যের সুন্দর সময়ে গ্রহণযোগ্য কিছু বলে মনে করতে পারে না। 

সে মোটামুটি দৃঢ় শপথ নিয়ে নেয় যে, নিজের ভবিষ্যতটুকু সে কোনভাবেই এতো অনাকাঙ্খিতভাবে কাটাবে না। বলা বাহুল্য, এই কন্যাদের অভিভাবকেরাও গ্রহণযোগ্য দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য হয়তো খুব কমই দেখেছেন। তাই ভালোবাসা বশতঃই তারা কন্যার কানে সহজে বিয়ের কথা তোলেন না। তারা আমাদের সত্যিই ভালোবাসেন, তাই ইসলামপ্রদত্ত কন্যার অনুমতির অংশটুকু তারা ইগনোর করেন না, আমরা না চাইলে তারা চাপিয়ে বিয়ে বসিয়ে দেন না। 'একদিন তো স্বামীর বাড়ি যেতেই হবে, তখন তো চাইলেও অনেক কিছু করতে পারবে না', বিয়ে একেবারে দিবেন না এমনও তো ভাবতে পারেন না, তাই কয়েকটা বছর কন্যাকে কিছুটা নিজের মত করে কাটাতে দেন (হয়তো নিজের চাপা দেওয়া শখ-আহ্লাদের কথা মনে পড়ে যায়)। বিলাসী না হোক, নাজায়েজ না হোক, তাদের জায়েয শখ-আহ্লাদগুলো অপূর্ণ রাখেন না। 

বাবা-মার স্নেহ-আদরে থাকা আমরা স্বভাবতঃই একটা মোটামুটি আনন্দময় জীবন কাটাই। তাই বিয়ে আমাদের কাছে বিভীষিকারই একটা পর্যায়। যেখানে বাবা আমার পছন্দের জিনিসগুলো বাছাই করে আনেন, আমার কষ্ট হবে বলে মা অনেক কাজ থেকেই অব্যাহতি দেন, একটু আবদার করলে চা বানিয়ে দেন, আমাকে হাসতে দেখে খুশি হন; সে জীবন থেকে কষ্টকর বিবাহিত জীবনে পদার্পন করার কোন মানেই থাকে না আমাদের কাছে।

কেমিস্ট্রি-বায়োলজি পড়া, টুকটাক শখের কাজগুলো গুছিয়ে নেওয়া, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবার শখ মনে রেখে সোৎসাহে পড়াশোনা করে যাওয়া আমাদের কানে হঠাৎ যখন বাজে 'মেয়েদের জীবনে স্বামী-সংসারই আসল, সন্তান লালন-পালন করাই তাদের মূল দায়িত্ব' - আমরা আরেকটু বিতৃষ্ণ হয়ে উঠি। পড়ায় আরেকটু মন দিই, নিজ প্রতিজ্ঞায় আরেকটু দৃঢ় হই। 

এত ক্লান্তিকর সংসারে পদার্পণ করা থেকে ফোনে বেজে ওঠা টুং এর জবাবে ছোট করে আরেকটা টাং আমাদের কাছে ঢের সহজ। কেউ যখন বলে - 'এটা ফেতনার সময়, বিয়ে করে নাও। পবিত্র থাকবে, ভালো থাকবে।' - আমরা বক্তার পজিশন অনুসারে হয়তো ইগনোর থাকি, অথবা মুচকি হেসে এড়িয়ে যাই অথবা বিরক্তি প্রকাশ করি।

আমাদের বর্তমান জীবনে তো আল্লাহ অসন্তুষ্ট নন। আল্লাহ আমাদের কিছু আগ্রহ দিয়েছেন, আমরা সেই আগ্রহের চর্চা করি। বাবা-মায়েরা আমাদের উপর তো অসন্তুষ্ট নন, আমাদের ছোট সংসারে আমরা হাসিখুশি থাকি টুকটাক বাবা-মায়ের সাহায্য করি; আর আমাদের লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে যাই। এর থেকে সুন্দর জীবন আর কি হতে পারে? এ জীবন ছেড়ে 'বিয়ে' নামের শৃঙ্খল পায়ে পরে, স্বামী নামক আতঙ্ক গ্রহণ করে বাচ্চাধারণ করে পালার আইডিয়া আমাদের কাছে স্রেফ পাগলেরই প্রলাপ।

বিয়ে কি এবং কেন - এসব আমাদের জানার কোন প্রয়োজনই নেই। ঈমানের কম-বেশ অনুসারে, কখনো আমরা টুকটাক সম্পর্ক মেইনটেইন করি, কখনো আমাদের আভিজাত্যের বশে এসব থেকে দূরেই থাকি। তবে অন্তরের গহীন থেকে জানি, এখন না হোক পাঁচ-দশ বছর পর 'বিয়ে' নামক বিভীষিকা আমাদের গ্রহণ করতে হবে, তার জন্য ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিতে হবে। 

এভাবে গেঁথে দেওয়া বিরূপ মনোভাবের প্রভাব কি আমাদের দাম্পত্য জীবনে পড়বে না?