আমি লিখতে বসেছি, কারণ আমি জানি আমার লেখা দরকার, কিছু বলা দরকার। হয়তো কী বলতে চাইছি তা প্রকাশ করতে পারবো না, হয়তোবা লেখা পড়ে তুমি সুসাহসী আমার বোকামি দেখে মুচকি মুচকি হাসবে; তবু আমার কিছু বলা দরকার, আমার জন্যই দরকার। তোমার জন্যও..
অচছা, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি? তুমি কি আযান শুনে কখনো কেঁদেছ? হাসি আসছে? আচছা, একটু হেসে নাও, এখন তো পরিবেশ শান্ত আছে; কিন্তু আমার একটা অনুরোধ রাখবে? একটু পর যে আযান হবে, মন দিয়ে শুনবে, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত; প্রতিটি শব্দ অনুভব করে..পারবে না?
আচছা, তুমি কখনো অনুভব করেছ; একটু পর পর 'আল্লাহু আকবার' ধ্বনি যে তোমার কানে বেজে ওঠে, তা কতটা সৌভাগ্যের, কতোটা আনন্দের?
আচছা, করোনাভাইরাসের অজুহাতে মসজিদগুলো যখন খালি হয়ে ছিল; আযান হতো, কিন্তু তাতে সাড়া দিয়ে কেউ মসজিদে যেতে পারতো না..তখন কি তোমার কান্না আসতো?
তুমি কি সত্যিই অনুভূতিহীন? আচছা, এক মুআজ্জিন যে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে আযান দিচ্ছিলেন, ওটা কি তুমি শুনছিলে? শাইখ আস-সুদাইস যে শূন্য মাসজিদুল হারামে ইমামতি করতে গিয়ে কাঁদছিলেন, ওটাও শোনা হয়নি? সবটাই কি তোমার কাছে অবিবেচকদের হাস্যকর কাণ্ডকারখানা ছিল?
আসলে কি জানো, ওটা বড় একটা সুযোগ ছিল নিজেকে, নিজের স্বরূপটা বুঝে নেবার..
১.
আচছা আমাকে বলবে, ঠিক কোন ভাষায় তোমাকে বোঝাতে পারবো? কোন ভাষায় বললে তুমি আমার কথাগুলো বুঝতে পারবে? আমাকে বলো, আমি ঠিক সে ভাষায় তোমাকে বলব। ঠিক সে ভাষায় বলবার চেষ্টা করবো, বিশ্বাস করো।
আচছা ভাই, তুমি কি সেই, যাকে পুরুষ বলে, যাকে মানুষ উম্মাহর কান্ডারী মনে করে? তোমাকে নিয়ে একটু কল্পনার জগতে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে চাই। যাবে? শুধু এতটুকু খেয়াল রেখো, তোমার কাছে এখন যা শুধু 'কল্পনা', তা-ই ঠিক তোমার মতো অনেকের কাছে চরম বাস্তবতা। চলো..
আচছা, কেমন লাগবে তোমার? যদি একটা শীতল চোখ তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে তোমাকে খুব সাধারণ একটা প্রস্তাব দেয়, রাজি হও,নয়তো তোমার মাকে নিয়ে যাবো..কোথায়? তোমার জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই, তুমি জানো তারা কোথায় নিয়ে যেতে চায়।
শীতল চোখের আহবান প্রত্যাখ্যান করা তোমার মেরুদণ্ড সহ্য করবে কীভাবে? তুমি রাজি হয়ে গেলে..তারপর, একে একে নিজের বোন, বোনের পরিবার, তার জীবনসঙ্গীর পরিবার, যাকে পারলে..কেউ হয়তো লুকিয়ে ছিলো, তাকে বের করে এনে তুলে দিলে তাদের হাতে, কেউ দেশের বাইরে ছিলো তাকে ডেকে এনে দিলে..শত শত মা, শত শত বোন; নিজ হাতে তাদের ভবিষ্যত্ গড়ে দিলে..
মনে হচছে বেশি বলছি? একটুও না, অনেক অনেক কম বলছি..আমি জানি অনেক কম করে বলছি, তবু বলছি..বলবো বলে, বলতে হবে বলে..
তারপর? যেদিন তোমার মাকে নিয়ে তারা উপস্থিত হতে বলল..সেদিন তোমার মন কী বলছিল? আমি নিশ্চিত, তোমার হৃদয় শূন্য ছিল..আমি বরং আরো যুক্ত করবো- আমাকে বলো, তোমার প্রাপ্য কী ছিল?
ভাই, দুটো অনুরোধ করবো, রাখবে? হয়তো হাসবে এখন, তবু মনে রেখো..
যদি অবস্থা চলে আসে, আল্লাহ না করুন, যদি চলে আসে কখনো আযান বন্ধ হতে দিও না..
একটু চোখ বন্ধ করে ভাবো, একটু নাহয় সময় নাও - সময় নিয়ে বিশ্বাস করে নাও; মুসলিম নামে যত বোন আছে, সবাই তোমার নিজের বোন; যতো মা আছে সবাই তোমার নিজের..
একটা কথা দিতে পারবে? যদি আল্লাহ না করুন, অবস্থা চলে এলে তুমি বেঁচে থাকতে একটা পশুও তোমাকে ডিঙিয়ে তাদের পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে..কথা দিয়ে যাও, পারবে না?
https://www.aljazeera.com/features/2019/2/1/exposed-chinas-surveillance-of-muslim-uighurs
......
আচছা আপু, তোমাকে কোথাও ঘুরিয়ে আনবো না। জানো ভাবলে কেমন যেন লাগে, একসময় কিছু 'পুরুষ' ছিলেন; একজন নারীর ক্ষীণ আর্তনাদে তারা, শত শত বরং লাখ লাখ 'তাদের' জীবনবাজি রেখে দাঁড়িয়ে যাবার সাহস ছিল। কিন্তু এখন?
জানো কেমন কষ্ট লাগে, সাহাবীরা যখন হুযুর সা. এর সাথে যুদ্ধে বেরোতেন; রত্নের মতো করেই তারা নারীদের পিছনে সুরক্ষিত রেখে আসতেন। যুদ্ধের কদর্যতা তাদের ছুঁতে পারতো না। এখন যুদ্ধ মানেই...আর ঐ মহাপুরুষদের উত্তরপুরুষরা নিজ হাতে তাদের আত্মসম্মানবোধকে পশুর কাছে বিকিয়ে দিতে খুব বেশি কুন্ঠিত হয় না...
এখন তারা সামান্য দেশীয় হায়েনা থেকেই বাঁচাতে পারে না, আর কি বলার আছে? আর কি ব্যাখ্যা করার আছে?
ওরা হায়েনা নয়, অন্য কোন পশুও নয়; ওরা এমন, যার উপর যেকোন পশু মলত্যাগ করতেও ঘৃণা করবে...জানো, ওরা...
https://www.businessinsider.com/china-uighur-monitor-home-shared-bed-report-2019-11
থাক আর কিছু বলতে রুচিতে কুলাচ্ছে না। আমার সাথে একটা প্রতিজ্ঞা করবে? আল্লাহ না করুন, যদি অবস্থা চলে আসে, আমরা হাতে হাত ধরে শেকল তৈরি করবো। একজনকেও একলা নিতে দেব না; আমরা আলাদা করে কেউ হবো না, সবাই এক অস্তিত্ব হবো। পারবো না?
পারতে হবে না? আপু শোন, তুমি এখন নারী আন্দোলনের অগ্রদূত হতে পারো। কিন্তু জানো, ওরা কিন্তু বিচার করে না কে কতটা নারীবাদী হতে পারলো, কে পোশাকে কতটা উগ্র হতে পারলো, কে ওদের সভ্যতা কতোটা গ্রহণ করতে পারলো। ওরা কী দেখে জানো? ওরা সিসিটিভির ক্যামেরা জুম করে দেখে...তারপর নিয়ে যায়; যাদের নিয়ে যায়, তাদের কেউ ফিরে আসে, কেউ আসে না...
আপু তুমি যদি তাদের একজন হও, যারা এখন 'পশ্চাৎপদ' হতে চায় না বলে বরং আরো কিছু পশু তৈয়ার করছে, নিজ হাতে গড়ছে (ব্যাখ্যা করতে হবে কি?); হয়তো যেদিন প্রয়োজন হবে, তোমার হাত অতটা শক্ত করে ধরতে পারবো না...
২.
বইয়ের পিছনে লেখা 'দূর্বলচিত্তের জন্য নয়' । পড়তে গেলে মনে হয়, বুঝি গল্প পড়ছি, এমন গল্প যেটা লাইন বাই লাইন পড়া কোন সুরুচিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে অসম্ভবের মতো।
তবু আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতো, প্রতিটি লাইন প্রতিটি মুসলমানকে পড়াতাম। হয়তো তুমি হার্টের রোগী, হয়তো রাতে ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে যাবে, হয়তো খাবারের রুচি চলে যাবে, হয়তো বমি আসবে - তাতে কী?
আমাদেরই কেউ কেউ এক অজানা গোপন এক দুনিয়ায় বসে প্রাণপণে হয়তো চাইছে, আমি প্রায় নিশ্চিত তারা চাইছে, পুরোটা দুঃস্বপ্ন হোক। রুচির কথা বাদ দাও, এসব সস্তা রুচিবোধের গল্প করে কী হবে? তারা তো খাবারই পায় না; দিনে একবারের বেশি হাত ধোয়ার তাদের অধিকার নেই, কারাগারের কক্ষের এক কোনায় রাখা একটা বালতি ছাড়া আলাদা একটা বাথরুমের অধিকার নেই; সেই বালতিতেও দিনে দুমিনিটের বেশি অধিকার নেই...
একটু হলেও সচেতন হবে কি? আমরা মুসলমানরা তো এমনই, চোখে ঠুলি পরে আছি। আতঙ্ক, ঘৃণা দিয়ে যদি সচেতনতা আসে, তাহলে খারাপ কি?
......
আমরা ভুলে যাই, আমরা মুসলিম। ওরা ভোলেনা।
আমরা জানি না, আর আমাদের জানবার আগ্রহও নেই, আমাদের কাছে কী সম্পদ আছে; তবে ওরা জানে, খুব ভালোভাবে জানে।
আমরা ভুলে যাই, আমরা উম্মাহ, এক উম্মাহ। ওরা ভুলে না, ওরা কাদের নিকেশ করতে চায়।
আমরা দু'একটা স্যাড রিএক্ট করে, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে, 'দুআ ছাড়া কিছু করার নেই' বলে দায়িত্বমুক্তির ভান ধরি। আর ওরা? প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস করে, শেকড় উপড়ে দিয়েও জেনে রাখে 'কাজ বাকি আছে'।
যাদের কাছে পথ স্পষ্ট হয়ে গেছে, তবু যারা ভুলে থাকতে চায়, নিজেদেরকে ধোঁকায় ফেলে রাখতে ভালোবাসে; যাদের নেই আত্মমর্যাদাবোধ; যাদেরকে বুঝিয়ে প্রমাণ দেখিয়ে কোনভাবেই জাগানো যায় না; বিনা চাওয়ায় পাওয়া ইসলামরূপী রত্নের যারা কদর করতে জানেনা এবং চায়ও না; মাশুল যদি তারা না দেয়, তবে মাশুলের কোটা কার জন্য রাখা?
৩.
চেয়েছিলাম কিছু ভিডিও শেয়ার করে দিই, এতো 'নারীসমৃদ্ধ' আর 'মিউজিকসম্পন্ন' ভিডিওগুলো শেষ পর্যন্ত আর শেয়ার দিলাম না। কেউ চাইলেই বের করে নিতে পারে, যদি ইচ্ছে থাকে। যার ইচ্ছে নেই, কী বলার আছে?
কেমন যেন খারাপ লেগে উঠে। যারা দেখে শুনে বুঝে এসেছে, আমরা তো ওদের মতো করে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। ওরা কেউ কেউ সেসব অবস্থা পার হয়ে এসেছে, নিজের চোখে দেখে এসেছে...এসেও বুঝতে পারছে না(আমরাও পারছি না, জানিনা পারবো কিনা), কেন ওদের(আসলে আমাদের, আমাদের পুরো উম্মাহর) কেন এ পরিণতি, কেন এ অবস্থা?
আমরা অন্ধের মতোই...থেকেই যাই, থেকেই যাই...
ওদেরই অনুসরণ করতে চাই, নিজেকে জলাঞ্জলি দিতেই থাকি...মূর্খতার সাগরে...
ওদেরই অনুসরণ করতে থাকি...যারা দিনশেষে কড়ায় গন্ডায় ওদের অনুকরণের দাম শোধ করে যায়...